গাছপালা

সুন্দরী গাছ

প্রচলিত নাম : সুন্দরী

ইংরেজী নাম : Sundri

বৈজ্ঞানিক নাম : Heritiera fomes Buch-Ham

পরিবার : Sterculiaceae

পরিচিতি : সুন্দরবনের প্রধান বৈশিষ্ট্য সুন্দরী গাছ। এ গাছের নাম অনুসারে উপকূলীয় বনের সুন্দরী মাঝারী আকারের চিরসবুজ বৃক্ষ। সুন্দরী সুন্দরবনের একটি মূল্যবান কাঠের গাছ। অনেকের ধারণা, সুন্দরী গাছ শুধু সুন্দরবন ও তৎসংলগ্ন এলাকায় হয়ে থাকে। উহা সুন্দরবনে প্রাকৃতিকভাবে বংশ বিস্তার করে থাকে। সুন্দরী গাছ ম্যানগ্রোভ ইকোসিস্টেমের চুড়ান্ত গাছ।

সুন্দরী গাছ এলাকা ভেদে ১৫-২৫ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে। সুন্দরবনের উত্তরাংশে গড়ে ১৫-২০ মিটার ও দক্ষিণাংশে ৪.৫-৬.০ মিটার উঁচু হয়ে থাকে। সুন্দরী কম লবনাংক্ত অঞ্চলে ভাল জন্মে। সুন্দরী গাছ আলো পছন্দকারী গাছ এবং তাই উহা অন্য গাছের নীচে ভাল জন্মে না। গাছের বাকল ধূসর সাদা রং বিশিষ্ট এবং লম্বাভাবে চিড় খাওয়া কান্ডের গোড়ায় অধিমূল ও অসংখ্য শ্বাসমূল রয়েছে। চারা অবস্থায় সুন্দরী ছায়া পছন্দ করলেও বড় হলে ছায়া সহ্য করে না। সুন্দরী গাছের পত্রবিন্যাস সরল পাতার উপরিভাগের রং গাঢ় সবুজ এবং নীচের অংশ ধুসর বা সাদা। পরিপক্ক পাতার দৈর্ঘ্য ১৫-২০ সেন্টিমিটার এবং প্রস্থ ৫-৭ সেন্টিমিটার হয়ে থাকে।

সুন্দরী ফুল আকারে ছোট হলুদ কমলা রঙের এক লিঙ্গ বিশিষ্ট। মার্চ -এপ্রিল মাসে ফুল আসে, ফুল গুচ্ছভাবে ফোটে। এ গাছের ফল জুলাই-আগস্ট মাসে পাকে। ফল কাষ্ঠল এবং বাদামী বর্ণের হয়। সুন্দরবনে বর্তমানে একাধিক কারণে সুন্দরীর প্রাকৃতিক বংশ বিস্তার কমে যাচ্ছে এবং আগামরা রোগের কারণে লক্ষ লক্ষ গাছ মরে যাচ্ছে। তাই অদূর ভবিষ্যতে সুন্দরীর বাগান সৃজনের উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন। উপকূলীয় বনায়নে সুন্দরী রোপণ করে কোন সফলতা আসেনি। পরীক্ষামূলকভাবে উপকূলীয় অঞ্চলে পলিব্যাগে সুন্দরী চারা উত্তোলন করে বাগান সৃজন করা হয়েছে। কিন্তু গাছের বৃদ্ধি সন্তোষজনক নহে। তবে সুন্দরবন ও তৎসংলগ্ন এলাকায় সুন্দরী বাগান সৃজন করার সুযোগ রয়েছে।

বিস্তৃতি : সুন্দরবনের সর্বত্র।

বীজ সংগ্রহ : জুন-জুলাই মাসে ফল পরিপক্ক হলে বাদামী বর্ণের হয় এবং গাছ থেকে ঝরে পড়ার পর পানির সংস্পর্শে আসলে গাঢ় বাদামী রং ধারন করে। গাছের নীচ থেকে অথবা পানিতে ভাসমান বীজ সংগ্রহ করে বস্তায় ভরা হয়। একটি ফলে একটি বীজ থাকে। প্রায় ৭৫১০০ বীজের ওজন ১ কেজি।

নার্সারী উত্তোলন : সুন্দরী চারা নার্সারী বেডে উত্তোলন করা এবং বাগানে লাগানোর ফলাফল সন্তোষজনক নহে। বীজ সরাসরি ডিবলিং করে মাঠে লাগানোর চেয়ে ২৫x১৫ সে. মি. বা ১৫x১০ সে. মি. আকারের পলিব্যাগে চারা উত্তোলন করে মাঠে লাগালে উত্তম এবং এতে জীবিত হার ৯০% পর্যন্ত পাওয়া যায়। পলিব্যাগে ডিবলিং পদ্ধতিতে বীজ জুন-জুলাই মাসে বপন করা হয় এবং ১ মাসের মধ্যে অঙ্কুরোদগমের হার প্রায় ৭৫% হায়ে থাকে। সুন্দরী বীজ প্রায় ১ মাস পর্যন্ত সংরক্ষণ করা যায় এবং তখন ৬০% ভায়াবিলিটি থাকে । পলিব্যাগে নার্সারীতে চারার পরিচর্যা অন্যান্য ম্যানগ্রোভ প্রজাতির মতো।

বাগান উত্তোলন : সুন্দরনের খালি পুরাতন চরে যেখানে প্রাকৃতিকভাবে সুন্দরী গাছ ভাল জন্মে না সেখানে সুন্দরী গাছ লাগানো যায়। অতি লবনাক্ত অঞ্চলে সুন্দরী গাছ ভাল হয় না। বন থেকে উঠিয়ে চারা লাগালে মারা যায়। সুন্দরী বীজ সরাসরি বপন করেও ভাল ফলাফল আশা করা যায় না। তাই একমাত্র পলিব্যাগে চারা যখন ১০ মাস বয়সে ৫০-৬০ সে. মি. লম্বায় তখন এপ্রিল-মে মাসে বাগানে ১০’ x১০’ দূরত্বে ১’ x১’ x১’ গর্ত করে রোপন করতে হবে।

রোপিত চারা অন্যান্য ম্যানগ্রোভ প্রজাতির মতো পরিচর্যা করতে হবে। তবে কৃত্রিম উপায়ে সুন্দরী বাগান সৃজনের সফলতা সন্তোষজনক নহে। এ ব্যাপারে আরও গবেষণা করা প্রয়োজন।

সাধারণ ব্যবহার : কাঠ হালকা বাদামী বর্ণের হয়। কাঠ অত্যন্ত শক্ত, দৃঢ়, ভারী ও টেকসই। সহসা ভাঙ্গা যায় না ও ভাল পালিশ নেয় । এ কাঠ জলে ও স্থলে সমভাবে টেকসই, পোকা বা ঘুণে ধরে না। পাইলিং, পিট প্রুফ, নৌকা, ট্রলার, লঞ্চ, বাস, ট্রাক, গরু-ঘোড়ার গাড়ী, রিক্সা, গৃহনির্মাণ, দরজা-জানালা, কড়ি, বরগা, দাড়, বৈঠা, হাইল, মাস্তুল, গাড়ীর চাকা, নাপা, কাইল, কৃষি উপকরণ, আসবাবপত্র, পোলি ব্লক, যন্ত্রের হাতল, ব্রীজ, ব্রেক ব্লক ও জেটি নির্মাণে ব্যবহৃত হয়। এছাড়া, শাখা ও ডালা হার্ডবোর্ড ও পার্টিকেল বোর্ড তৈরীতে ব্যবহৃত হয়।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *