ধুতুরা গাছ
প্রচলিত নাম : ধুতুরা
ইংরেজী নাম : Thorn Apple
বৈজ্ঞানিক নাম : Datura metal Linn.
পরিবার : Solanaceae
পরিচিতি : ধুতুরা গুল্ম জাতীয় বহুবর্ষজীবী উদ্ভিদ। সাধারণতঃ কালো ও সাদা দু’রকমের ধুতুরা আছে। সাদা ধুতুরা সর্বত্র জন্মাতে দেখা যায়। উভয় গাছের গুণাগুণ প্রায় এক রকম তবে কালো ধুতুরার ব্যবহারই অধিক। উভয় প্রজাতির গাছের মধ্যে পার্থক্য এই-সাদা ধুতুরা গাছের ডাল, পাতা, ফল সবুজ হয় এবং ফুল বেগুনী সাদা কিন্তু কালো ধুতুরার ডাল-পাতা, ফল, ফুল বেগুনী রং-এর। ধুতুরা গাছ ১.৫ থেকে ২.৫ ফুট পর্যন্ত লম্বা হতে পারে। পাতা, সরল, একান্তর, বৃন্তক, ডিম্বাকার, পঁচাগ্র । পুষ্প একক, উভয়লিঙ্গ। ফল কাটাযুক্ত। সাধারণতঃ সাদা ধুতুরায় সারাবৎসর ফুল ও ফল হয় কিন্তু কালো ধুতুরায় জৈষ্ঠ্য-আষাঢ় মাসে ফুল ও আষাড়-শ্রাবণ মাসে ফল হয়।
বিস্তৃতি : ভারত ও বাংলাদেশের সর্বত্র। তবে রাস্তার পাশে বেশী দেখা যায় ।
বীজ সংগ্রহের সময় : জুলাই।
বীজের ওজন : প্রতি কেজিতে ৭৪,০০০-৭৭,০০০টি।
চাষাবাদ : ইহা বাংলাদেশের সর্বত্র আগাছা হিসাবে জন্মে। বীজ হতে চারা করা যায়। সাধারণতঃ অগ্রহায়ণ হতে ফাল্গুন পর্যন্ত বীজ সংগ্রহের পর বীজতলায় লাগাতে হয়। বীজ লাগানোর ১০-১৫ দিনের মধ্যে অঙ্কুরিত হওয়া শুরু করে । চারা মাটি ও গোবর ভর্তি (৩:১) ব্যাগে রাখতে হয়। ইহাছাড়া বীজ ব্যাগে সরাসরিও লাগান হয়। দু-তিন মাস বয়সের চারা মাঠে লাগাতে হয়। সাধারণতঃ সমতল ভূমি অপেক্ষাকৃত ভিজা ও উন্মুক্ত জায়গা, ইহা চাষের উত্তম তবে ছায়ায় ও ইহা জন্মাতে পারে। সুতরাং বড় গাছের নিচেও ইহা করা সম্ভব।
ঔষধি ব্যবহার :
১) ক্ষতরোগে : যে কোন ক্ষতে এ গাছের আঠা প্রয়োগ করলে দ্রুত তা কমে, এমনকি ৪/৫ দিনের মধ্যে বিষাক্ত ঘা ভাল হয়ে যায়।
২) চুলকানি ও পাঁচড়া : ১০ গ্রাম ধুতুরা তেলের সাথে ২০ গ্রাম খাঁটি সরষে তেল মিশিয়ে, সামান্য গরম করে, গোসলের পর পাঁচড়া ও চুলকানিতে মাখতে হবে। ৩/৪ দিন ব্যবহার করলে অবশ্যই চুলকানি ও পাঁচড়া থেকে আরোগ্যলাভ হয়।
৩) বোলতা ও ভীমরুলে কামড়ালে : ধুতুরা গাছের মূল সামান্য পানির সঙ্গে বেটে, কামড়ানো জায়গায় প্রলেপ দিলে, যন্ত্রণা থাকে না এবং ফুলাও কমে যায়।
৪) কুষ্ঠরোগে : ৫ গ্রাম ধুতুরা গাছের রস নিয়ে তার সমপরিমাণ গরুর কাঁচা দুধ মিশিয়ে ব্যবহার করলে কুষ্ঠ কমে যায়। তবে বেশ অনেকদিন পর্যন্ত এ চিকিৎসা করা প্রয়োজন।
৫) গণোরিয়া : ধুতুরা গাছের এক চামচ রস এবং সমপরিমাণ চন্দন গাছের রস মিশিয়ে ঘায়ে লাগাতে হবে। তবে খুবই দুরারোগ্য ব্যাধি। ধুতুরা শেকড় সামান্য পানি দিয়ে বেটে ঘায়ে প্রলেপ দিলে অল্প সময়ে ক্ষত শুকিয়ে যায় ।
