প্রচলিত নাম : বেত
ইংরেজী নাম : Cane
বৈজ্ঞানিক নাম : Calamus spp.
পরিবার : Palmae
পরিচিতি : বাংলদেশে কুটির শিল্পের কাঁচামাল হিসেবে বাঁশের পরই বেতের স্থান। বনাঞ্চল বাদেও মানুষের বসতবাড়ীর আশেপাশে বেত জন্মে থাকে। দিনদিন গ্রামাঞ্চল হতে রবেত কমে যাচ্ছে। কমে যাচ্ছে বন-জঙ্গল হতেও। এর প্রধান কারণ হল বেত উৎপাদনের চেয়ে কাটা হচ্ছে বেশী। আর বেতের দামও এখন প্রচুর। এজন্য হয়তো বেত পরিপক্ক হওয়ার আগেই মানুষ বিক্রী করে দেয়। এ বেত পাহাড়ী অঞ্চলে ভূমিক্ষয় রোধ করে। তাই উহাকে ছায়া পছন্দকারী গাছও হিসেবে বন বাগানে লাগানো হচ্ছে। বাংলাদেশে বেত সিলেট, চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রামের জঙ্গলে প্রচুর জন্মাতো। কিন্তু বেশী কাটার ফলে তা কমে গেছে। এছাড়া, বাংলাদেশের সর্বত্রই ডোবা, নালা, বাড়ীর পিছনে স্যাঁতস্যাঁতে জায়গায় বেত এখনও জন্মে। তবে প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম। বাংলাদেশে প্রধানতঃ ৬ প্রকার বেত এখনও পাওয়া যায় যেমন :
১। সুন্দি বা বান্দরি।
২। গোলক বা গোল্লা বেত।
৩। বড় বা কেরাক বেত
৪। জালি বা জাই বেত
৫। বুদম বেত
৬। উদম বেত
বিস্তৃতি : বাংলাদেশের সর্বত্র।
বেতের চাষ : বেত-এর চাষ দুই প্রকারের হয়: ক) মোথা (রুট ছাকার) খ) বীজ পদ্ধতি
(ক) মোথা পদ্ধতি : বেতের বীজ থেকে নার্সারীতে চারা উত্তোলন করে বেতের চাষ করা সুবিধাজনক। বীজতলায় চারা উত্তোলন প্রক্রিয়া নিম্নরূপ:
১) বীজ সংগ্রহ : গাছ হতে মে-জুলাই মাসে ফল পাকার পর সরাসরি বাঁশের মাথায় ছুরি বেঁধে বেত ফলের ছাড়া সংগ্রহ করা হয় ।
২) বীজ নিষ্কাশন : হাত দ্বারা বেতের ফলের বাকল সরানো হয়। বালতির পানিতে ভিজিয়ে হালকা, খোসা পৃথক করে নীচ থেকে রসালো বীজ সংগ্রহ করা হয়। তারপর রাসালো বীজে ছাই মেখে হাতে চটকালে রসালো বীজ সংগ্রহ করা হয়। তারপর ঘরে স্বাভাবিক তাপমাত্রায় রেখে দিতে হবে। ফল সংগ্রহের ১০-১৫ দিনের মধ্যে বীজতলায় বপন করতে হবে। রেফ্রিজারেটরে বীজ ৩-৪ মাস পর্যন্ত রাখা যায়।
৩) সীড বেড তৈরী : ২০x৪ পরিমাপের সীড বেডে এজিং করে ১ গভীর করে মাটি আলগা করতে হবে। তারপর প্রতি বেড়ে ১৮ কেজি পচা গোবর এবং ৯ কেজি কম্পোস্ট উত্তমভাবে মিশাতে হবে।
৪) বীজ বপন : 2-3 দূরে দূরে বীজ ডিবলিং পদ্ধতিতে বপণ করতে হবে। বীজ বপণের পূর্বে ছাই বা ভিজা কাঠের ভূষির সাথে মিশিয়ে বপন করলে বেশী হারে অংকুরিত হয়।
