চলনতন্ত্রের রোগ লক্ষণ ও ব্যবস্থাপণী
চলন তন্ত্রের রোগ বলতে দেহের অস্থি, সন্ধি ও এদের সাথে সংশ্লিষ্ট মাসল (পেশি) ও টিস্যুর রোগকে বোঝায়। সাধারনত হাত-পা ব্যথা, কোমড় ব্যথা, ঘাড় ব্যথা, কিংবা দেহের বিভিন্ন সন্ধিতে ব্যথা এ ধরনের সমস্যার অন্তর্ভুক্ত।
চলনতন্ত্রের রোগের ক্ষেত্রে হাড়জোড়া বিশেষজ্ঞ (অর্থোপেডিক্স) কিংবা বাতব্যথা বিশেষজ্ঞ (রিউমাটোলজিস্ট) অপ্রাপ্তিতে মেডিসিন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া অধিক ফলপ্রসূ।
চলন তন্ত্রের রোগের কারণ
ক্রটিপূর্ণ দৈনন্দিন কার্যাবলী (শোয়া, বসা, ওজন ভোলা, গৃহস্থালী কাজ
ইত্যাদি ক্ষেত্রে সঠিক নিয়ম না মানা)।
অপুষ্টি।
বৃদ্ধ বয়স।
জীবাণু। ইত্যাদি ।
চলনতন্ত্রের রোগ প্রতিরোধের সাধারণ নির্দেশনা
অপুষ্টি দূর করা। নিয়মিত ভিটামিন বি কমপ্লেক্স, ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাদ্য খাওয়া।
দৈনন্দিন কাজকর্মের ( যেমন- বসার, কোন ভারী বস্তু উঠানোর, শোয়ার, গৃহস্থালি কাজ ইত্যাদি ক্ষেত্রে) সঠিক নিয়ম মেনে চলা ।
চলন তন্ত্রের সমস্যার কোন লক্ষণ দেখা যাওয়া মাত্র দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া।
কোর্স মতো ঔষধ সেবন করা (অনেক ক্ষেত্রেই দীর্ঘদিন ঔষধ সেবন করতে
হয়)। নিয়মিত চিকিৎসকের সাথে দেখা করা (ঔষধে উন্নতি হলেও না হলেও )।
মানসিক চাপ এড়িয়ে চলা, নিজেকে প্রফুল্ল রাখার চেষ্টা করা।
নিয়মিত হালকা ব্যায়াম (যেমন- হাঁটা) করা।
প্রতিরোধমূলক ব্যয়াম করা।
চলল তন্ত্রের রোগের লক্ষণ সমূহ
বেদনা
আড়ষ্ট হয়ে যাওয়া ।
মাংসপেশিতে টান লাগা।
ফুলে যাওয়া
নড়াচড়ায় সমস্যা। ইত্যাদি।
বেদনা বা ব্যাথা
ব্যথা / বেদনা চলনতন্ত্রের রোগের সাধারণতম অভিযোগ। ব্যথার কারণ সমূহ নির্ভর করে ব্যথার স্থানের উপর। যেমন
পেশিতে ব্যথা : অতি ব্যবহার, আঘাত, ফাইব্রোমায়ালজিয়া, সংশ্লিষ্ট অস্থি ও সন্ধিতে সমস্যা, সংশ্লিষ্ট নার্ভে সমস্যা, সংশ্লিষ্ট রক্তনালীতে সমস্যা, আভ্যন্তরিণ টিউমার ইত্যাদি।
অস্থিতে বেদনা: আঘাত, অস্থি ক্ষয় হয়ে যাওয়া, ইনফ্লামেশন, সংশ্লিষ্ট পেশির সমস্যা, সংশ্লিষ্ট জয়েন্টের সমস্যা ইত্যাদি।
