বেল গাছ
প্রচলিত নাম : শ্রীফল, বিল্ব
ইংরেজী নাম : Wood Apple
বৈজ্ঞানকি নাম : Aegle marmelos Linn.
পরিবার : Rutaceae
পরিচিতি : বেল গাছ ১০-১১ মিটার উচ্চতা বিশিষ্ট মাঝারি আকারের পত্রঝরা বৃক্ষ। পাতার গোড়ায় শক্ত কাটা থাকে ও প্রতি পাতায় ৩৫টি পত্রক থাকে। গাছের বাকল পুরু, নরম এবং ধূসর বর্ণের। মিষ্টি গন্ধযুক্ত হালকা সবুজ ফল ছোট ছোট থোকায় ধরে। ফুলের পাপড়ি তাড়াতাড়ি খসে পড়ে। মে মাসে ফুল হয়। ফল বড়, গোলাকার ৮-২০ সে.মি. ব্যাসার্ধ। ফলের ভিতর ৮-১৫ টি প্রকোষ্ঠ আছে, প্রতি প্রকোষ্ঠে আঠার ভিতরে একাধিক লোমশ বীজ থাকে। ফল পরের বৎসর মার্চ-এপ্রিল মাসে পাকে।
বিস্তৃতি : বাংলাদেশ-ভারত বেলের উৎপত্তিস্থল বলে ধরে নেওয়া হয়েছে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সব দেশেই বেল হতে দেখা যায়। তবে ভারত, বাংলাদেশ, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, বার্মা ও থাইল্যান্ডে বেল ভাল জন্মে। গাছটি পত্রমোচী ও উপক্রান্তীয় অঞ্চলের গাছ। বাংলাদেশ, ভারত বা অন্যান্য দেশে বেলচাষ আওতায় কতটা জমি রয়েছে বা কি জমি বা কি পরিমাণ ফল উৎপাদনে হয় সঠিকভাবে জানা যায়নি।
মাটি ও জলবায়ু : বেল কষ্টসহিষ্ণু গাছ এবং যে কোন রকম মাটিতে জন্মাতে পারে। তবে সুনিষ্কাশিত মাটিতে ভালো হয়। সুতরাং পতিত জমিতে বেল গাছ লাগিয়ে ভালভাবে জমির ব্যবহার করা যায়। বিভিন্ন জলবায়ুতে বেল গাছ হতে দেখা যায়। ১২০০-১৫০০ মিটার পাহাড়ের উচ্চতায়ও বেল গাছ হয়। আর্দ্র ও শুষ্ক যে কোন জলবায়ুতেই বেল গাছ হয় ও ভাল ফলন দেয়।
চারা তৈরী : সাধারণতঃ বীজ দিয়েই বাংলাদেশে বেলের বংশবিস্তার করা হয়। পর পরাগায়িত বলে বীজের গাছে মাতা-গাছের বৈশিষ্ট্য অপরিবর্তিত থাকে না। এজন্য উৎকৃষ্ট জাতের চারা উৎপাদন করতে হলে গুট কলম, কুঁড়ি কলম, সংযোজন বা মূল কলম পদ্ধতিরে আশ্রয় নিতে হবে।
বীজ থেকে চারা তৈরী করতে হলে পাকা ফল থেকে বীজ সংগ্রহ করে, বারবার ঘষে উপরের হড়হড়ে পদার্থটি তুলে ফেলতে হবে। বীজ ছায়ায় শুকিয়ে অল্পদিনের মধ্যেই অর্থাৎ বর্ষার প্রথম দিকে তৈরী করা বীজতলায় পলিব্যাগে চারা উত্তোলন করা হয়। বীজ লাগানোর আগে ২-১ দিন পরিস্কার পানিতে ভিজিয়ে রাখলে ভালো চারা বেরোয়। পলিথিনের ব্যাগে সার-মাটি মিশিয়ে চারা রোপণ করা চলে। মূল কলম থেকে চারা করলে সবচেয়ে ভাল হয়। এতে জাতও ঠিক থাকে। বেলের শিকড় থেকে অনেক চারা বেরোয়। শিকড়সহ চারাটি মূলগাছ থেকে আলাদা করে লাগানো হয়।
চারা রোপণ : বীজের চারা এক বছরের হলে লাগনো হয়। বাগান আকারে বেলের চাষ খুব কমই হয়ে থাকে। বর্ষার আগে জমি তৈরী করে ১০/১২ মিটার দূরত্বে নির্দিষ্ট গর্তে সার মিশালেই যথেষ্ট। বেলের শিকড় খুব তাড়াতাড়ি বাড়ে, কজেই চারা তোলার সময় খেয়াল রাখতে হবে যাতে মূল শিকড়ে আঘাত না লাগে। চারা লাগানোর পর বৃষ্টি না হলে বেশ কিছুদিন সেচ দিতে হবে। গাছ বড় হয়ে গেলে বিশেষ পরিচর্যা না থাকলেও মাঝে মাঝে নিচের দিকের ডাল ঘেঁটে দেয়া উচিত। এতে বাগান পরিস্কার থাকে ও যাতায়াতের সুবিধা হয়। মার্চের দিকে অসংলগ্ন ডালপাতা হেঁটে দিলে ২/৩ মাসেই নতুন ডাল তৈরী হয়।
