গাছপালা

নয়নতারা গাছ

প্রচলিত নাম : নয়নতারা

ইংরেজী নাম : Periwinkle

বৈজ্ঞানিক নাম : Vinca rosea Linn.

পরিবার : Apocynaceae.

পরিচিতি : নয়নতারা সোজা কাণ্ডযুক্ত একটি বর্ষজীবী ও গুল্মজাতীয় উদ্ভিদ। কিছুক্ষেত্রে এটি অনেক বছর ধরে নানা প্রতিকূল অবস্থার মধ্যেও বেঁচে থেকে। সাধারণতঃ দেড়-দু ফুটের মতো লম্বা হয়। তবে যেসব গাছ বহু বর্ষজীবী তারা চার থেকে সাড়ে চার ফুট পর্যন্ত লম্বা হয়। ফুলে পাঁচটি পাপড়ি থাকে। রং ফিকে গোলাপী। এ জাতের নয়নতারা গাছ সর্বত্র দেখা যায়। এর আরও দুটি জাত রয়েছে। তার মধ্যে একটির ফুল সাদা। তৃতীয় শ্রেণীটির ফুল লাল অথবা গোলাপী চোখ থাকে। নয়নতারা গাছে বারো মাস ফুল ফোটে। পাতার স্বাদ তেতো।

বিস্তৃতি : বাংলাদেশের সর্বত্র এটি জন্মে।

বংশ বিস্তার : কাটিং বা বীজ থেকে চারা গজায়। গাছের নীচে পাকা বীজ পড়ে এমনিতেও নতুন চারা গজায়। এগুলি সরিয়া রোপণ করলে নতুন গাছ জন্মায়।

ঔষুধি গুণ : ভেষজ হিসাবে নয়নতারার পাতা ও মূল ব্যবহৃত হয়। সমগ্র গাছের রসে প্রায় ৭০টি উপক্ষার পাওয়া যায়। তার মধ্যে ভিনক্রিস্টিন ও ভিন ব্লাস্টিন নামক উপক্ষার দুটি লিউকেমিয়া রোগের ঔষধ হিসাবে বিশেষভাবে গণ্য। এটির উপরে দেশে-বিদেশে বিজ্ঞানীরা এখনো ব্যাপক গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন। নয়নতারার মধ্যে ডেলটা-ইহোডিন যে রাসায়নিক পদার্থটি পাওয়া যায় সেটির চাহিদা বিশ্ব বাজারে খুব বেশী।

ঔষধি ব্যবহার :

১) বিষাক্ত ক্ষত ও ঘা : শরীরে কোন অঙ্গ কেটে গেলে কিংবা ঘা যদি বিষাক্ত হয়ে যায়, তবে দুটো নয়নতারা গাছের রস প্রয়োগ করলে খুবই সুফল পাওয়া যায়। রোজ একবার করে কচি ডাল ও পাতা বেটে, তার রস দিয়ে ঘা ধুয়ে বেঁধে রাখতে হবে। সাত দিন ব্যবহার করলে বিষদোষ নষ্ট হবে এবং ঘা শুকিয়ে যাবে। অন্ত্রের আঘাতে কেটে গেলে, একইভাবে কাটা জায়গার রস প্রয়োগ করে বেধে রাখতে হবে। তিন-চার দিনের কাটা জায়গা জুড়ে যাবে।

২) রক্তের চাপ বাড়লে : পাঁচ মিলিলিটার নয়নতারা গাছের মূলের টাটকা রস সকালে খালি পেটে একবার করে খেতে হবে। তিন| চার দিন খেলেই কিছুটা উপকার পাওয়া যাবে। তবে চার-পাঁচ দিন পরে অবশ্যই চিকিৎসকের কাছে রক্তের চাপ পরীক্ষা করে দেখা দরকার।

৩) বহুমূত্র রোগে : প্রতিদিন সকালে সাদা নয়নতারা ফুল গাছের দুটি পাতা খালি পেটে চিবিয়ে খেলে এ রোগ মোটেই বাড়তে পারে না। যাদের দাঁত নেই তারা পাতাকে সামান্য পানি দিয়ে বেটে এক চামচ পরিমাণ রস খাবেন। নয়নতারা পাতা নিয়মিত খেলে রোগ নিয়ন্ত্রণে থাকে।

৪) লিউকেমিয়া : একটি অসাধ্যের পর্যায়ভূক্ত রোগ। আয়ুর্বেদীয় শাস্ত্রমতে এটি রক্তবহ স্রোতের ব্যাধি। এক্ষেত্রে নয়নতারা ভেষজটির ব্যবহার রোগটিকে প্রতিহত করতে সাহায্য করে।

৫) কৃমি থেকে কুষ্ঠরোগ, হৃদরোগ, অরুচি, মুছা, অজীর্ণ, বারেবারে হাঁচি, সর্দি, পেট ফাপা, দাঁতের রোগ এমনকি মাথার রোগও হতে পারে। এসব ক্ষেত্রে বেশীরভাগ চিকিৎসক ভিন্ন ভিন্ন রোগের কারণ ভিন্ন ভিন্ন মনে করেন। এ অবস্থায় উপযুক্ত নয়নতারা কৃাথ ৫/৬ দিন সেবন করলে কৃমির উপদ্রব কমে গিয়ে অন্যান্য উপসর্গগুলি উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যায়। তারপর আরও ৮/৯ দিন ঐভাবে খেলে সম্পূর্ণ রেহাই পাওয়া যায়।

৬) মেধার গ্রহণ ও সঞ্চালন শক্তি ঠিক থাকলেও ধারণ শক্তি ক্রমশঃ কমে গলে মেধার হ্রাস হয়েছে বলা হয়। এক্ষেত্রে নয়নতারা ক্বাথ নিয়মিত মাসখানেক সেবন করলে খুব দ্রুত ফল পাওয়া যায়।

৭) কীট দংশনে বা বোলতা, ভিমরুল, মৌমাছি ও ভোমরার হুলের জ্বালা ও যন্ত্রণার হাত থেকে আশু উপকার পেতে হলে নয়নতারার পাতা থেতো করে সে রসটা লাগাতে হবে ।

রাসায়নিক উপাদান : 1. Leaf contains : a) Glycoside, b) Ursolic acid, c) Alkaloids, d) Alcohols, e) Tannin, f) Carotenoids, g) Sterols, h) Oleoresin etc. 2. Root contains : a) 24 Alkaloids- Vinosidine, Lochnerivine, Leuosivine, Cavincine etc. Whole Plant contains a) 44 Alkaloids, b) Ursolic acid etc,

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *