শিমূল তুলা গাছ
প্রচলিত নাম : তুলা, শাল্মলী।
ইংরেজী নাম : Red Silk Cotton Tree
বৈজ্ঞানকি নাম : Bombax ceiba Linn.
পরিবার : Bombacaceae
পরিচিতি : শিমূল একটি পাতাঝরা বড় বৃক্ষ, ১৫-২০ মিটার পর্যন্ত উঁচু হয়। শাখা-প্রশাখা কম, সরল এবং বৃত্তাকার চারিদিকে বিস্তৃত। বড় গাছের অধিমূল হয়। গাছের গায়ে বহু কাঁটা হয়। এগুলোর অগ্রভাগ সরু ও তীক্ষ্ম এবং গোড়াটা বেশ মোটা। শিমূলের পাতার গঠন এমন যেন একটি লম্বা বোঁটায় ছড়ানো হাতের পাঞ্জা। পলাশের মত শিমূলেরও শীতের শেষে পাতা ঝরে যায়। ফাল্গন মাসে ফুলের কুঁড়ি আসে এবং চৈত্র মাসে বড় ও উজ্জ্বল লাল রংয়ের ফুল ফোটে। তখন মনে হয় যেন গাছে গাছে আগুন লেগেছে। ফুলের বৃতি মোটা ও মখমলের ন্যায় নরম। ফুলে এক ধরনের স্বাদু তরল পদার্থ সঞ্চিত থাকে, তাই পাখিরা পিপাসা মোটাবার জন্য শিমুল গাছে ভিড় করে। তারপর মোচাকৃতি ফল হয় যা পাকে এপ্রিল মাসে। ফলগুলি গাছ থেকে ভেঙ্গে না নিলে ওটা আপনাআপনি ফেটে গিয়ে তুলো ও বীজ বেরিয়ে যায়।
বিস্তৃতি : বাংলাদেশের প্রায় সর্বত্র শিমুল গাছ দেখা যায়। বেলে-দোঁ-আঁশ বা নতুন মাটিতে এ গাছ ভাল জন্মে।
বীজ সংগ্রহ সময় : এপ্রিশ (বৈশাখ)
বীজের ওজন : প্রতি কেজিতে ২১,৫০০-৩৮,৫০০টি।
বীজ আহরণ ও চারা উত্তোলন : পাকা ফল গাছ থেকে সংগ্রহ করে রোদে শুকিয়ে তুলা থেকে বীজ আলাদা করে নর্সারী বেডে বীজ বপন করতেহয়। বীজের অংকুরোদগম হার শতকরা ৭৫ ভাগ এবং তা ১৫-২০ দিনে গজায়। তবে বীজ শুকনো পাত্রে ৬ থেকে ১২ মাস সংরক্ষণ করা যায়।
সাধারণ ব্যবহার : কাঠ নরম, পীতাভ, হালকা ও ভঙ্গুর। ওজন ৪০০ কেজি/ঘন মিটার। কাঠ প্যাকিং বাক্স, দিয়াশলাই ও প্লাইউড উৎপাদনে ব্যবহৃত হয়। কাগজের মণ্ড তৈরীতেও ব্যবহার করা যায় । শিমুলের ফল থেকে তুলা পাওয়া যায় । শিমুলের বীজ থেকে তেল পাওয়া যায়। শিমুল গাছের কাণ্ডে এক প্রকার আঠা পাওয়া যায়। এই আঠা ও কচি শিমূল গাছের শিকড় কবিরাজী ঔষধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এছাড়া কাঠ খেলনা, পেন্সিল, ডোঙ্গা, তক্তা, কফিন ও ড্রাম ইত্যাদিতে ব্যবহৃত হয়।
ঔষধি ব্যবহার :
১. ছোটদের মূত্রহীনতা : নানা কারণে ছোট ছেলেমেয়েদের এ রোগ দেখা দিতে পারে। শিমূল গাছের কাণ্ড থেকে যে আঠা বের হয়, ছোটদের মূত্রহীনতায় একটি চমৎকার ঔষধ বলা চলে।
২. বহুমূত্রে : শিমূল গাছের মূলে দশ মিলিলিটার রস রোজ সকালে খেলে উপকার পাওয়া যায়। এখানে একটা বিষয় মনে রাখতে হবে, বহুমূত্র কোনদিন সারে না। সতর্কতা অবলম্বন এবং খাদ্য গ্রহণে নিয়মানুবর্তী হলে রোগ বাড়বে না এবং শরীরও ঠিক থাকবে।
