প্রচলিত নাম : করপত্রাঞ্জলি
ইংরেজী নাম : Sensitive plant, Humble plant.
বৈজ্ঞানিক নাম : Mimosa pudicaLinn
পরিবার : Leguminosae
পরিচিতি : লজ্জাবতী এক প্রকার লতানো খর্বাকৃতি গুল্ম। মাটিতে গড়িয়ে গড়িয়ে বেয়ে যায়। এর গায়ে নীচের দিকে বাঁকা বাঁকা কাটা আছে যার জন্য লজ্জাবতীর ভিতর কোন সরীসৃপ এমনকি সাপও প্রবেশ করতে পারে না। পাতার বোটা ৩/৪ সে.মি. লম্বা হয় এবং এই বোটার প্রান্ত থেকে হাতের চারটি আঙ্গুলের মত বিভিন্ন দৈর্ঘ্যের (দুটি ছোট ও দুটি বড়) চারটি পত্রদন্ত গজায় এবং ১৯-৩৫টি ছোট ছোট পত্ৰক পত্রদণ্ডের দৈর্ঘ্য অনুসারে দুই পাশে গজায়। মজার বিষয় যে, লজ্জাবতীর এই পাতা স্পর্শপ্রবণ। কেউ স্পর্শ করলে ছোট ছোট পত্রকগুলিসহ পত্ৰদণ্ড চারটি একটির সাথে অন্যটি জুড়ে যায়, মনে হয় যেন করজোড় করছে তাই এর অন্য নাম করপত্রাঞ্জলি বা অঞ্জলিকারিমা।
পুষ্পদণ্ড ২-৩ সে.মি. লম্বা হয়। এ দণ্ডের মাথার গোলাকৃতি তুলার মত নরম, হালকা বেগুনী রংয়ের ফুল হয়। তার গিরা থেকে একটি করে পত্রবৃন্ত এবং কখনও এ বৃন্তের গোড়া থেকে পুষ্পদণ্ড বের হয়। ফুল ও ফল বেশী হয়। পরিদর্শনকালে প্রতি পুষ্পদণ্ডের মাথায় ১৪২০টি করে ফল/শুটি এবং প্রতি শুটিতে ২/৩টি করে বীজ পাওয়া গেছে। শুটির দুই প্রান্ত ঘিরে ছোট ছোট নরম কাটা থাকে। বীজ পাকলে খয়েরী রং ধারন করে।
বিস্তৃতি : বাংলাদেশের প্রতি জেলার উঁচুভূমিতে প্রায় সবধরনের মাটিতে লজ্জাবতী জন্মে। তবে গড়ে পাহাড়ী এলাকার মাটিতে এ প্রজাতির উদ্ভিদ অধিক জন্মে। আগাছা হিসেবে বনভূমির উন্মুক্ত প্রান্তিক এলাকায় প্রচুর লজ্জাবতী দেখা যায়।
বংশবিস্তার : মূলত বীজ দ্বারা এ প্রজাতির উদ্ভিদের বংশবিস্তার হলেও অঙ্গজভাবেও এর বংশ বিস্তার সম্ভব।
ব্যবহার্য অংশ : মূল, কাণ্ড, পাতা, ফুল ও বীজ
ঔষধি ব্যবহার :
১. দাঁতের মাড়ির ক্ষতে : পাতাসহ উঁটা ১০/১২ গ্রাম নিয়ে, ক্বাথ তৈরি করে, ১০/১৫ মিনিট সময় ধরে মুখে ধারন করতে হবে। এভাবে প্রতিদিন ২ বা ৩ বার।
২. সাদা আমাশয় : সাদা আমাশয়ে লজ্জাবতীর পাতাসহ ভঁটা ১০ গ্রাম, ১ গ্লাস পানিতে সিদ্ধ করে খেতে হবে সকাল-সন্ধ্যায়। ২/৩ দিনে না সারলে অবশ্যই অভিজ্ঞ বা পাশ করা কোন চিকিৎসকের নিকট যেতে হবে ।
৩) অর্শরোগে : অর্শের বলি জ্বালাপোড়া করলে, মূলসহ গাছ ১০ গ্রাম + দুধ ১ কাপ +জল ৩ কাপ একত্রে সিদ্ধ করে যখন এক কাপে আসবে, তখন ছেঁকে নিয়ে সকাল-বিকেল খেতে হবে।
