নার্ভাস সিস্টেম বা স্নায়ুতন্ত্র
নার্ভাস সিস্টেম বা স্নায়ুতন্ত্র দেহের এমন একটি গুরুত্বপুর্ণ ব্যবস্থা যার মাধ্যমে দেহের বিভিন্ন কার্যাবলী ও আভ্যন্তরিন অবস্থা নিয়ন্ত্রিত হয়।
লার্ভাস সিস্টেমের কাজ
১. দেহের বিভিন্ন অংশ হতে উদ্দিপনা সংগ্রহ করা ।
২. সংগৃহিত উদ্দিপনা প্রক্রিয়াজাত করা।
৩, প্রক্রিয়াজাতকৃত উদ্দিপনায় সাড়া দেয়ার নিমিত্তে নির্দেশ তৈরি করা।
৪. তৈরিকৃত নির্দেশ দেহের বিভিন্ন অংশে পৌছে দেয়া।
৫. মানসিক অনুভূতি তৈরি করা।
নার্ভাস সিস্টেমের অঙ্গসমুহ এবং এদের প্রধান কাজ
| স্পাইনাল কর্ড
স্কাল = (খুলির। দেহের সকল অংগের অভ্যন্তরে) কার্যকলাপ সংগঠন
করানো। ভার্টিব্রাল কলাম উদ্দিপনা চলনের মধ্যবর্তী। (মেরুদন্ডে) সংযোগ হিসেবে ক্রিয়া |
করে। সারা দেহ
দেহের প্রতিটি অংশ হতে। উদ্দিপনা গ্রহন ও প্রয়োজনীয় উদ্দিপনা | সরবরাহ করা।
নার্ভাস সিস্টেম এর শ্রেণীবিভাগ
ক) সেন্ট্রাল
ব্রেইন।
স্পাইনাল কর্ড
খ) পেরিফেরাল
এ সোমাটিক
০ স্পাইনাল |
০ ক্রেনিয়ান
অটোনমিক
০ সিম্পেথেটিক
০ প্যারাসিম্পেথেটিক
নার্ভাস সিস্টেম এর অংশ সমুহ
য়ু তন্ত্রের প্রধান তিনটি অংশ রয়েছে
১. কেন্দ্রীয় প্রক্রিয়াজাত করন অংশ বা মস্তিস্ক ।
২. সেনসরি অংশ – যারা উদ্দিপনা সংগ্রহ করে এবং কেন্দ্রীয় অংশে বহন করে নিয়ে যায়।
৩. মটর অংশ – যারা কার্য সম্পাদনের লক্ষে নির্দেশ মুলক উদ্দিপনা তৈরি করে।
একটি উদাহরণ প্রদান করলে ব্যপারটি পরিস্কার হয়ে যাবে। একজন ব্যক্তির হাতে একটি মশা কামড় দিলে যা ঘটবে –
১. প্রথমে ত্বকে বিদ্যমান সেনসরি রিসেপ্টর দ্বারা কামড়ের অনুভূতি গৃহীত হবে।
২. এই অনুভূতি রিসেপ্টরের সাথে যুক্ত নার্ভ দ্বারা স্পাইনাল কর্ডে যাবে। স্পাইনাল কর্ড থেকে সেই অনুভূতি ব্রেইনে পৌছাবে।
৩. ব্রেইন এই অনুভূতিকে প্রক্রিয়াযাত করে বেদনার অনুভূতি সৃষ্টি করবে এবং এই বেদনা থেকে নিস্তার পাওয়ার জন্য হাতের মাসল ক্রিয়া করার নির্দেশ তৈরি করবে।
৪. এই নির্দেশ স্পাইনাল কর্ড হয়ে হাতের ঐ অংশ বা প্রয়োজনীয় অন্য অংশে নড়াচড়া করানোর মাসলকে উদ্দিপনা প্রদান করবে।
৫. ফলে ঐ ব্যক্তি নিচের হাত নাড়াবে অথবা অন্য হাত দিয়ে মশাকে মারার চেষ্টা করবে।