৩. গণোরিয়া : শ্বেত শিমূলের ৩০/৩৫ গ্রাম টাটকা কচি পাতা তুলে এনে, সামান্য পানি দিয়ে বেটে, তার ২০ থেকে ২৪
মিলিলিটার রস রোজ সকালে খালি পেটে একবার করে খেলে আরাম বোধ হবে। তবে নিয়মিত কয়েকদিন ধৈর্য সহকারে
খাওয়া দরকার।
৪. পোড়া ঘায়ে : শরীরে কোথাও পুড়ে ফোস্কা পড়লে এবং সে ফোস্কা গলে গেলে ঘায়ের সৃষ্টি হয়। পোড়া ঘা সহজে শুকাতে চায় না। শ্বেত শিমূল গাছের গুঁড়ি থেকে যে রস বের হয়, তা ২ গ্রাম এবং সমপরিমাণ শিমূল তুলো, সামান্য পানি দিয়ে বেটে, কয়েকদিন ঘায়ের ওপর প্রলেপ দিলে খুব তাড়াতাড়ি ঘা শুকিয়ে যায় এবং যন্ত্রণাও চলে যায়। তবে প্রতিদিন গোসলের সময় ঘায়ে যেন পানি না লাগে সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে।
৫. সর্বাঙ্গীন শোথ : শোথ অর্থ ফুলে যাওয়া। এটা লিভারের দোষ কিংবা শরীরে রক্তহীনতায় হতে পারে। যে কোন কারণে হাত,পা, চোখ ও মুখ ফুলে গেলে, ছোট শিমূলের মূল প্রয়োগ করলে যাদুর মতো সুফল পাওয়া যায়।
৬. যন্ত্রণায় : শরীরে কোন অঙ্গে আঘাত লেগে গেলে যন্ত্রণা দূর করতে কঁচা ফল সামান্য পানি দিয়ে বেটে ঐ জায়গায় প্রলেপ লাগিয়ে কাপড় দিয়ে বেঁধে দিতে হবে। কয়েকদিন রোজ সকালে একবার করে লাগালেই ফুলো ও যন্ত্রণা দুটোতেই সুফল পাওয়া যাবে।।
৭. কাঁকড়া, বিছা কামড়ালে : শিমুল গাছের টাটকা মূল, অল্প পানি দিয়ে বেটে, বিছার কামড়ের জায়গায় প্রলেপ দিলে বিষ নষ্ট হয়ে বেহ যাবে এবং ধীরে ধীরে ফুলা ও যন্ত্রণা চলে যায়।
৮. রক্তামাশায় : এটা মাঝে মাঝে হয়, আবার ওষুধ খেলে বন্ধও হয়ে যায় । কিন্তু হঠাৎ দেখা গেলো আমও যেমন রক্তও তেমন, এক্ষেত্রে এক গ্রাম বা দেড় গ্রাম মাত্রায় মোচরনের গুঁড়ো দুবেলা ছাগল দুধ অথবা জলসহ খেতে হয়। এর দ্বারা এক/দুদিনের মধ্যেই রক্তপড়া তো বন্ধ হবেই, আমাশাও উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যাবে।
৯. আমাশার মোচড়ানিতে : যেন প্রাণ যায়, কিন্তু দাস্তের নাম নেই। সেক্ষেত্রে শিমূলের পাতার উঁটা ১০/১৫ গ্রাম এক দেড় ইঞ্চি করে কেটে, থেঁতো করে এক/দেড় কাপ গরম জলে ভিজিয়ে আধ ঘন্টা বাদে ওটাকে চটকে নিয়ে, ঘেঁকে ঐ জলটা একটু মিছরি মিশিয়ে খেলে দাস্ত পরিস্কারও হয়ে যাবে আর মোচড়ানি ব্যথাও থাকবে না।
