কাশির সাথে রক্ত আসার চিকিৎসা ও সকল পদ্ধতির ডাক্তারদের বক্তব্য।
হেমোপটাইসিস (রক্ত কাশি)
কফ-এর সাথে রক্ত উঠে আসাকে হেমোপটাইসিস (hemoptysis) বা রক্ত কাশি বলা হয়। এটি কোন রোগ নয়, রোগের লক্ষণ/চিহ্ন মাত্র।
হেমোপটাইসিস-এর কারণ সচরাচর কারণঃ-
১. রেসপিরেটরি (ফুসফুস জণিত)
পালমোনারী টিউবারকুলোসিস, ব্রংকিয়াল কার্সিনোমা, ব্রংকিয়েকটেসিস, সাপুরেটিভ নিউমোনিয়া, লাঙ এবসেস, পালমোনারী এখোলিজম, পালমোনারী ইনফারকশন ইত্যাদি।
কার্ডিওভাসকুলার রোগ: মাইট্রাল স্টেনোসিস, একিউট লেফট ভেন্ট্রিকুলার ফেইলুর
ব্লাড ডিজরডার (রক্ত রোগ): যেমন-লিউকেমিয়া, হেমোফিলিয়া ইত্যাদি।
২. প্যারাসাইটিজম: এসকেরিয়াসিস
৩. অন্যান্য: বুকে আঘাত।
হেমোপটাইসিস দেখা গেলে রোগীকে সাথে সাথে হাসপাতালে প্রেরণ করতে হবে।
কাশির সাথে রক্ত ওঠাকে মেডিকেলের ভাষায় ‘হেমোপটাইসিস’ বলে। কাশির সাথে যখন রক্ত দেখা যায় তখন তার কারণ অনুসন্ধান করতে হবে। বিভিন্ন কারনে কাশির সাথে রক্ত উঠতে পারে। তার মধ্যে কিছু কারনঃ-
১। দীর্ঘদিন ধূমপান করলে একসময় শুকনো কাশি হয়। প্রকৃতি পরিবর্তন এবং সাথে রক্ত ক্রমাগত বেড়ে যেতে থাকলে ধারণা করা হয় ফুসফুসে ক্যান্সার হয়েছে। অনেক সময় শিল্পকারখানায় কাজের অভ্যাস থাকলেও এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার অনেক আশঙ্কা থাকে।
২। এছাড়া দীর্ঘদিনের পুরানো কাশি এবং ফুসফুসে প্রদাহ বা যক্ষ্মা রোগ, শ্বাসনালীতে শিমের বিচি, পুঁতির দানা, ছোট পয়সা ইত্যাদি ঢুকে যাওয়ার কারনে হতে পারে।
৩। খুব বেশি জ্বরের সাথে বুকে ব্যথা, কাশির সাথে মরিচা রঙের কফ হলে সন্দেহ করা হয় তার নিউমোনিয়া হয়েছে।
৪। হঠাৎ করে কাশির সাথে রক্ত আসা পাশাপাশি বুকে ব্যথা এবং শ্বাসকষ্ট হলে পালমোনারি অ্যাম্বলিজম সন্দেহ করা হয়।
৫। কাশির সাথে রক্ত আসার একটি সাধারণ কারণ হচ্ছে ব্রংকাইটিস। তবে ব্রংকাইটিসের কারণে হেমোপটাইসিস হওয়া জীবনের জন্য অনেক হুমকি স্বরূপ ।
৬। ফুসফুসের ক্যান্সার , নিউমোনিয়া , পালমোনারি এম্বুলিজম এমনকি টিউবারকুলোসিস এর জন্যও হতে পারে।
হেমোপটাইসিস রোগ নির্ণয় :
এই রোগ নির্ণয়ের ক্ষেত্রে সাধারণত রক্তপাতের মাত্রা এবং শ্বাস গ্রহণের উপর ফোকাস করা উচিৎ তবেই কাশির সাথে রক্ত আসার প্রকৃত কারণ শনাক্ত করা সম্ভব হবে। হেমোপটিসিস রোগ নির্ণয়ের জন্য যে টেস্টগুলো করা হয় সে বিষয়ে আলোচনা করা হলঃ-
১। শারীর পর্যবেক্ষণঃ কাশির সাথে সাথে রক্ত আসে এমন রোগীর সাথে কথা বলে এবং তাকে পরীক্ষা করে চিকিৎসক তার রোগটির সংকেত বুঝতে পারবেন। সেটা রোগের কারণ নির্ণয়ে যথেষ্ট সাহায্য করবে।
২। এক্সরেঃ এক্সরে করার মাধ্যমে বুকে পিন্ড বা দলার মত অংশ দেখা যাবে। পাশাপাশি ফুসফুসে তরল বা রক্ত জমাটবদ্ধ অবস্থায় দেখা যাবে নতুবা সম্পূর্ণ স্বাভাবিক দেখাবে।
৩। সিটি স্ক্যানঃ বুকের গঠনের সম্পূর্ণ চিত্র পাওয়ার জন্য সিটি স্ক্যান করতে হবে। এর ফলে কাশির সাথে রক্ত আসার আসল কারণ পাওয়া যাবে।
৪। কমপ্লিট ব্লাড কাউন্ট (CBC)
৫। ইউরিন অ্যানালাইসিস মাধ্যমেও হেমোপটাইসিস নির্ণয় করা যায়।