ফল সংগ্রহ ও ফলন : বীজ থেকে চারা গাছের ফল আসতে ৭/৮ বছরের মতো সময় লাগে এবং কলমের গাছে ফল আসে ৫/৬ বছরের মধ্যে। গাছের বয়স ১০ বছর না হলে ভালো ফলন হয় না। ফুল ধরার সময় থেকে ফল পাকতে প্রায় এক বছর সময় লাগে। পূর্ণবয়স্ক একটি গাছ হতে ৩০০-৪০০ বেল পাওয়া যায়। গাছের বয়স বেশী হলে ফলন কমে যায়। বেল গাছে রোগবালাই ও পোকার আক্রমণ কম হয়।
বীজ সংগ্রহের সময় : এপ্রিল-মে ।
বীজের ওজন : প্রতি কেজিতে ৫,৫০০টি।
বীজ আহরণ ও চারা উত্তোলন : হলুদ রং-এর বেল সংগ্রহ করে বাইরের শক্ত আবরণ ভেঙ্গে ফেলে খেয়ে অথবা ভেতরের আঠাল। অংশ পানিতে গুলে ধুয়ে চালুনি দিয়ে চেলে বীজ আলাদা করা হয়। বীজ শুকিয়ে ২/৩ মাস সংরক্ষণ করা যায়। তবে সাথে সাথে বীজ বপন করলে ভাল হয়। বীজ ১৫ দিনের মধ্যে গজায়, অংকুরোদগমের হার শতকরা ৫৫-৬০ ভাগ।
ঔষধি ব্যবহার :
১) বেল ফলের শাঁস পেটের পীড়ায় অত্যন্ত উপকারী। এটি হজম শক্তি বৃদ্ধি করে, কোষ্টকাঠিন্য দূর করে ও আমাশয় নিরাময় করে ।
২) কাঁচা বেলের শাঁস চাকা চাকা করে কেটে রোদে শুকিয়ে বেল শুঠ প্রস্তুত হয়। এটি পরিপাক যন্ত্রের পীড়া, রক্ত আমাশয় ও উদরাময়ে উপকারী। পাকযন্ত্রের পীড়ায় এর তুল্য আর দ্বিতীয় ওষুধ নেই ।
৩) চোখে পাতার প্রলেপ দিলে চোখওঠা রোগের আরাম হয়।
৪) এক চামচ বেল পাতার রস খেলে কাচা সর্দি ও জ্বরজ্বর ভাব দূর হয়। শিশুদের মাত্রা আরও কম।
৫) বেল পাতার সঙ্গে ৩/৪ টি গোলমরিচ পিষে ফোড়ার উপর লাগিয়ে দিলে ফোড়া বসে যায়।
৬) মূলের ছালের রস রক্তের সুগার কমায় এবং হৃৎপিণ্ডের ও পেটের ব্যথা সারায়।
৭) উত্তেজনা কমাতে প্রতিদিন বেল পাতার রস খুবই কার্যকরী।
সাধারণ ব্যবহার : কাঠ হলুদাভ সাদা, শক্ত, সুগন্ধিযুক্ত এবং ভাল পালিশ নেয়। গাছের সবচেয়ে প্রয়োজনীয় অংশ ফল। বেল সুখাদ্য ও কোষ্ঠ পরিস্কারক। পেটের পীড়ায় বিশেষ করে আমাশয় রোগের জন্য উপকারী। কাঁচা ফল কেটে শুকিয়ে গুঁড়া করে সুস্বাদু চায়ের মতো পানীয় প্রস্তুত করা যায়। কাঁচা ফল থেকে প্রাকৃতিক হলুদ রং ও সুগন্ধি উদ্বায়ী তেল পাওয়া যায়। বেলের পাতা ও গাছের ছাল কবিরাজি ঔষধে ব্যবহৃত হয়। পাতার নির্যাস হাঁপানি রোগের ঔষধ হিসাবে কাজ করে। এছাড়া, কাঠ গৃহনির্মাণ, গাড়ী, কৃষি উপকরণ , যন্ত্রের হাতল, খোদাই কাজ, চিনি ও তেলের ঘানিতে ব্যবহৃত হয়।
রাসায়নিক উপাদান : a) Alkaloid viz., dictamine, gamafagarine skimmianine, aegeline, agelenine, tambamide and haplopine, b) Coumarins vix., umbelliferore, imperatorine, alloimparatorine, marmin, marmisin, geranyl, psoralen, aegelionol, kanthotoxin, dimethoxy coumarin and scopoletin c) Sterols viz. betasitosterol and gamasitosterol d) Triterpinoids viz, Iupeol