এখানে
১. হাত থেকে অনুভূতি গৃহিত হয়েছে সেনসরি অংশ দ্বারা।
২. বেদনার অনুভূতি সৃষ্টি ও হাত নাড়ানোর নির্দেশ তৈরি হয়েছে মস্তিস্কে প্রক্রিয়াজাত করনের মাধ্যমে।
৩. হাত নাড়ানো হয়েছে মোটর অংশ দ্বারা
নার্ভ বা স্নায়ু
দেহের কার্যাবলী নিয়ন্ত্রনের অন্যতম মাধ্যম হলো নার্ভ (Nerve) বা স্নায়ু।
দেহের নার্ভ ও এর সম্পর্কিত সেল, টিস্যু, অরগান মিলে নার্ভাস সিস্টেম’ নামক ফিজিওলজিক্যাল সিস্টেম গঠিত হয়। প্রিফিক্স/সাফিক্স নিউরো দ্বারা নার্ভাস সিস্টেমের সাথে সম্পর্ককে বোঝায়।
নার্ভাস টিস্যু বা স্নায়ু কলা। যেসব কলা দেহের কাজকে নিয়ন্ত্রন ও সমন্বয় করে তারাই স্নায়ু কলা। স্নায়ুকলা দুই। ধরনের কোষ দ্বারা তৈরি
উদ্দিপক কোষ –
অনুদ্দিপক কোষ (সহায়ক)
০ নিউরোগ্লিয়া এবং এপেনডাইমা কেন্দ্রীয় স্নায়ু তন্ত্রে)
০ সোয়ান কোষ এবং আনুসাঙ্গিক উপাদান (প্রান্তস্থ ).
নার্ভাস টিস্যুর কাজ
৬. দেহের বিভিন্ন অংশ হতে উদ্দিপনা সংগ্রহ করা ।
৭. সংগৃহিত উদ্দিপনা প্রক্রিয়াজাত করা।
৮. প্রক্রিয়াজাতকৃত উদ্দিপনায় সাড়া দেয়ার নিমিত্তে নির্দেশ তৈরি করা।
৯. তৈরিকৃত নির্দেশ দেহের বিভিন্ন অংশে পৌছে দেয়া।
১০. মানসিক অনুভুতি তৈরি করা।
নিউরন বা স্নায়ুকোষ
নিউরন (Neuron) বা স্নায়ু কোষ হলো স্নায়ু তন্ত্রের গঠনগত ও কার্যগত একক। মানবদেহের স্নায়ু তন্ত্র ১০০ মিলিয়নেরও বেশী নিউরন দ্বারা তৈরি। বিভিন্ন ধরনের নিউরন রয়েছে। এই শ্রেণীবিভাজন হয়েছে তাদের গঠন, অবস্থান, ক্রিয়া ইত্যাদির উপর ভিত্তি করে।
নিউরনের অংশ সমূহ
নিউরনের একটি বডি (দেহ) রয়েছে এবং প্রসেস (উপাঙ্গ) রয়েছে। নিউরনের বডিতে অন্যান্য কোষের মত প্রয়োজনীয় উপাদান রয়েছে। প্রসেস দুই ধরনের যথা এক্সোন ও ডেনড্রাইট। সাধারণ ভাবে একটি নিউরনের নিম্নলিখিত অংশ রয়েছে
নিউরন সম্পর্কিত কিছু শব্দ পরিচিতি
নিউরোগ্লিয়া : নিউরোগ্লিয়া হলো সেন্ট্রাল নার্ভাস সিস্টেমের (কেন্দ্রিয় স্নায়ু তন্ত্রের) অনুত্তেজক সাহায্যকারী কোষ। নিউরোগ্লিয়া কোষের সংখ্যা নিউরোনের প্রায় দশগুন। ব্রেইন বা মস্তিস্কের আয়তনের প্রায় অর্ধেক অংশ নিউরোগ্লিয়া কোষ দ্বারা গঠিত।
