পলাশ গাছ
প্রচলিত নাম : পলাশ ইংরেজী নাম : Parrot Tree (The flame of the forest)
বৈজ্ঞানিক নাম : Butea monosperma Kuntz.
পরিবার। : Leguminosae S.F. papilionaceae
পরিচিতি : পলাশ মঝারি আকারের পত্রঝরা বৃক্ষ। সাধারণতঃ ৮-১০ মিটার পর্যন্ত উঁচু হয়। গাছের গোড়ার বাকল ফাটা হলেও আঁকাবাকা শাখা-প্রশাখার বাকল মসৃণ। একটি বোটায় তিনটি পাতা থাকে এবং আকারে অবিকল পারিজাত বা মাদার পাতার বড় সংস্করণ। পলাশের একটি বৈশিষ্ট্য হলো যে, ফাল্গুনে গাছের পাতা ঝরে যায় আর তখনই গাছে কুঁড়ি আসে। চৈত্রে যখন সারাগাছে কমলা বা লাল রংয়ের ফুল ফোটে তখন সেই অগ্নিকান্তি রূপ দেখে মনে হয় যেন আগুন লেগেছে। ফুলের কুঁড়ি দেখতে অনেকটা বাঘের নখের মত এবং ফুলের গঠন অনেকটা বক ফুলের মত। এ ফুলের বৃতি ভেলভেটের মত লোমশ এবং নরম। পলাশ ফল ছোট শিমের মত, ২-৪ সে. মি. পর্যন্ত লম্বা হয়।
বিস্তৃতি : বাংলাদেশের প্রায় সর্বত্রই পলাশ গাছ বিক্ষিপ্তভাবে বিশেষ করে রাস্তার পাশে দেখা যায়। প্রকৃতপক্ষে, পলাশ শাল ফরেস্টের একটি সহযোগী প্রজাতি। তবে এ গাছ লোনা ও জলাবদ্ধ জায়গায় জন্মাতে পারে না।
ফুল ফোটার সময় : ফেব্রুয়ারী
বীজ সংগ্রহ সময় : জুন-জুলাই
বীজের ওজন : কেজিতে ৫,০০০-১০,০০০টি।
বীজ সংগ্রহ ও চারা উত্তোলন : পাকা ফল (শিম) সংগ্রহ করে রোদে শুকিয়ে বীজ আহরণ করা হয়। এই বীজ বীজতলায় বপন করলে ১৫-২০ দিনের মধ্যে গজায়, অংকুরোদগমের হার শতকরা ৭৫-১০০ ভাগ। তবে বীজ বেশীদিন সংরক্ষণ করা যয় না। বাংলাদেশের প্রায় সব বড় বড় নার্সারিতে পলাশের চারা পাওয়া যায়।
ওষুধি ব্যবহার :
১) অনেকের খাওয়াটা একটু এদিক ওদিক হলেই পেটে নানা ধরনের সমস্যা দেখা যায়। এক্ষেত্রে এক চা চামচ পলাশ পাতার রস ৭/৮ চা চামচ পানি মিশিয়ে সকাল-বিকাল দুইবার খেলে পেটের অবস্থা ভাল হয়ে যায় ।
২) ফিতা বা সূতা ক্রিমির উপদ্রবে এক চামচ ছালের রসের সাথে আধা কাপ পানি মিশিয়ে অথবা এক গ্রাম বীজচুর্ণ পানিসহ প্রত্যহ সকালে খেলে যে কোন ক্রিমির উপদ্রব কমে যাবে।
৩) শুক্রতারল্যে পলাশের গন ঘিয়ে ভেজে গুঁড়ো করে এক গ্রাম সকাল-বিকাল ৩/৪ সপ্তাহ একনাগাড়ে খেলে অসুবিধা নিশ্চয়ই দুর হবে। কোষ্টকাঠিন্য হলে এক চামচ ইসবগুলের ভুষি মিশিয়ে খেতে হবে।
৪) অনেকের বারবার প্রস্রাবে যেতে হয়, আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে একে বলে সোমরোগ। এক্ষেত্রে পলাশ পাতার এক চামচ রস ৭/৮ চামচ পানি মিশিয়ে সকাল-বিকাল খেলে উপকার পাওয়া যায়।
৫) অনেকের রাতে ঘুমের মধ্যে খুব ঘামেন। আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে মতে শুক্রবহ স্রোত দূষিত হয়ে শুক্রতারল্য ও তার ক্ষয় হয়ে যাওয়াতে এটা আসে। আর এটা আসে পাশ্চাত্য চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের মতে নাড়ী প্রদাহ হতেই এটা হয় আর এটা আসে ঘুমন্ত অবস্থায়। এক্ষেত্রে ২ চামচ পলাশ পাতার গরম রস ৭/৮ চামচ পানির সাথে মিশিয়ে সকাল-বিকাল দুইবার খেলে ৩/৪ দিনের মধ্যেই নিশাঘর্ম উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যায়।
৬) খাওয়া-দাওয়া ভাল কিন্তু দেহের কান্তি বা লাবন্য নেই, সেক্ষেত্রে তিনটি কচি পাতার রস ৭/৮ চামচ পানিতে মিশিয়ে খেলে রসবহ স্রোত পরিস্কার হয়ে ত্বকের স্বাভাবিক ক্রিয়া হতে থাকলেই দেহে লাবন্য ফিরে আসবে।
৭) যে কোন রকম বিছায় কামড়ালে পলাশ বীজ আকন্দের আঠার সাথে বেটে সেখানে লাগালে উপশম হয়।
৮) হাইড্রেসিল বা একশিরা হলে একাদশী আমাবস্যা বা পূর্ণিমায় টনটন করে ব্যথা হয় আবার জ্বরও হয়, এক্ষেত্রে ৫০ গ্রাম পলাশ ফুল অল্প পানিতে সেদ্ধ করে হালকা গরম অবস্থায় ফুলগুলিকে এর চারিধারে লাগায়ে কয়েক ঘন্টা রেখে ছড়িয়ে ফেলতে হবে। এভাবে ২/৩ দিন পরপর ২/১ বার লাগালে Testis-এর কলেবরটি কমে যাবে।
রাসায়নিক উপাদান : হলুদ স্বাদহীন তৈল (A Yellow tastless oil) প্রটোলাইটিক এনজাইম (Protolytic enzyme), বিউটেইন (Butein), বিউটিন (Butin)
সাধারণ ব্যবহার : কাঠের রং সাদা অথবা বাদামী। কাঠ নিম্নমানের তবে পানিতে টেকে। কাঠ থেকে ভাল কাঠ কয়লা তৈরী হয়। পলাশ গাছ প্রধানতঃ লাক্ষা চাষে ব্যবহৃত হয়। পাতা গরু মহিষের খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়। বাকল ও শিকড়ের আঁশ দড়ি ও রশি তৈরীতে ব্যবহৃত হয়। নোনামাটি সংস্কারেও এ গাছ ব্যবহৃত হয়। বাকলের আঠাকে বেঙ্গল কিনো বলে, এটা ঔষুধী। ফুলের পাপড়ি থেকে হলুদ রং পাওয়া যায়। বীজের গুড়া পতঙ্গ ও ক্রিমিনাশক।