৬। আর্টেরিয়াল ব্লাড গ্যাসঃ এটি রক্তে অক্সিজেন ও কার্বন ডাই অক্সাইডের সঠিক মাত্রা নির্ণয়ের পরীক্ষা । কাশির সাথে রক্ত আসে যাদের, তাদের রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা কম থাকতে পারে।
কখন চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাবেনঃ
১। যদি দেখেন ১ সপ্তাহের বেশি সময় ধরে শ্লেষ্মায় রক্ত আছে।
২। পাশাপাশি বুকে ব্যথা এবং দ্রুত ওজন কমে যাওয়া।
৩। এছাড়া রাতের বেলায় ঘাম হওয়া এবং শরীরের তাপমাত্রা ১০১ ডিগ্রীর উপর থাকা।
৪। স্বাভাবিক কাজ করার সময়ই যদি দেখেন শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে, তাহলে অবশ্যই ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাবেন।
৫। আর একটি কথা কাশির সাথে যাদের রক্ত আসে সেই সমস্ত রোগীদের চিকিৎসা অবশ্যই হাসপাতালে থেকেই করতে হবে।
[videogallery id=”hemoptysis-alo”]
হেমোপটাইসিস রোগের চিকিৎসা:
১। হেমোপটাইসিস যে প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নির্ণয় করা হয় তার নাম ব্রংকিয়াল আর্টারি এম্বোলাইজেশন। এই প্রক্রিয়ায় পায়ের ফুসফুসে রক্ত সরবরাহকারী ধমনীটিতে ক্যাথেটার যুক্ত করা হয় এবং ভিডিও এর পর্দায় ধমনীটি স্পষ্টভাবে দেখার জন্য ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে রঙ প্রবেশ করানো হয়। এর ফলে রক্তপাতের উৎস শনাক্ত করতে সুবিধা হয়।
২। এই প্রক্রিয়া ছাড়াও এন্ডোস্কপি, অপারেশন, নিউমোনিয়া কিংবা যক্ষ্মার নিরাময়ের জন্য অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ গ্রহণ, ফুসফুসের ক্যান্সারের জন্য কেমোথেরাপি বা রেডিয়েশন গ্রহণ সহ অন্য চিকিৎসা গ্রহন করতে হবে।
৩। হেমোস্ট্যাটিক থেরাপি দেয়া হয় যার ফলে শ্বাসযন্ত্রের অঙ্গগুলির স্বাভাবিক কার্যকারিতা ফিরে আসে।
৪। ফুসফুসে কাশি অথবা রক্তপাতের জন্য Promedol ব্যবহার করা হয়।
৫। অ্যান্টিফাইব্রিনোলাইটিক ওষুধ দেয়া হয়, যা হেমোপটাইসিস সৃষ্টিকারী রোগের উপর নির্ভর করে নির্ধারিত হয়। অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে গ্রহন করতে হবে।
[videogallery id=”hemoptysis-harbal”]
হেমোপটাইসিস বিকাশের সময় প্রাথমিক চিকিৎসাঃ
১। রোগীকে যথা সম্ভব শান্ত করার চেষ্টা করতে হবে। এটি করার জন্য, তাকে বসান এবং তাকে বিশ্রাম দিন। সাথে সাথে রোগীর অবস্থা সম্পর্কে প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করার দরকার নেই, কারণ যদি কিছু হয় তবে রোগী নিজেই আপনাকে বলবেন যে তাকে কী উদ্বিগ্ন করে।
২। রোগীকে পানি পান করাতে হবে ।
৩। রোগীকে সেই মুহূর্তে কথা বলতে বা নড়াচড়া করতে দেয়া যাবে না ।
৪। রোগীকে হেলান দিয়ে বসানো রোগীর জন্য ভালো হবে।
৫। রোগীর ফুসফুস থেকে থুতনির নির্গমনকে ত্বরান্বিত করার জন্য, তার বুকে একটি সংকুচিত করার পরামর্শ দেওয়া হয়। যেটা করার ফলে শ্বাসযন্ত্রের অঙ্গগুলিকে শীতল করে।
৬। আমাদের অবশ্যই মনে রাখতে হবে, এই সমস্ত প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়ার পরে যদি রোগী স্বাভাবিক বোধ করে, তবুও ডাক্তার ডাকতে হবে।