সন্ধিতে ব্যথা: কিছু সার্বদৈহিক রোগ (যেমন- রিউমাটয়েড আথ্রাইটিস, রিউমেটিক ফিভার), হাড় ক্ষয় হয়ে যাওয়া, ইনফ্লামেশন, সংশ্লিষ্ট পেশির আঘাত, সংশ্লিষ্ট ধারকের সমস্যা, সন্ধির অভ্যন্তরে অতিরিক্ত তরল জমে যাওয়া ইত্যাদি। সন্ধিতে ব্যথা বলতে এমনিতে ব্যথা থাকা কিংবা নড়াচড়ায় ব্যথা হওয়া উভয়কেই নির্দেশ করে।
কোমড় ব্যথা: কোমড়ের অস্থি সংক্রান্ত সমস্যা, কোমড়ের সন্ধি সংক্রান্ত সমস্যা, কোমড়ের দুটি অস্থির মধ্যবর্তী ডিস্ক সরে যাওয়া, স্থানীয় নার্ভে চাপ লাগা, কিডনী সমস্যা, স্ত্রী রোগ, পেটের মধ্যে টিউমার ইত্যাদি। ঘাড় ব্যথা: ঘাড়ের অস্থি সংক্রান্ত সমস্যা, ঘাড়ের সন্ধি সংক্রান্ত সমস্যা, ঘাড়ের দুটি অস্থির মধ্যবর্তী ডিস্ক সরে যাওয়া, স্থানীয় নার্ভে চাপ লাগা, স্নায়ুতন্ত্রের সমস্যা ইত্যাদি।
পায়ের তলায় ব্যথা: অস্থির সমস্যা, সন্ধির সমস্যা, ফ্যাসাইটিস, আঘাত ইত্যাদি।
পরিপূর্ণ রোগ নির্ণয় না করে ব্যথার ঔষধ খাওয়া একেবারেই অনুচিত। একেক ধরনের সমস্যায় একেক ধরনের বেদনানাশক ব্যবহার করা হয়। তাছাড়া বেশিরভাগ বেদনা নাশক স্টমাক, কিডনী ও লিভারের ক্ষতি করে। আবার একনাগাড়ে একটি বেদনা নাশক অনেকদিন ব্যবহার ঠিক নয়। রোগের পর্যায়ের উপর নির্ভর করে বেদনানাশক পরিবর্তন করা উচিত।
প্রাথমিক চিকিৎসা
আক্রান্ত স্থানকে বিশ্রাম দিতে হবে।
ডলাডলি বা মালিশ থেকে বিরত থাকতে হবে।
সাধারণত আক্রান্ত স্থানে গরম স্যাক দেওয়া ( যদি রোগী উপশম বোধ করে)।
ঔষধ
এ ক্ষেত্রে চিকিৎসাকাল সর্বোচ্চ ৭ দিন। ১) মধ্যম ক্রিয়াশীল এনালজেসিক:
a জেনেরিক: প্যারাসিটামল (paracetamol) ;
D . ব্র ব্রান্ড-নাপা (NAPA), প্রস্তুতকারক: বেক্সিমকো
ডোজঃ প্রাপ্ত বয়স্ক (১২+): ট্যাবলেট নাপা র্যাপিড-১টি করে দিনে তিন বার। শিশু
= ৩ বছর থেকে ৫ বছর: দেড় থেকে দুই চা চামচ দিনে ৩-৪ বার।। এ ৫ থেকে ১২ বছর : ২-৪ চা চামচ দিনে ৩-৪ বার।
২) উচ্চ ক্রিয়াশীল এনালজেসিক:
& জেনেরিক: ন্যাপ্রোপ্রোক্সেন+ ইসোমেপ্রাজল; (Naproxen
Esomeprazol) # ব্রান্ড-নেসো-৫০০/২০ (Neso-500/20), প্রস্তুতকারক-এরিস্টোফার্মা
