পশুর গাছ
প্রচলিত নাম : পশুর
ইংরেজী নাম : The Puzzle Fruit Tree
বৈজ্ঞানিক নাম : Xylocarpus mekongensis Pierre
পরিবার : Meliaceae
পরিচিতি : মাঝারী আকারের চিরসবুজ সুন্দরবনের গাছ। ১০-১৫ মিঃ উচু হয়ে থাকে। পাতা গাঢ় সবুজ বর্ণের, মসৃণ ও উজ্জ্বল। লম্বায় ৮-১২ সে. মি. পর্যন্ত হয়ে থাকে। ফল বড় আকারের হয় এবং কাঁচা অবস্থায় ১-২ কেজি ওজনের হয়ে থাকে। একটি ফলে ৮-১০টি বীজ হয়। গাছের শিকড় থেকে প্রচুর শক্ত শ্বাস মূল গজিয়ে থাকে। এর বাকল অমসৃণ, গাঢ় বাদামী বিদীর্ণ এবং সরু ফালিতে ছড়ানো । অধঃমূল অনুপস্থিত কিংবা থাকলেও খুব খাটো। সমান্তরাল মূল থেকে অনধিক ২০ সেন্টিমিটার উচ্চতার ভোঁতা শ্বাসমূল বের হতে দেখা যায়।
এটি প্রধানতঃ ম্যানগ্রোভ বনের ভিতরের দিকে জন্মে। শীতকালে পাতা আংশিক পড়ে যায়। পাতা যৌগিক, সবুজ অনুফলকগুলির শীর্ষ ভোঁতা এবং সাধারণতঃ সংখ্যায় ৬টি থাকে। পুষ্প মঞ্জুরীর দৈর্ঘ্য ৮ সেন্টিমিটার বা ততোধিক হয় এবং একলিঙ্গ বিশিষ্ট ফুলগুলো পার্শ্বীয় প্রতিসম। ফুল গ্রীষ্মকালে ফোটে। ফল ছোট, অনেকটা কমলালেবুর আকৃতির, ব্যাস অনধিক ১২ সেন্টিমিটার। জুন-জুলাই মাস বীজ সংগ্রহের জন্য উপযুক্ত সময়। অঙ্কুরোদগম মৃৎগত।
পশুর বেশী লবনাক্ত (Strongly saline Zone) ও মাঝারী লবণাক্ত অঞ্চলের (Moderately saline zone) তুলনামুলকভাবে নীচু এলাকায় ভাল জন্মে। এ প্রজাতিটি সুন্দরবনের সমগ্র এলাকায় বিস্তৃত নয়। বিশেষ করে ৩২, ৩৩, ৩৪, ৩৭ ও ৩৮ নং কম্পার্টমেন্টে প্রচুর দেখা যায়। পশুর একটি মূল্যবান গাছ ও উহার গুরুত্ব সুন্দরীর ঠিক পরেই। লাল রং-এর শক্ত কাঠ ঘরবাড়ী নির্মাণ, খুঁটি, আসবাবপত্র তক্তা, নৌকা, নির্মাণে ব্যবহৃত হয়। সুন্দরবনে পশুর গাছের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে। পশুর মাঝারি ধরনের আলো পছন্দকারী গাছ এবং তাই যেখানে গাছের মুকুট তুলনামূলকভাবে খোলামেলা এবং ঘন নয় সেরূপ এলাকা পশুরের বংশ বিস্তার ও বাগান উত্তোলনের জন্য উপযুক্ত। বর্তমানে সুন্দরবনে বিভিন্ন এলাকায় সীমিতভাবে নার্সারীতে চারা উত্তোলন করে নদী বা খালের ধারে খালি ও ছায়া জায়গায় পশুর চারা লাগানো হচ্ছে। উপকূলীয় অঞ্চলের বাগানে বা নূতন চরে পশুর লাগানো উপযোগী নহে।
বিস্তৃতি : সুন্দরবন।
বীজ সংগ্রহ : জুন-জুলাই।
বীজের ওজন : কেজিতে ১০০-১২৫টি।
বীজ সংগ্রহ : জুন-জুলাই মাসে পরিপক্ক ফল মাটিতে পড়লে সংগ্রহ করা হয়। একটি ফলে ৮-১০টি বীজ থাকে। ১ কেজিতে ৭৫-১২৫টি বীজ হয়। সংগৃহীত ফল স্তুপাকারে রেখে দিলে ৭-১০ দিন পর খোসা পচে যায় এবং তখন পানিতে ধুয়ে বীজ সংগ্রহ করা যায় ।
চারা উত্তোলন : পশুর বাইন নার্সারীর মতো নার্সারী বেডে ও পলিব্যাগে উত্তোলন করা যায়। সংগৃহিত বীজ নার্সারীতে ও পলিব্যাগে ডিবলিং পদ্ধতিতে বপন করা হয়। কোন কোন ক্ষেত্রে নার্সারী বেডে ছিটিয়েও বীজ বপন করা হয়। বীজ বপনের ২ সপ্তাহ পর অঙ্কুরোদগম শুরু হয় এবং ১২ সপ্তাহের মধ্যে প্রায় ৭৫% বীজ অঙ্কুরিত হয়। ১০ মাসের মধ্যে চারার উচ্চতা প্রায় ৭০-৯০ সে. মি. হয়। পশুর চারা আলো পছন্দকারী বিধায় কোন ছায়াচালা প্রদান করার দরকার হয় না। অন্যান্য পরিচর্যা সাধারণ নিয়মে করতে হয়।
বাগান সৃজন : সাধারণতঃ তুলনামূলকভাবে উঁচু জায়গায় নোটামুটি লবনাক্ত অঞ্চল পশুরের উত্তম জায়গা। সুন্দরবনের কোন কোন এলাকায় খালের পাড়ের খালি স্থানে পশুর লাগানো যায়। পশুর চারা সুন্দরবনে সাধারণতঃ বন থেকে সংগ্রহ করা হয়। সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসে ২-৩ মাস বয়সের চারা (৩০-৪০ সে. মি.) নগ্নশিকড় অবস্থায় উঠিয়ে এনে কেওড়া চারার মতো সরাসরি মাঠে ৮ x ৮ দূরত্বে লাগানো হয় এবং এ পদ্ধতিতে জীবিত হয় ১০%-২০%। নার্সারী বেড হতে মাটির বলসহ চারা বা পলিব্যাগ হতে ১০ মাস বয়সের চারা (৭০-৯০ সে. মি.) এপ্রিল-মে মাসে লাগানো হয় এবং এতে জীবিতের হার তুলনামূলকভাবে অনেক বেশী হয়। পলিব্যাগে চারা লাগালে জীবিত হার প্রায় ৯০% পর্যন্ত হয়। গবেষণার মাধ্যমে দেখা গেছে পলিব্যাগ নার্সারী করে পশুর বাগান সৃজন করার বিরাট সুযোগ সুন্দরবনে আছে। বাগানে চারার পরিচর্যার অন্যান্য প্রজাতির মতো। চারা গাছ হরিণের উপদ্রব থেকে রক্ষা করার জন্য গাছের ছোট ঢালা বা কাঁটা দিয়ে ঘেরাবেড়া দিলে উত্তম।
সাধারণ ব্যবহার : কাঠ লাল বর্ণের, নোটামুটি শক্ত, দৃঢ় ও টেকসই। এ কাঠ খুবই মূল্যবান। গৃহ নির্মাণ, আসবাবপত্র, খুঁটি, তক্তা, চাকার স্পোক, দরজা-জানালা নির্মানে কাঠ ব্যবহৃত হয়।