গাছপালা

সুপারি গাছ

প্রচলিত নাম : গুয়া

ইংরেজী নাম : Betel Nut

বৈজ্ঞানিক নাম : Areca catechu Linn.

পরিবার : Palmae

পরিচিতি : সুপারি গাছ বেশ শক্ত, সরু ও লম্বা, নারিকেল গাছের মত শাখা-প্রশাখাহীন গাছ। তবে বাঁশের মত মোটা হয়। লম্বায় সচরাচর ৮/১০ মিটার হলেও অনেক ক্ষেত্রে ২০-২৫ মিটার পর্যন্ত হতে দেখা যায়। নরিকেল পাতার মত পত্রদণ্ডের পরস্পর বিপরীত দিকে পত্রকগুলো থাকে এবং লম্বায় ৫০-৬০ সে.মি. পর্যন্ত হয়; আর পত্রদণ্ড লম্বায় ২/৩ মিটার পর্যন্ত হতে দেখা যায়। পুষ্পদণ্ডও প্রায় নারিকেলের পুষ্পদণ্ডের মত (বহু শাখা-প্রশাখা) বিভক্ত পুষ্পমঞ্জরী সম্পন্ন। প্রতিটি মঞ্জরীর গোড়ায় ৩৫০টি স্ত্রী ও আগায় প্রায় ৪৮,০০০ পুরুষ ফুল থাকে। ফল (সুপারি) কাচা অবস্থায় সবুজ ও পাকা অবস্থায় গাঢ় হলুদ বা কমলা রং ধারন করে ।

বিস্তৃতি : বাংলাদেশের প্রায় সর্বত্রই সুপারি গাছ কম-বেশী দেখা যায়। চট্টগ্রাম, সিলেট ও উপকূলীয় জেলাসমূহে সুপারি ভাল জন্মে। সুপারির কয়েকটি জাত আছে। চট্টগ্রাম, টেকনাফ অঞ্চলে চাষ হয় A. triandre যা দেখতে লাল বর্ণের। সিলেট অঞ্চলে ভাল হয় A. grcilis জাত-এর সুপারি। এ জাতের গাছে বছরের প্রায় সবসময় ফুল ও ফল হয়।

বীজ সগ্রহ সময় : অক্টোবর-ডিসেম্বর (কার্তিক-অগ্রহায়ণ)

বীজের ওজন : কেজিতে ৩০-৫০টি (ত্বকসহ)

চারা উত্তোলন : ১। বীজ সংগ্রহ : বাগান সৃজনের জন্য নার্সারীতে বা বসত বাড়ীতে চারা তৈরী করতে হবে। মা-গাছ (৩০ বৎসর বয়স) হতে ভাল জাতের সুপারি ডিসেম্বর-জানুয়ারী মাসে সংগ্রহ করতে হবে। ভাল করে পাকার জন্য মার্চ মাস পর্যন্ত রাখা যায়।

২। নার্সারী বেড তৈরী : বাগানের জন্য নির্বাচিত জমির নীচের দিকে অথবা নার্সারীতে পরিমিত গোবর ও কম্পোস্ট সার দিয়ে ৪০ x ৪০ সাইজের নার্সারী বেড তৈরী করতে হবে। প্রতি বেডে গোবর সারের পরিমাণ নিম্নরূপ :

গোবর- ৮.০ বর্গফুট

কম্পোস্ট- ৪.০ কেজি।

টি এস পি- ১.০ কেজি

এম পি- ০.৫ কেজি

৩। বীজ বপন ও পরিশোধন প্রণালী : বীজ হতে চারা ৩ প্রণালীতে করা যায়। যথা : ক) ফেব্রুয়ারী-মার্চ মাসে গাছে রক্ষিত বীজ সুপারি পেড়ে সরাসরি নার্সারী বেডে লাগানো। খ) বীজ সুপারীকে মার্চ মাসে ৪ x ৩ x ৩ সাইজের ঢালু গর্ত করে স্তরে স্তরে বিছিয়ে গোবরসহ ফাঁকা গর্তে রাখা। লক্ষ্য রাখতে হবে যাতে গর্তের উপর মাটির কোন চাপ না পড়ে। তাই বাঁশের তরজা/চাটাই দ্বারা গর্তের উপরিভাগ ঢেকে দিতে হবে। জুন মাস পর্যন্ত প্রতিদিন পানি দিতে হবে এবং অতিরিক্ত পানি নিষ্কাশনের জন্য গর্তের ঢালু অংশের কোণে গভীর গর্ত বা নালার ব্যবস্থা রাখতে হবে। বীজ গজাবার ২ মাসের মধ্যে ২ পর্যন্ত লম্বা হয়।

৪। চারা স্থানান্তর : জুন-জুলাই মাসে অঙ্কুরোদগম গর্ত হতে চারা তুলে ১ম নার্সারী বেডে 4 x ৪ দূরত্বে লাগাতে হবে। চারা স্থানান্তরের পর নিয়মিত পানি ও উত্তম ছায়ার ব্যবস্থা করতে হবে । ২য় নার্সারী বেড বা পরিখা বেড়ে ১x১ দূরত্বে লাগাতে হবে এবং নিয়মিত পানি দিতে হবে। চারার বয়স যখন ১ বৎসর ৬ মাস-২ বৎসর হয় তখন বাগানে লাগানোর উপযুক্ত বলে গণ্য করা হয়। কোন কোন নার্সারীতে অঙ্কুরিত ২-৩ পাতা বিশিষ্ট চারা নার্সারী বেডে স্থানান্তর না করে ১০ x ৬ পলিব্যাগে পুনঃ রোপণ করা হয় এবং অন্যান্য চারার মতো যত্ন করা হয়। তবে এ ধরনের চারার উচ্চতা কম থাকে এবং মাঠে লাগানোর পর জীবীতের হার তুলনামূলকভাবে কম হতে পারে।