+
ডাঃ আব্দুল্লাহ আল কাইয়ুম
৬৪৫
মেডিসাইন্স পাবলিকেশন্স
চলনতন্ত্রের রোগ
ডোজ: প্রাপ্ত বয়স্ক (১২+): ১ ট্যাবলেট সকালে ও রাতে খাবার ২০ মিনিট পূর্বে।
পরবর্তীতে একজন এমবিবিএস চিকিৎসকের নিকট প্রেরণ করতে হবে।
আড়ষ্ট হয়ে যাওয়া
আড়ষ্ট হয়ে যাওয়া বলতে কোন স্থান নাড়াতে ব্যথা অনুভব করা। এই লক্ষণটি বিভিন্ন স্থানে দেখা যেতে পারে। এর কারণও স্থানভেদে ভিন্নতর। যেমন সকালে ঘুম থেকে উঠতে কোমড়ে বা হাঁটুতে বেদনা হলে তা অস্টিওআথ্রাইটিস এর লক্ষণ। আবার কোন কারণে ঘাড় নাড়াতে বেদনা হলে তা মাসল স্পাজমের লক্ষণ হতে পারে। সাধারণভাবে মাসল স্পাজম, অস্টিওআথ্রাইটিস, অস্টিওপরোসিস (হাড় ক্ষয়), নার্ভ এ চাপ লাগা ইত্যাদি কারণে এই আড়ষ্টতা হতে পারে।
আড়ষ্টতার ক্ষেত্রে প্রাথমিক চিকিৎসা
সাধারণ ব্যবস্থাপনা
আক্রান্ত স্থানকে বিশ্রাম দিতে হবে।
ডলাডলি বা মালিশ থেকে বিরত থাকতে হবে।
সাধারণত আক্রান্ত স্থানে গরম স্যাক দেওয়া ( যদি রোগী উপশম বোধ করে)।
ঔষধ। এ ক্ষেত্রে চিকিৎসাকাল সর্বোচ্চ ৩ দিন। ১) উচ্চ ক্রিয়াশীল এনালজেসিক:।
জেনেরিক: ন্যাপ্রোপ্রোক্সেন+ ইসোমেপ্রাজল; (Naproxen + Esomeprazol) ব্রান্ড-নেসো-৫০০/২০ (Neso-500/20), প্রস্তুতকারক-এরিস্টোফার্মা | ডোজ: প্রাপ্ত বয়স্ক (১২+): ১ ট্যাবলেট সকালে ও রাতে খাবার ২০
মিনিট পূর্বে।
ডাঃ আব্দুল্লাহ আল কাইয়ুম।
৬৪৬
মেডিসাইন্স পাবলিকেশন্স
চলনতন্ত্রের রোগ
২) মাসল রিলাক্সেন।
# জেনেরিক: টলপেরিসন হাইড্রোক্লোরাইড (tolperisone
hydrochloride) ব্রান্ড: মায়োসন (Myoson) প্রস্তুতকারক: ইবনে সিনা ডোজ: প্রাপ্ত বয়স্ক (১২+): ১ ট্যাবলেট সকালে ও রাতে খাবার পর।
পরবর্তীতে একজন এমবিবিএস চিকিৎসকের নিকট প্রেরণ করতে হবে।
মাংসপেশীতে টান লাগা
এটি একটি সাধারণ সমস্যা। প্রায়ই বিভিন্ন কারনে বিভিন্ন মাংস পেশিতে টান লাগতে পারে। যেমন- ঘাড়ে টান লেগে ঘাড় নাড়াতে সমস্যা হওয়া, পায়ের পেশিতে হলে পা নাড়াতে সমস্যা হওয়া, কোমড়ে সমস্যা হওয়া।
প্রাথমিক চিকিৎসা:
সাধারণ ব্যবস্থাপনা
আক্রান্ত স্থানকে বিশ্রাম দিতে হবে।