৪. যে কোন কারণেই যোনিপথে ক্ষত হোক না কেন, সেক্ষত্রে দুধ জলের সাথে লজ্জাবতীর ক্বাথ করে খেতে হবে, ২ বার। খাবার পর একইসাথে লজ্জাবতীর ক্বাথ দিয়ে ডুশ দিলে বা যোনিপথ ধুলে তাড়াতাড়ি ক্ষত সেরে যায়।
৫. পিত্ত বিকার : অনেক সময় জ্বরের সময় জ্বরের সাথে হাত-পা জ্বালা করে। সাধারণতঃ এটা বর্ষা ও শরৎ কালে পিত্ত বিস্তারের ফলে দেখা যায়। এক্ষেত্রে সমগ্র গাছটিকে ক্বাথ করে খেলে ঋতুগত পিত্ত বিকার উপশম হয়।
৬) কানে ব্যথা : লজ্জাবতী গাছের সিদ্ধ কৃাথ তৈল দ্বারা পাক করে কানে ব্যবহার করলে কানে পুঁজ পড়া বন্ধ হয়।
৭) লজ্জাবতী সম্পূর্ণ গাছের (মূল, কাণ্ড, পাতা, ফুল ও ফল) কৃাথ ও চিনি একত্রে মিশিয়ে খাওয়ালে অর্শ, আমাশয় ও কলেরা দ্রুত নিরাময় হয়।
৮) ইহার শিকড়ের ক্বাথ পাথুরী রোগে ব্যবহৃত হয়।
৯) ইহার পাতা মিহি করে বেটে এক পোয়া আন্দাজ দুধের সাথে মিশিয়ে হেঁকে নিয়ে একটানা পক্ষকাল খেলে দূষিত ক্ষত ভাল হয়।
১০. দাঁতের মাড়ির ক্ষতে গাছ ও পাতার ক্বাথ উপকার দেয়।
১১. অনেকের বগলতলা ঘেমে জামা ও গেঞ্জিতে হলদে দাগ লাগে। এক্ষেত্রে গাছের ক্বাথ দ্বারা শরীর ও বগল মুছে ফেললে এ দোষ চলে যায়।
১২. রক্ত পরিস্কারক হিসাবে লজ্জাবতীর ব্যবহার আছে। তাই ইহা প্লেগ রোগের একমাত্র মহৌষধ।
১৩) লজ্জাবতীর মূল নিয়মিত খেলে জন্মনিয়ন্ত্রক হিসাবে কাজ করে।
১৪. অনেকের মল গুলটে হয়ে যায়, বুলেটের মত কয়েকটা বের হয়, আর কিছুই নেই, এক্ষেত্রে ৭/৮ গ্রাম লজ্জাবতীর মূল থেতো করে ৪ কাপ পানিতে সিদ্ধ করে ১ কাপ থাকতে নামিয়ে ছেঁকে নিতে হবে। এভাবে প্রাপ্ত ক্বাথ খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হবে ।
১৫. কানে পূজ হলে লজ্জাবতী গাছ সিদ্ধ করে, ঐ ক্বাথে তেলে পাক করে, সেই তেলের ফোঁটা কানে দিলে পুঁজপড়া বন্ধ হবে এবং ক্ষত সেরে যাবে।
১৬) মিথুন দণ্ডের শৈথিল্যে লজ্জাবতীর বীজ দিয়ে তৈরী তেল লাগিয়ে আস্তে আস্তে মালিশ করলে তা দৃঢ় হয়।
১৭. পুরানো ঘায়ে মাংস পচে ক্ষয়ে যাচ্ছে, এক্ষেত্রে লজ্জাবতীর ক্বাথ একটু ঘন করে দিয়ে ৩/৪ বার কয়েকদিন ব্যবহার করলে ঘায়ের পচা অংশ থাকবে না এবং পূজও হবে না।
রাসায়নিক উপাদান : a) Alkaloids viz. mimosine, b) Steroidal, Components, c) Waxy material, d) Crocetin dimethyle ethes tannin, e) Mucilage, f) Faty acids