ধুন্দুল গাছ
প্রচলিত নাম : ধুন্দুল
ইংরেজী নাম : The Puzzle Fruit Tree
বৈজ্ঞানিক নাম : Xylocarpus mekongensis Pier
পরিবার : Meliaceae
পরিচিতি : ধুন্দুল সুন্দরবনের উল্লেখযোগ্য গাছ। কাঠ খুবই মূল্যবান। বর্তমানে ধুন্দুল গাছ ব্যাপকভাবে হ্রাস পেয়েছে। ধুন্দুলপাতা হরিণের উপাদেয় খাদ্য এবং অনেকের ধারণা, এর ফলে ধুন্দুলের প্রাকৃতিক রিজেনারেশন কম হচ্ছে। উপকূলীয় বনায়নের জন্য এ গাছ। উপযোগী নহে। ধুন্দুল মাঝারী আকৃতির চিরহরিৎ বৃক্ষ, উচ্চতায় ১০-১৫ মিটার হয়ে থাকে। সাধারণতঃ এটির গুঁড়ি কাণ্ড শাখাবিহীন হয়। এর বাকল বেশ বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত মসৃণ, হলুদাভ বাদামী এবং অনিয়মিতভাবে বিভিন্ন অংশে বাকল এমনভাবে ছড়ানো থাকে যে, কাণ্ড দাগযুক্ত থাকে। লেন্টিসেল ততোটা দৃষ্টিগোচর হয় না। যদিও বাট্রেস দেখা যায় তবে তার অনেক পুর্বেই গাছের গোড়ার মূলগুলি লম্বাফালির মতো উঁচু হয়ে উঠে।
পাতা সবুজ, যৌগিক এবং ২-৬টি পত্রকে বিভক্ত। পত্রকগুলো রসালো এবং সর্বোচ্চ ১২ সেন্টিমিটার দৈর্ঘ্য ও ৬ সেন্টিমিটার প্রস্থ বিশিষ্ট হতে পারে। সাধারণতঃ পাতার শীর্ষ গোলাকৃতির হয়ে থাকে। মৃদু সৌরভযুক্ত সাদাটে ক্ষুদ্র একলিঙ্গ ফুলের পুস্পবিন্যাস অনিয়ত। সাধারণতঃ গ্রীষ্মকালে ফুল ফোটে।
পরিপক্ক বাদামী ফল অনেকটা বেল আকৃতির ওজনে প্রায় ২ থেকে ৩ কিলোগ্রাম পর্যন্ত হয়ে থাকে। প্রতি ফলে ৮ থেকে ১০টি কোণাকৃতির বীজ থাকে। ফল সাধারণতঃ জুলাই মাসে পাকে। অঙ্কুরোদগম মৃৎগত।
বিস্তৃতি : সুন্দরবন ও আশেপাশের এলাকায়।
বীজ সংগ্রহ : জুন-জুলাই মাসে ফল পরিপক্ক হয়। ফল দেখতে অনেকটা বেলের মতো এবং শক্ত খোসা থাকে। ফলের শক্ত ত্বক যখন সবুজ থেকে হালকা বাদামী রং ধারন করে তখন পরিপক্ক হয়েছে বুঝায় এবং গাছে চড়ে ফল সংগ্রহ করতে হবে। একটি বড় ধরনের ফলের ওজন প্রায় ৬ কেজি পর্যন্ত হয়ে থাকে। তবে গড় ওজন ২.৫-৩.০ কেজি। একটি ফলে ৫-১৫টি বীজ থাকে। পরিপক্ক ফলের খোসা ফাটিয়ে বীজ সংগ্রহ করা হয়।
চারা উত্তোলন : ধুন্দুল পলিব্যাগে বা নার্সারী বেডে বপন করা যায়। পলিব্যাগের চারার জন্য ৪০ সে. মি. x ২৩ সে. মি. আকারের বক্স পলিব্যাগ ব্যবহার করা হয়। নার্সারী বেডে ডিবলিং পদ্ধতিতে বীজ বপন করা হয়। বীজ বপনের ৩ সপ্তাহ পর অঙ্কুরোদগম শুরু হয় এবং উহা ১২ সপ্তাহ পর্যন্ত স্থায়ী হয়। পলিব্যাগে প্রায় ৬০-৬৫% বীজ গজায়। পলিব্যাগ নার্সারী ও নার্সারী বেডে চারার পরিচর্যার স্বাভাবিক নিয়ম অনুসরণ করতে হবে ।
বাগান উত্তোলন : ধুন্দুল গাছ পশুর গাছের মতো খালের পাড়ে এবং ছায়া জায়গাতে ভাল হয়। মার্চ-এপ্রিল মাসে চারার বয়স যখন ১০ মাস হয় এবং উচ্চতা ৮০-১২০ সে. মি. হয় তখন নার্সারী বেড হতে নগ্নশিকড় বা পলিব্যাগ চারা ৮ x ৮ দূরত্বে গর্ত করে লাগাতে হবে । নগ্নশিকড় চারা নার্সারী বেড হতে লাগালে জীবিত হার খুবই কম হয়। একটি গবেষণায় পাওয়া গেছে, ধুন্দুলের বাগানের জন্য সুন্দরবনই একমাত্র উপযোগী স্থান। ছোট চারা হরিণের উপদ্রব হতে রক্ষা করার জন্য গাছের ছোট ডালা বা গড়ানের ঝাটা দিয়ে ঘেরা বা বেড়া দিতে হবে। নতুবা চারা ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
সাধারণ ব্যবহার : কাঠ খুবই মূল্যবান ও ভাল বিধায় আসবাবপত্র ব্যবহৃত হয়। ধুন্দুলের কাঠ শক্ত, সাদা বর্ণের, কিন্তু বাহিরে খোলা অবস্থায় থাকলে লাল বর্ণ ধারন করে। যদিও পরিপক্ক অবস্থায় কাণ্ডের অংশবিশেষ ফাপা হয়ে পড়ে তবুও ধুন্দুল সুন্দরবনের উৎপাদিত ভাল মানের কাষ্ঠল প্রজাতির অন্যতম। ধুন্দুলের ফুল থেকে মৌমাছিরা খাদ্য সংগ্রহ করে থাকে।