৬) পাণ্ডু অর্থাৎ জন্ডিস : এ গাছের মুল কাণ্ড চিরলে যে হলুদ বর্ণের রস বের হয়, তা সকালে এক চামচ, বিকালে আরেক চামচ রোগীকে নিয়মিত সাতদিন খাওয়ালে উপকার পাওয়া যাবে।
৭) রক্ত আমাশয় : রোগীর বয়স অনুপাতে ধুতুরা পাকা বীজের ৩০-৬০ ফোটা তেল সকালে একবার এবং সন্ধ্যায় একবার করে খাওয়ালে রক্ত আমাশয় অবশ্যই ভাল হবে। আধুনিক অ্যালোপ্যাথিক চিকিৎসকরাও এ মত ব্যক্ত করেছেন। ৩/৪ ফোটা কালো ধুতুরা পাতার রস আধা পোয়া দুধ-এর সাথে মিশিয়ে খেলে আমাশয় রোগে উপকার পাওয়া যায়।
৮) কালো ধুতুরার শুস্ক পাতা ও ফুল বাসক পাতার সাথে চুরুট তৈরী করে ধুয়া টানলে হাঁপানির টান কমে তবে অনেক ক্ষেত্রে সর্দি বসে যায়।
৯) পাগলা শিয়ালে কামড়ালে ধুতরার কাঁচা মুল দেড় গ্রাম ও পুর্ণবার কাঁচা মূল ৫ গ্রাম একসাথে বেটে ঠাণ্ডা দুধ বা পানির সাথে পান করতে বলা হয়েছে সুশ্রুত সংহিতায়। পাগলা কুকুর অন্য সুস্থ কুকুর বা গরুকে কামড়ালে পাকা ধুতুরার বিচি ৪-৮ টি করে সকাল বেলা ৪ দিন খাওয়ায়ে সুফল পাওয়া গেছে। প্রত্যেক ক্ষেত্রেই গাভী ও কুকুর আরোগ্যলাভ করেছে। মানুষের ক্ষেত্রে এটি পরীক্ষা করা হয় নি।
১০) মাথায় হঠাৎ টাক পড়লে, অনেকে মনে করেন তেলাপোকায় কেটে দিয়েছে, আসলে এটা এক প্রকার Fungul infection এরূপ ক্ষেত্রে ধুতরা পাতার রস মাথায় লাগাতে বলেছেন, বাণভট্ট। তবে মাথার সকল জায়গায় এ রোগ ব্যপ্ত হলে একদিনে মাথার এক অংশ করে লাগাতে হবে। আর এটি একদিন পর একদিন লাগালেই ভাল।
১১) ঘাড়ে বা পিঠে ব্যথা হলে ধুতরার পাতা ও চুন একসাথে রগড়ে রস বের করে সেই রস লাগালে ঐ ব্যথা কমে যায়।
১২) ধুতরা পাতার রসের সাথে সামান্য একটু গাওয়া ঘি মিশিয়ে ফেঁড়ায় প্রলেপ দিলে ফোড়া পেকে যায়। ১৩) ধুতরা পাতার রসের সাথে সরিষার তেল মিশিয়ে মালিশ করলে বাতের ব্যথা কমে যায়।
১৪) এক কেজি সরিষার তেল ভালভাবে গরম করে এর সাথে ধুতরার পাতা বাটা রস ২ লিটার এবং আলাদ করে পাতা বাটা ২০০ গ্রাম মিশাতে হবে। পরে এ মিশ্রণের সাথে ২ লিটার পানি মিশিয়ে পুনরায় গরম করতে হবে। পানি শুকিয়ে গেলে তেলটা ঘেঁকে নিতে হবে। এটি হলো কনক তেল। এই কনক তেল পায়ের তলা ফাটারোগে (পাদদারী) বিশেষ উপকারী। এই তেল ছুলিতে লাগালেও ভাল কাজ হয়।
সাধারণ ব্যবহার : ধুতুরার অন্য কোন ব্যবহার জানা নেই। তবে গ্রামে-গঞ্জে এটি জ্বালানী হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
রাসায়নিক উপাদান : Alkaloids viz, hyoscyamine, hyoscine, atropine, scopolamine, norhyoscyamine, b) Vitamin-C, C) Other constituents viz. fixed oil & allantoin