ভূমিকা: জৈব কৃষি বর্তমান সময়ে বেশ জনপ্রিয় একটি পদ্ধতি, যেখানে রাসায়নিক সার ও কীটনাশক পরিহার করে প্রাকৃতিক উপায়ে ফসল উৎপাদন করা হয়। এর মধ্যে তরল জীব অমৃত একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। এটি মাটির স্বাস্থ্যের উন্নতি করে, ফসলের পুষ্টি যোগায় এবং পরিবেশবান্ধব কৃষি কার্যক্রমে সহায়তা করে।
তরল জীব অমৃত কি?
তরল জীব অমৃত হলো একটি জৈব তরল সার, যা প্রাকৃতিক উপাদান দিয়ে তৈরি করা হয়। এটি মূলত গবাদি পশুর গোবর, গোমূত্র, গুড়, মাটি এবং পানি দিয়ে প্রস্তুত করা হয়। তরল জীব অমৃত মাটির মধ্যে থাকা উপকারী ব্যাকটেরিয়া এবং মাইক্রোঅর্গানিজমের সংখ্যা বৃদ্ধি করে, যা ফসলের উৎপাদন ও গুণগত মান উন্নত করতে সহায়ক।
তরল জীব অমৃতের উপকারিতা:
- মাটির স্বাস্থ্য উন্নত করা: এটি মাটির জৈব পদার্থের পরিমাণ বৃদ্ধি করে, যা মাটির উর্বরতা ও পানি ধারণক্ষমতা বাড়ায়।
- ফসলের বৃদ্ধি ও ফলন বৃদ্ধি: তরল জীব অমৃত ফসলের পুষ্টি যোগায়, যা তাদের বৃদ্ধি এবং ফলন উন্নত করে।
- পরিবেশবান্ধব ও কম খরচে তৈরি: এটি রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের বিকল্প হিসেবে কাজ করে, যা পরিবেশের জন্য নিরাপদ এবং কৃষকের খরচ কমায়।
তরল জীব অমৃত তৈরির প্রণালী:
উপকরণ:
- গোবর: ১০ কেজি
- গোমূত্র: ১০ লিটার
- গুড়: ২ কেজি
- বেসন ২ কেজি
- মাটি: ১ কেজি (স্থানীয় অর্গানিক মাটি)
- পানি অথবা WDC: ২০০ লিটার (WDC দিলে সারের মান ও স্থায়িত্ব ১০ গুন বৃদ্ধি পাবে)
WDC সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে ক্লিক করুন
প্রণালী:
- প্রাথমিক মিশ্রণ তৈরি: প্রথমে একটি বড় পাত্রে ১০ কেজি গোবর এবং ১০ লিটার গোমূত্র মিশিয়ে নিন।
- গুড়, বেসন ও মাটি যোগ করুন: এরপর মিশ্রণে ২ কেজি গুড়, ২ কেজি বেসন এবং ১ কেজি মাটি যোগ করে ভালোভাবে মেশান।
- পানি মেশানো: মিশ্রণে ২০০ লিটার পানি অথবা WDC যোগ করুন এবং পাত্রটি আলতো করে ঢেকে রাখুন যেন উৎপন্ন গ্যাস বাহির হতে পারে।
- নাড়ানো ও সংরক্ষণ: প্রতিদিন একবার মিশ্রণটি ভালোভাবে নাড়ুন। ৪-৫ দিন পর তরল জীব অমৃত প্রস্তুত হয়ে যাবে।
- ব্যবহার: ফসলের জমিতে ১:২০ অনুপাতে পানি মিশিয়ে তরল জীব অমৃত স্প্রে ও মাটিতে সরাসরি প্রয়োগ করতে হবে।
উপসংহার:
তরল জীব অমৃত একটি প্রাকৃতিক এবং কার্যকরী পদ্ধতি, যা মাটির উর্বরতা ও ফসলের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধিতে সহায়ক। এটি পরিবেশবান্ধব হওয়ায়, কৃষকদের জন্য এটি একটি সাশ্রয়ী এবং টেকসই সমাধান। যারা জৈব কৃষি চর্চা করতে চান, তাদের জন্য তরল জীব অমৃত একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হতে পারে। নিজের জমিতে এই প্রাকৃতিক পদ্ধতি প্রয়োগ করে আপনি ফসলের গুণগত মান ও উৎপাদন বৃদ্ধি করতে পারেন।