সোয়ান সেল : সোয়ান সেল হলো পেরিফেরাল নার্ভাস সিস্টেমের (প্রান্তীয় স্নায়ু তন্ত্রের) সহায়ক কোষ। সোয়ান সেল পেরিফেরাল নার্ভের (বা স্নায়ুর) এক্সোনের চারদিকে আবরন তৈরি করে।
মায়ালিন সিথ : মায়ালিন সিথ হলো লিপপা-প্রোপ্রোটিন দ্বারা তৈরি খন্ডাংশ বিশিষ্ট আবরন যা দেহের বিভিন্ন স্নায়ুকে আবৃত করে রাখে। পেরিফেরাল বা প্রান্তীয় স্নায়ুতন্ত্রে ইহা সোয়ান সেল দ্বারা তৈরি এবং কেন্দ্রীয় স্নায়ু তন্ত্রে অলিগোডেড্রোসাইট দ্বারা তৈরি।
সাইনান্স : সাইনান্স হলো দুটি সংলগ্ন নিউরনের সংযোগ। এই সংযোগ দুটি প্রসেস – এর মধ্যে হতে পারে অথবা বডি ও প্রসেস ( দেহ ও উপাঙ্গ) মধ্যে হতে পারে। সাইনান্সের মাধ্যমে উদ্দীপনা একমুখী পথে প্রেরিত হয়ে থাকে।
গ্যাংলিয়া : গ্যাংলিয়া হলো গোলাকার কাঠামো যেখানে যোজক কলার আবরন দ্বারা আবদ্ধ নিউরনের দেহকান্ড ও গ্লিয়াল কোষ বিদ্যমান। প্রতিটি গ্যাংলিয়ায় একটি স্নায়ু প্রবেশ করে এবং আরেকটি বের হয়ে যায়।
নার্ভ (nerve) বা স্নায়ু, একগুচ্ছ নার্ভ ফাইবার (স্নায়ু তদ্ভ) দ্বারা গঠিত রজ্জুর ন্যায় একটি কাঠামো যা কেন্দ্রীয় স্নায়ু তন্ত্র ও দেহের কিছু অঙ্গের মাঝে উদ্দিপনা বহন করে। দেহের বিভিন্ন অংশ ও
অঙ্গ বিভিন্ন নার্ভ বা স্নায়ু দ্বারা সরবরাহ লাভ করে। একটি নার্ভে রয়েছে নার্ভ ফাইবার, এর রক্তনালী ও লিম্ফেটিকস এবং সহায়ক টিস্যু।
নার্ভের শ্রেণীবিভাগ।
মানব দেহে দুই ধরনের নার্ভ রয়েছে ।
১. অটোনমিক : যা সয়ংক্রিয় অর্থাৎ এগুলোর আমাদের অগোচরে এগুলো ক্রিয়া করে। মানব দেহের আভ্যন্তরিন অঙ্গ সমূহে এ ধরনের নার্ভ রয়েছে।
২. সোমাটিক: যা সাধারণত ঐচ্ছিক। এই নার্ভগুলোর ক্রিয়া হলে আমরা বুঝতে পারি কিংবা আমরা এগুলোকে উদ্দিপনা দিয়ে ক্রিয়া করাতে পারি। মানব দেহের বাইরের দিকের বিভিন্ন মাসলে এগুলো পাওয়া যায়। এ নার্ভ গুলো, আবার উৎপত্তি অনুসারে দুই ধরনের
ক্রেনিয়াল নার্ভ যা ব্রেইন থেকে সৃষ্টি হয়। |
স্পাইনাল নার্ভ যা স্পাইনাল কর্ড থেকে সৃষ্টি হয়।
নার্ভ ফাইবার বা স্নায়ুতন্তু
নার্ভ ফাইবার হলো হলো নিউরনের দীর্ঘাকার প্রসেস, সাধারনত এক্সোন। প্রতিটি ফাইবার মায়ালিনেটেড (মায়ালিনযুক্ত) ও আন-মায়ালিনেটেড (মায়ালিন বিহীন) এই দুটি ভাবে বিভক্ত।