১০. পুরনো কাশিতে (ক্রনিক কাশি) : এরা কেশে যাচ্ছে, কিন্তু বিশেষ কিছু উঠছে না মনে হচ্ছে গলাটায় এখনও কিছু আটকে আছে, আর যদিও একটু বেরুলো, সেটা যেন পাকা তালশাসের টুকরো। এক্ষেত্রে এখানে মোচরসের গুঁড়ো ৮০০ মিলিগ্রাম মাত্রায় দুবার জলসহ খেতে হবে; তবে যদি বাসকপাতার রস ৪ চা-চামচ একটু গরম করে হেঁকে নিয়ে, সেই রসটাকেসহ পান করা যায়, তা হলে আর কাশি নেই, তবে দুবেলা বাসক পাতার রস না খেলেও চলে।
১১. অপুষ্টিজনিত কৃপায় : এটা দেখা যায় গরীবের ঘরে। এদের মা যম্ভীর কৃপার অভাব নেই, তারই পরিণতিতে এই অপুষ্টি। এদের হাত-পা হয় নুলো অথচ পেটটা বড়। এদের ৪০০ মিলিগ্রাম (৩ রতি/গ্রেন) মাত্রায় মোচরসের গুড়ো যদি আধ কাপ দুধে মিশিয়ে প্রত্যহ খাওয়ানো যায়, তা হলে এ অপুষ্টি আংশিক পূরণ হবে।
১২. প্লীহার ব্যথায় : অনেকদিন থেকে ভাল হজম হচ্ছে না মাঝে মাঝে আমাশায়ও হয়, এদের নোনতা (লবনাস্বাদ) জিনিসে বেশী আসক্তি। পেটে ব্যথা হচ্ছে কিন্তু ঠিক করা যাচ্ছে না, এটা কিসের ব্যথা। এক্ষেত্রে শিমুল ফুলের কুঁড়ি শুকনো হলে পাঁচ গ্রাম আর কাঁচা হলে ১০ গ্রাম ৩ কাপ জলে সিদ্ধ করে এক কাপ থাকতে নামিয়ে, ছেকে প্রত্যহ একবার খেতে হবে। এটাতে ঐ প্লীহার ব্যথাটা চলে যায়।
১৩. লোম ফেঁড়ায় : লোমকূপের গোড়া থেকেই এগুলো ওঠে, এর জ্বালাও কম নয়, এক্ষেত্রে শিমুল ছাল বেটে, ঐসব জায়গায় | লাগিয়ে দিলে ২/৩ দিনের মধ্যেই ওর জ্বালাও চলে যাবে, ফোড়াও সেরে যাবে।
১৪. অর্শ রোগ : শিমুল ফুল (শুস্ক) ৫ গ্রাম পোস্ত দানা ৩ গ্রাম, ছাগল দুধ আধ কাপ আর জল ৩ কাপ একসঙ্গে সিদ্ধ করে এক কাপ থাকতে নামিয়ে একটু হলে চটকে ঘেঁকে ওটাকে সকালে-বিকালে দিনে দুবার খেলে অর্শের উপশম হয়।
১৫. যৌবনে শুক্রাল্পতায় ৮/১০ গ্রাম কচি শিমূল মুল একটু চিনি দিয়ে দুই বেলা খেলে অসুবিধা সেরে যাবে।
১৬. প্রৌঢ়ে যৌন সংসর্গে অপ্রতিভ হলে কচি শিমূল মূল চাকা চাকা করে কেটে শুকিয়ে গুঁড়া করে দুই গ্রাম আন্দাজ গুঁড়া এক কাপ | গরম দুধে মিশিয়ে খেতে হবে তাহলে ঐ অসুবিধা দূর হবে।
১৭. মহিলাদের প্রদর রোগে শিমুল ফুল গাওয়া ঘিয়ে ভেজে নামানোর আগে একটু সৈন্ধব লবন ছড়িয়ে দিয়ে নামিয়ে তার থেকে ২ গ্রাম আন্দাজ দিনে ২ বার কর খেলে ওটা সেরে যাবে।
১৮. শিশুদের দাস্ত পরিস্কার না হলে এক বা দেড় গ্রাম শুল্ক ফুল সেদ্ধ করে চটকে, ঘেঁকে নিয়ে খাওয়ালে কোষ্টকাঠিন্য সেরে যায়।
রাসায়নিক উপাদান : a) Catechutannic acid, b) Fatty matter, c) Stearin, d) Proteins, e) Semul red,
- f) Tannins, g) Arabinose, h) Galactose, i) Pectous matter, j) Starch, k) Mucilage, L) Lipids viz.
- m) phosphatides n) Cephaelin