পুঁইশাক
পুঁইশাক
প্রচলিত নাম : পুঁই
ইংরেজী নাম : Indian Spinach.
বৈজ্ঞানিক নাম : Basella alba Linn.
পরিবার : Basellaceae
পরিচিতি : কিংবদন্তী আছে ‘পুতিকা ব্রক্ষ্মাঘাতিকা অর্থাৎ পুঁই ভক্ষণকারী ব্রক্ষ্মা হত্যাকারীর সমান। আবার অঞ্জাত তথ্যের দিক থেকে সর্বজনীন প্রবাদ আছে, শাকের মধ্যে পুঁই ও মাছের মধ্যে রুই। বেদ কিংবা উপনিষদে পুঁইশাক সম্বন্ধে খারাপ প্রচারণা থাকলেও চিকিৎসা বিজ্ঞানের অগ্রগতির সাথে সাথে পুঁইশাক সম্পর্কে বিশেষজ্ঞদের আগ্রহ বাড়ছে। পুঁই লতানো উদ্ভিদ। মাচার উপর দিয়ে বেয়ে বেয়ে ৮১০ মিটার পর্যন্ত লম্বা হতে পারে। পুঁই লতা সবুজ এবং দেখতে তাজা। পাতা সবুজ ও পূরু। কচি লতাসহ পাতা শাক হিসেবে সুখাদ্য। লালচে লতার অন্য এক প্রকার পুঁই আছে যার বৈজ্ঞানিক নাম B. rubra আকারে স্বাদে ও গুণে এটি সবুজ পুঁই থেকে আলাদা। বর্ষাকাল শেষে পুঁই এর ফুল ও ফল হয়। থোকায় থোকায় মটর দানার মত সবুজ ফল পাকলে গাঢ় লাল বা কালচে লাল হয়। কাঁচা সবুজ ফল অনেকে সবজি হিসেবে খেয়ে থাকেন।
বিস্তৃতি : পুঁইশাক আমাদের দেশে সর্বত্র জন্মায়। বাংলাদেশের আবহাওয়া পুঁইশাকের জন্য খুবই উপযোগী।
বাংশবিস্তার : বীজ থেকে পুঁই চারা হয়। কাটিং থেকেও চারা গজায়। পুঁই সারাবছরই বাড়ে। একটু বড় হলে মাচা বেঁধে দিলে মাচার উপর বেয়ে বেয়ে বড় হয়। এ গাছ জলাবদ্ধতা সহ্য করতে পারে না। এ কারণে উচু জায়গায় লাগানো উচিত।
ঔষধি ব্যবহার : পুঁইশাক শরীরে ভিটামিন এ, বি, প্রোটিন, ক্যালসিয়াম ও আয়রনের অভাব পুরণ করে। শিশুরা অপুষ্টিতে ভুগলে পুঁইশাক দিয়ে খিচুড়ি রেঁধে নিয়মিত খাওয়ালে অপুষ্টি কেটে যায়। শরীরে রক্তশূণ্যতা দেখা দিলেও পুঁইশাক খুবই কার্যকর একটি পণ্য হতে পারে।
১) বঙ্গসেন-এর প্রাচীন গ্রন্থে উল্লেখ আছে ব্রণ ও টিউমারে পুঁইপাতার রস রেখে ঐ পাতা দিয়ে রেধে রাখলে নিরাময় হয়। কবিরাজ বিজয়কারী ভট্টাচার্যের মতে রক্তবর্ণ পুঁই হলে এক্ষেত্রে ভাল ফল পাওয়া যায়। আর টিউমার ছোট থাকা অবস্থায় লাগালে তাড়াতাড়ি মিলিয়ে যায়।
২) পুঁই পাতা ফোঁড়া পাকানো ও ফাটানোর পক্ষে সহায়ক। এর পাতায় একটু গাওয়া ঘি মাখিয়ে গরম করে ফোঁড়ায় জড়িয়ে দিলে। ফোঁড়া পাকে আবার পাকা ফোঁড়ার ঘা শুকাতেও একই পদ্ধতি।
৩) আগে আমবাত বের হলে চুলকানি নিবারণের জন্য পুইশাকের রস গায়ে মাখা হত।
৪) পুঁইপাতার রসের সাথে ছাগলের দুধ মিশিয়ে ৫/৭ দিন খেলে হুপিং কাশির প্রকোপ কমে যায়।
৫) চরক সংহিতার মতে অর্শ রোগীর অতিরিক্ত স্রাব দেখা দিলে এই শাক, কুল ও ঘোল একসঙ্গে খেতে হয়।
৬) প্রাচীন কবিরাজবৃন্দ পুইশাকের আশ্চর্য শক্তি প্রত্যক্ষ করেছেন পচা ঘা সারাতে। আধা কেজি পুঁই পাতার রসের সাথে ২৫০ মি.লি. সরিষার তেল মিশিয়ে জ্বাল দিয়ে পানি শুকিয়ে নামিয়ে ঠাণ্ডা করে এ তেল দিয়ে খোসপাঁচড়া বা পচা ঘা সারাতেন তারা। এ তেল তৈরী করে ঘরে রেখে দিলে প্রয়োজনে পরে ব্যবহার করা যায়।
৭) পুঁইশাক গনোরিয়া ও লিঙ্গ প্রদাহে খুব উপকারী। এর রস নিয়মিত খেলে শরীরে মূত্রতন্ত্র শক্তিশালী হয়। কোন কারণে প্রস্রাব নিয়মিত না হলে, পুঁইশাক খেলে অনেক সময় সমস্যা কেটে যায়।
৮) পুঁইশাকের ডাটা টুকরো টুকরো করে কেটে শুকিয়ে অল্প আগুনে সেগুলোকে সেঁকে নিতে হবে। এ শুকনো ডাটা নারিকেল তেলের সাথে মিশিয়ে খোস-পাঁচড়ায় মাখালে তা দ্রুত সেরে যায়।
৯) বঙ্গসেন তার গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন, পুঁইপাতার রস একটু গরম করে শিশুদের সর্দিতে ব্যবহার করতে হবে।
১০) গর্ভাবস্থায় ৫/৬ মাসের পর কোষ্ঠকাঠিন্যে পুঁইপাতার রস বিশেষ উপকারী।
রাসায়নিক উপাদান : a) Vitamin A, B b) Protein, c) Inorganic elements viz., calcium, iron. d) Fixed oil.