নিউমোনিয়া
নিউমোনিয়া ( Pneumonia) এটি ফুসফুসের প্রদাহজনিত একটি রোগের নাম। এই রোগটি হল ফুসফুসের প্যারেনকাইমার প্রদাহ বিশেষ একটি রোগ । নিউমোনিয়া রোগটি সাধারণত ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক সংক্রমণের কারণে হয়ে থাকে । মনে রাখা উচিত নিউমোনিয়া মৃদু কিংবা হালকা থেকে জীবন হানিকরও হতে পারে।
নিউমোনিয়ার জন্য যে সকল জীবানু দায়ী
সচরাচর
১. স্ট্রেপটোককক্কাস নিউমোনি
২. ক্ল্যামাইডিয়া নিউমোনি
৩. মাইকোপ্লাজমা নিউমোনি
সচরাচর হয় না এমন
১. হেমোফাইলাস ইনফ্লুয়েনজি
২. স্টেফাইলোকক্কাস অরিয়াস
৩. ক্ল্যামাইডিয়া সিটাসি
৪. কক্সেলা বারনেটি
৫. ক্লেবসিলা
নিউমোনিয়ার লক্ষণ সমূহঃ
১. ফিভার ও রাইগর (কাঁপুনি সহ জ্বর)
২. মেলেইজ (শরীর ব্যথা)
৩. এনোরেক্সিয়া (ক্ষুধামন্দা)।
৪. ডিসনিয়া (শ্বাস কষ্ট)
৫. কফ (কাশি)।
৬. পুরুলেন্ট শুটাম ( ঘণ গয়ার)
৭. হেমোপটাইসিস
৮. বুক ব্যথা।
নিউমোনিয়া রোগের সাইন (চিহ্ন)
১. সায়ানোসিস থাকতে পারে।
২. অর্ধচেতন অবস্থা
৩. ট্রাকিপনিয়া, ট্রাকিকার্ডিয়া, হাইপোটেনশন
৪. বুকের প্রসারণ কমে যাবে।
৫. পারকাসন-এ ডাল সাউন্ড পাওয়া যাবে।
৬. ব্রংকিয়াল ব্রেদিং।
নিউমোনিয়া রোগের চিকিৎসাঃ
ক) সাধারণ ব্যবস্থাপনা
১. রোগীকে হাসপাতালে স্থানান্তর করতে হবে।
২. অক্সিজেন দিতে হবে।
৩. ইন্ট্রাভেনাস ফ্লুইড দিতে হবে।
৪. নিয়মিত ভাইটাল সাইন পরীক্ষা করতে হবে।
খ) ঔষধজ
১. এন্টিবায়োটিক: যেমন; এমক্সিসিলিন, সেফালোস্পোরিন
২. এন্টিপাইরেটিক: যেমন- প্যারাসিটামল
[videogallery id=”pneumonia-alo”]
[videogallery id=”pneumonia-harbal”]
নিউমোনিয়ার ঘরোয়া চিকিৎসাঃ
১। পানীয়: আমরা জানি সুস্থ শরীরেও হাইড্রেটেড রাখতে একজন মানুষের প্রচুর তরল জাতীয় খাবার খাওয়া প্রয়োজন । কিন্তু অসুস্থ অবস্থায় এর গুরুত্ব আরও বেশি । তাই রোগীকে পানীয় জাতিও খাবার যেমন পানি, চা ও স্যূপ খেতে দিতে হবে।
২। লেবু ও মধু: কাশি আসলেই আমরা সাধারণত কাশির সিরাপ সেবন করি। কিন্তু এর পাশাপাশি আমাদের মনে রাখা উচিত, কাশি হলো এমন একটা প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে শরীর, ফুসফুসের শ্লেষ্মা বের করে দিতে চেষ্টা করে। এই সমস্যার সমাধান করার জন্য আমরা লেবু ও মধুর মিশ্রণ পান করতে পারি।
৩। গরম ভাপ: যখন শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি হবে তখন গরম ভাপে আরাম পাওয়া যায়। সেক্ষেত্রে আমরা কুসুম গরম পানিতে একটি কাপড় ভিজিয়ে রোগীর কপাল বা ঘাড়ের ওপর ২০-৩০ মিনিট রেখে দিতে পারি। এই প্রক্রিয়া বাহির থেকে শরীরকে শীতল করতে সাহায্য করে।
৪। সঠিকভাবে কাশি দেয়া: যখন প্রচুর কাশি আসবে তখন সঠিকভাবে কাশলে সর্বোচ্চ উপকার হয়। এই প্রক্রিয়াটা হল, চেয়ারে বসে সামনের দিকে অল্প ঝুঁকে একটি টিস্যু পেপার নিয়ে কয়েকবার জোরে কাশতে হবে। বিশ্রাম নিয়ে আবার কাশুন।
৫। হলুদ: পরীক্ষা নিরীক্ষায় দেখা গেছে, নিউমোনিয়া উপশমে হলুদ কার্যকরী ভূমিকা রাখতে পারে। হলুদের সাপ্লিমেন্ট অথবা হলুদের চা চেষ্টা করে দেখা যায়। কিন্তু সতর্কতার বিষয় হল, অত্যধিক হলুদ খেলে পেটের অবস্থা খারাপ হতে পারে।
৬। বিশ্রাম নেয়া: নিউমোনিয়ার রোগীকে অবশ্যই সম্পূর্ণ বিশ্রামে থাকতে হবে। নিউমোনিয়ার সঙ্গে লড়াই করার জন্য শরীরের পর্যাপ্ত বিশ্রামের প্রয়োজন হয়। এসময় সকল প্রকার কাজ থেকে বিরত থাকুন।
৭। ধূমপান বর্জন: ধূমপান করলে নিউমোনিয়ার উপসর্গ আরো শোচনীয় হতে পারে। তাই ধূমপান পরিহার করুন, পাশাপাশি ধূমপানকারীর সঙ্গ পরিত্যাগ করুন। মনে রাখবেন ধূমপান কখনোই ফুসফুসের জন্য ভালো নয়।