ডলাডলি বা মালিশ থেকে বিরত থাকতে হবে। । সাধারণত আক্রান্ত স্থানে গরম স্যাক দেওয়া ( যদি রোগী উপশম বোধ করে)।
ঔষধ। এ ক্ষেত্রে চিকিৎসাকাল সর্বোচ্চ ৩ দিন। ১) উচ্চ ক্রিয়াশীল এনালজেসিক:
জেনেরিক: ন্যাপ্রোপ্রোক্সেন+ ইমোমেপ্রাজল; (Naproxen Esomeprazol)
ব্রান্ড-নেসো-৫০০/২০ (Neso-500/20}, প্রস্তুতকারক-এরিস্টোফার্মা । ডোজ: প্রাপ্ত বয়স্ক (১২+): ১ ট্যাবলেট সকালে ও রাতে খাবার ২০
মিনিট পূর্বে। ২) মাসল রিলাক্সেন
ডাঃ আব্দুল্লাহ আল কাইয়ুম
৬৪৭
মেডিসাইন্স পাবলিকেশন্স
চলনতন্ত্রের রোগ
জেনেরিক: | টলপেরিসন হাইড্রোক্লোরাইড (tolperisone hydrochloride)
ব্রান্ড: মায়োসন (Myoson) প্রস্তুতকারক: ইবনে সিনা। # ডোজ: প্রাপ্ত বয়স্ক (১২+): ১ ট্যাবলেট সকালে ও রাতে খাবার পর।
– পরবর্তীতে একজন এমবিবিএস চিকিৎসকের নিকট প্রেরণ করতে হবে।
ফুলে যাওয়া
সাধারণ ভাবে ফুলে যাওয়া ও ব্যথা থাকার অর্থ সংশ্লিষ্ট স্থানের ইনফ্লামেশন। সাধারণত সন্ধি সমস্যা হলে আক্রান্ত স্থান ফুলে যায়, গরম হয়ে ওঠে। আবার সেখানে পানি জমলেও (যেমন পায়ের গোড়ালী সন্ধিতে) সেখানটা ফুলে যেতে পারে।
প্রাথমিক চিকিৎসা
যদি ফুলে যায় ও আক্রান্ত স্থানে বেদনা থাকে তবে (এ ক্ষেত্রে চিকিৎসাকাল সর্বোচ্চ ২ দিন )
১) মধ্যম ক্রিয়াশীল এনালজেসিক:
জেনেরিক: প্যারাসিটামল (paracetamol) ; ব্রান্ড-নাপা (NAPA), প্রস্তুতকারক: বেক্সিমকো ডোজ: প্রাপ্ত বয়স্ক (১২+): ট্যাবলেট নাপা র্যাপিড-১টি করে দিনে তিন বার।
। ৩ বছর থেকে ৫ বছর: দেড় থেকে দুই চা চামচ দিনে ৩-৪ বার।
এ ৫ থেকে ১২ বছর : ২-৪ চা চামচ দিনে ৩-৪ বার।। ২) উচ্চ ক্রিয়াশীল এনালজেসিক:
ডাঃ আব্দুল্লাহ আল কাইয়ুম
৬৪৮
মেডিসাইন্স পাবলিকেশন্স
চলমৃতন্ত্রের রোগ
==
==
‘ জেনেরিক ন্যাপ্রোপ্রোক্সেন+ ইসোমেপ্রাজল; (Naproxen +
Esomeprazol) ব্রান্ড-নেসো-৫০০/২০ (Nes0-500/20), প্রস্তুতকারক-এরিস্টোফার্মা। ডোজ: প্রাপ্ত বয়স্ক (১২+): ১ ট্যাবলেট সকালে ও রাতে খাবার ২০ মিনিট পূর্বে।
পরবর্তীতে একজন এমবিবিএস চিকিৎসকের নিকট প্রেরণ করতে হবে।
ডাঃ আব্দুল্লাহ আল কাইয়ুম।
৬৪৯
মেডিসাইন্স পাবলিকেশন্স
চলনতন্ত্রের রোগ