৫। বীজ বপণের সাথে সাথে সীড ও প্রয়োজন অনুসারে নিয়মিত পানি প্রদান করতে হবে।
৬। বীজের অঙ্কুরোদগম : বেতের বীজ গজাতে ২ সপ্তাহ থেকে ৬ মাস পর্যন্ত সময় লাগবে। কাঠের গুঁড়া ও চিকন বালিতে, জালি ও বুদুম বেত যথাক্রমে ৪-৯ ও ১২-৩১ সপ্তাহের মধ্যে গজাবে।
৭। পলিব্যাগে মাটি ভরাট ও চারা স্থানান্তর : তিনভাগ দো-আঁশ মাটি ও একভাগ পচা গোবর একসাথে মিশিয়ে পলিব্যাগে ভর্তি করা হয়। সীড বেডে চারা গজানোর ১-৫ সপ্তাহের মধ্যে ১-৩ পাতাবিশিষ্ট চারা ১৫ x-৬ সাইজের পলিব্যাগে লাগাতে হবে ।
৮। চারা পরিচর্যা : চারা পলিব্যাগ হতে স্থানান্তরের পর সেড ও নিয়মিত পানি সিঞ্চন করে অন্যান্য চারার মতে যত্ন নিতে হবে। নিয়মিত ‘ আগাছা বাছাই ও রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা করতে হবে।
৯। বাগানে বেতের পলিব্যাগ চারা রোপণ : সাধারণতঃ ৬-১২ মাস পর্যন্ত বেতের চারা পলিব্যাগে লালন করা হয়। বিশেষ করে অন্যান্য গাছের চারার মতো বর্ষাকালে (মে-জুন) পলিব্যাগ চারা বাগানে বা জমিতে লাগানো হয়ে থাকে। উন্মুক্ত বা খোলা জায়গায় বেত লাগালে বেতের বৃদ্ধি ভাল হয় না। যেহেতু বেত আরোহী বীরুৎ তাই আশ্রয়ী বৃক্ষ দরকার এবং অন্যান্য গাছের সাথে লাগালেই উত্তম।
বেতের যত্ন : প্রথমতঃ আগাছা থেকে মুক্ত রাখতে হবে। এছাড়া বেত একটু ছায়াযুক্ত স্থানে ভাল হয়। কাজেই খোলা জায়গায় লাগাতে হয় না। কোন বড় গাছের কাছে লাগালে ঐ গাছে বেত আপনা আপনি উঠে যাবে। বেত বড় হওয়ার জন্য একটা গাছ অবলম্বন হিসেবে। দরকার ।
বেত কাটার পদ্ধতি : বেত প্রথম লাগানোর পর ৫-১০ বৎসরের মধ্যে কাটার জন্য উপযুক্ত হয়। পরবর্তীতে অবশ্য আরও কম সময়ে কাটা যেতে পারে। তবে তা নির্ভর করে এর বৃদ্ধির উপর। বর্তমানে বেতের তৈরী আসবাবপত্র ও কুটির শিল্প সামগ্রী বিদেশে রপ্তানী করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা হচ্ছে। বসতবাড়ীর আশেপাশে বেতের চাষ করার যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। তাই এক সামাজিক বনায়নের একটি উৎপাদন কৌশল হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
সাধারণ ব্যবহার : এর মধ্যে প্রায় সব বেতই আসবাবপত্র তৈরীতে ব্যবহৃত হয়। এছাড়াও অন্যান্য কাজে যেমন: ঝুড়ি, ঘরের বেড়া ও। চালা তৈরী ও রশি ইত্যাদির জন্য গোলক ও জালি বেতই উল্লেখযোগ্য। বর্তমানে বেতের তৈরী সোফসেট, টেলি, মোড়া, খাট ও ল্যাম্প ইত্যাদি খুবই জনপ্রিয়।