গোলাপজাম গাছ
প্রচলিত নাম : গোলাপজাম
ইংরেজী নাম : Rose Apple, Gulab Jamun
বৈজ্ঞানিক নাম : Syzygum jambos (Linn.) Alston.
পরিবার : Myrtaceae
পরিচিতি : গোলাপজাম মাঝারী আকারের চিরসবুজ গাছ। পাতা সরু লম্বা বল্লমাকৃতির, ১১-২০X ২-৫ সে. মি., পত্র শীর্ষ ক্রমশ সরু ও শাখা শিরা ১০-১২টি। বাকল ধূসর বর্ণের। ফুল প্রান্তিক রেসিমের মতো সাইম। ফল বেরি, ৩ সে. মি. লম্বা পাকলে সাদা হয়।
বিস্তৃতি : বিজ্ঞানীগণ অনুমান করেন দক্ষিণ এশিয়াতে ফলটি জন্মলাভ করেছে। আরও সুনির্দিষ্টভাবে ভারত ও মালয়েশিয়া গাছটির জন্মস্থান। পৃথিবীর গ্রীষ্মমণ্ডলীয় আবহাওয়াযুক্ত সব দেশেই এই গাছটি হতে দেখা যায়। তবে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াতে তাজা ও ছোটফল হিসেবে এর বিশেষ সমাদর রয়েছে। ফলটি যথেষ্ট পরিমাণে বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলে উৎপন্ন হতে দেখা যায় ।
ফুল ফোটার সময় : ফেব্রুয়ারী-মার্চ।
বীজ সংগ্রহ : এপ্রিল-মে।
মাটি ও জলবায়ু : গোলাপ জাম গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ফল হলেও কিছুটা শুকনো জলহাওয়া সহ্য করতে পারে। পাহাড়ের উপর ১৩০০ মি. উচ্চতায় গাছটি হতে দেখা যায়। অতিরিক্ত ঠাণ্ডা বা গরম ও শুকনো জলবায়ু গাছটির পক্ষে প্রতিকুল। যে কোন মাটিতেই গোলাপজাম গাছ হতে পারে, তবে হালকা মাটি সব থেকে ভাল । বেলে বা বেলে দোআঁশ মাটিতে উৎকৃষ্ট গাছ ও ফলন হতে দেখা যায়। গাছটি জলবসা মাটি সহ্য করতে পারে না ।
চারা তৈরী ও রোপণ : বীজ থেকেই চারা তৈরী করা হয়। তবে অঙ্গজ বংশবিস্তার পদ্ধতিও অনুসরণ করা হয়। বীজ বহুভ্রণযুক্ত হওয়ায়, প্রতিটি বীজ থেকে একাধিক চারা উৎপন্ন হয়। এছাড়া গুটি ও জোড়া কলম করেও বংশবিস্তার করা হয়। জুলাই-আগস্ট মাসে বীজতলা তৈরী করে ২০-২৫ সে.মি. দূরে দূরে ২-৩ সে.মি. মাটির নিচে, সারিতে বীজ বপন করা হয়। চারা বেরোনোর ২ বছর পর ৫-৬ মি. দূরত্বে বর্ষার আগেই চারাগুলো মূল জমিতে রোপণ করা হয়। অঙ্গজ বিভাজনের মাধ্যমে চারা তৈরী করলে জুলাই মাসে অঙ্গজ বিভাজন করে, সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসে মূলগাছ থেকে চারাগুলি আলাদা করে বীজতলায় বসান হয়। পরের বছর চারাগুলি মূল জমিতে রোপণ করা হয়।
সার ও সেচ প্রয়োগ : গোলাপজাম গাছে সার ও সেচ প্রয়োগ করার কোন সুপরিশ পাওয়া যায় না। তবে চারা লাগানোর পর বৃষ্টি না হলে কিছুদিন হালকা সেচ দেওয়া দরকার। ফলন্ত গাছে জানুয়ারী-ফেব্রুয়ারী মাসে প্রয়োজনমত জৈব সার বা খৈইল প্রয়োগ করা হয় ।
ফল সংগ্রহ ও ফলন : কলমের গাছে ৩-৪ বছরে বীজের গাছে ৮-১০ বছরে ফল ধরে। ফেব্রুয়ারী-মার্চ মাসে গাছে ফুল আসে ও মে-জুন। মাসে ফল পাকতে আরম্ভ করে। ফল অল্প সময়ের মধ্যেই শেষ হয়ে যায়। ফলগুলি ফিকে হলুদ বা গোলাপি আভাযুক্ত হালকা সবুজ রং এর হতে পারে। ফলের ব্যাস ৪-৫ সে. মি. হতে দেখা যায় এবং ফলগুলি গোলাকার। গাছে প্রতি বছর ২৫-৫০ কেজি পর্যন্ত ফলন পাওয়া যায়।
সাধারণ ব্যবহার : কাঠ সাদা বর্ণের, শক্ত, দৃঢ় ও ভারী। ভাল পালিশ নেয় না। তবে গৃহনির্মাণ কাজে খুঁটি ও জ্বালানী হিসেবে ব্যবহৃত হয় । ফল সুপাদেয় ও গোলাপের গন্ধ পাওয়া যায়। ফল থেকে জেলি ও জ্যাম তৈরী হয়।