(খ) বাগানের ক্ষেত্রবিন্যাস : জমিতে বাগান সৃজন করতে হলে নির্বাচিত বাগান এলাকার উপরের দিকে অবস্থিত জলাশয় হতে প্রধান নালা কেটে জমির মধ্যভাগ দিয়ে নিতে হবে। প্রধান নালা হতে ১২ দূরে দূরে লম্বিতভাবে শাখা নালা কাটতে হবে। নালাগুলো ৩ ফুট প্রস্থ ও ২ ফুট গভীর হবে । দুটি শাখা নালার মধ্যবর্তী স্থানকে ভারড় বলে এবং ইহাতে নালার মাটি ছড়িয়ে দিতে হবে। তারপর নালা হতে ২ ভিতরে ৮ x ৮ দূরত্বে ২ x ২ x ২ আকারের গর্ত করতে হবে এবং গোবর ১০ কেজি, ইউরিয়া ১০০ গ্রাম, টিএসপি ২০০ ও এম.পি ১৫০ গ্রাম দিয়ে গর্ত ভর্তি করে রাখতে হবে। সুপারি ছায়া পছন্দকারী গাছ । তাই চারা লাগানোর ১ বৎসর পূর্বে বর্ণিত ছায়াগাছ সৃজন করতে হবে।

(গ) চারা রোপণ : যথন চারার বয়স ২ বৎসর তখন ২য় নার্সারী বেড় হতে মাটির বলসহ চারা অথবা নগ্ন শিকড় অবস্থায় তুলে পুরাতন কম্পোস্ট সারযুক্ত গর্তে লাগাতে হবে। সুপারি গাছ বড় হলে মান্দার ও কলাগাছ কেটে ফেলতে হবে। প্রতি একরে ৮ x ৮ দূরত্বে ৬৮০টি চারা লগানো যায় ।

(ঘ) গাছে সার প্রয়োগ : প্রতি বছর মার্চ মাসে কোদাল দ্বারা বাগানের মাটি আলগা করে দিতে হবে। গাছ প্রতি ২০ কেজি গোবর ও কম্পোস্ট সার এবং ১০০ গ্রাম ইউরিয়া, ৩০০ গ্রাম টিএসপি ও ২০০ গ্রাম এম.পি সার দিতে হবে । রিং পদ্ধতিতে সার প্রয়োগে ফল বৃদ্ধি পাবে। সুপারি গাছে ৬-৭ বৎসর পর সুপারি ধরা শুরু হয়। একটি গাছে গড়ে ২০০-২৫০টি সুপারি পাওয়া যায়। এক একর বাগান হতে ৪৫০-৫০০ কেজি শুকনো সুপারি ও প্রচুর পরিমাণ জ্বালানি পাওয়া যায়।

ঔষধি ব্যবহার :

৫) গুঁড়া কৃমির উপদ্রব দেখা দিলে ৪ গ্রাম সুপারি থেঁতো করে ৩ কাপ পানিতে সেদ্ধ করে এক কাপ থাকতে নামিয়ে ছেকে নিয়ে তা সকালে-বিকালে দুইবার খেলে উপশম হবে। তবে বচ্চাদের জন্য এ পরিমাণ অর্ধেক করতে হবে।

৬) উপযুক্ত বিধানের সাথে বেলশুট (কাঁচা বেল শুকিয়ে চুর্ণ করা) এক গ্রাম মিশিয়ে দুই বেলা খেলে রক্ত আমাশয় সেরে যায়।

৭) পেটে অজীর্ণের ক্ষেত্রে উক্ত পদ্ধতিতে সুপারির ক্বাথ তৈরী করে দিনে দুইবেলা খেলে সেরে যায়।

৮) ঘা পচে গিয়ে দুর্গন্ধ হয়ে গেলে এবং বিশ্রী স্রাব নির্গত হলে কাঁচা সুপারি ভালভাবে শুকিয়ে খোসাসহ থেঁতো করে তার মিহিচূর্ণ ঘায়ে লাগালে ঘা যেমন শুকিয়ে যাবে, তেমনি দুর্গন্ধও দূর হবে।

রাসায়নিক উপাদান : ১ . Nut contains : a) Protein, b) Fat, c) Carbohydrates, d) Mineral matter- calcium, phosphorus, iron.

২. Glycerides

৩. Catechin

  1. Arecoline

৫. Arecaidine

৬. Guvacoline

৭. Guvacine

৮. The green kernels contain 67% of Tannin

৯. The huskl contains 47.6% of cellulose

সাধারণ ব্যবহার : সোজা কাণ্ড পিলার, জয়েন্ট, স্কেফল্ডিং, মাচ ধরার জালে খুঁটি ও পানির পাইপ হিসেবে ব্যবহার হয়। কাণ্ড চিড়ে বেড়া, ঢাল, পাটাতন, বর্শার হাতল, আসবাবপত্র ও তীরধণু ইত্যাদিতে ব্যবহার হয়। সুপারি গাছ সুপারির জন্যই প্রসিদ্ধ। সুপারী পানের সাথে ব্যবহার করা হয়। সুপারী চুনের সাথে সিদ্ধ করে কুশা কা ক্যাটেচু তৈরী করা হয় এবং ইহা রং-এর কাজে ব্যবহার হয়। পাতা সিদ্ধ করে ও শুকিয়ে মাদুর, ব্যাগ ও ঘরের ছাউনীতে ব্যবহার হয়। পাতার খোল জ্বালানী, নাতা ও বিবিধ কাজে ব্যবহৃত হয়।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *