গাছপালা

বাসক গাছ

প্রচলিত নাম : বাসক

ইংরেজী নাম : Malabar Nut

বৈজ্ঞানিক নাম : Adhatoda vasica Nees.

পরিবার : Acanthaceae

পরিচিতি : বাসক চিরসবুজ ও গুল্ম জাতীয় উদ্ভিদ। গাছ প্রায় ১-৩ মিটার উঁচু হয়। পাতা সাধারণতঃ সরল ৭-৯ সে. মি. লম্বা। গাছ। শাখা-প্রশাখা বিশিষ্ট হয়ে থাকে। গিঁটযুক্ত ও প্রতি গিঁটে ২টি করে পাতা থাকে। বসন্তকালে পাতার বোঁটার কাছে গিঁটে সুন্দর গুচ্ছাকারে ফুল হয়। ফুল সাদা, পুষ্পদণ্ডে ঘন হয়ে ফুল ধরে। বর্ষাকালে ফল পাকে, প্রতিটি ফলে ৪টি করে বীজ থাকে।

বিস্তৃতি : বাংলাদেশ, ভারত, শ্রীলংকা, নেপাল ও ভুটানে বাসক দেখা যায়। বাংলাদেশের সব জেলাতেই গ্রামীণ বাস্তুভিটায় বিশেষ করে সমতল ভূমিতে বাসক দেখা যায়।

বংশ বিস্তার : বীজ অথবা কাটিং বা কোলন থেকে বাসকের বংশ বিস্তার সম্ভব। দুই পাতা ও দুই নোড শিশিষ্ট কোলন বীজতলায় দিলে সহজেই নতুন চারা হয়। পরিচর্যা করলে এক্ষেত্রে শতকরা ৯০টি নতুন চারা তৈরী সম্ভব। বন্যামুক্ত উঁচু জমিতে বেড় হিসাবে বাসক গাছ উপযুক্ত।

ব্যবহার্য অংশ : পাতা, ফুল, ছাল ও মূল।

চাষাবাদ পদ্ধতি : বাসকের ডালা বর্ষাকালে লাগাতে হয়। অপেক্ষকৃত শক্ত কাণ্ড কেটে নির্দিষ্ট স্থানে রোপণ করতে হয়। কাণ্ডের দৈর্ঘ্য ২০২৫ সে. মি. হওয়া বাঞ্ছনীয়। পর্যাপ্ত পানির ব্যবস্থা করা গেলে বছরের যে কোন সময় রোপণ করা যায়। বীজ থেকে চারা তৈরী করেও এর চাষ করা যায়। গ্রীষ্মের শেষে ফুল ও বর্ষার শেষে ফল সংগ্রহ করতে হয়।

উপযোগী আবহাওয়া ও মাটি : আমাদের দেশের আওহাওয়া ও সব ধরনের মাটিতে বাসক জন্মে । গ্রামঅঞ্চলে বাড়ীর চারপাশে আইলের মধ্যে সাধারণত লাগানো হয়। এছাড়া ঝোঁপ-ঝাড়ে অবহেলা অযত্নে এমনিতেই জন্মে। বর্ষাকালে বাসকের ডাল কাটিং করে বেলে মাটিতে রোপণ করলে উন্নতমানের বাসক উৎপাদন করা যায়।

সংগ্রহ ও সংরক্ষণ পদ্ধতি : বাসক পাতা কাঁচা ব্যবহারই উত্তম। তুলসী গাছ পাতাসমেত উত্তোলনপূর্বক ভালভাবে ধুয়ে ছোট ছোট করে কেটে রৌদ্রে শুকিয়ে নিয়ে শুষ্কস্থানে সংরক্ষণ করতে হবে এবং এক বছর ব্যবহার করা যায়। এইক্ষেত্রে ড্রাই চেম্বার ব্যবহার করা যেতে পারে। শুকাবার পর পাতার আর্দ্রতা যেন শতকরা ২ ভাগ থাকে। প্যাকেটের গায়ে সংগ্রহের তারিখ, উৎসস্থল, সনাক্তিকরণ এবং ব্যবহারের শেষ সময় অবশ্যই উল্লেখ রাখতে হবে।

ঔষধি গুণাগুণ : কফ নিবারক, দীর্ঘস্থায়ী ফুসফুস প্রদাহ, হাঁপানি, ব্রংকাইটিস, নিউমোনিয়া, অতিরিক্ত রজঃস্রাব, শ্লেষ্মাজনিত জ্বরে উপকারী।

ঔষধি ব্যবহার : নিম্নরূপভাবে বাসকের বিভিন্ন অংশ দেশীয় চিকিৎসা তথা হাকীম কবিরাজগণ ব্যবহার করে থাকেন। যেমন :

১. ফুসফুসের প্রদাহ ও কাশি নিরসনে : বাসক পাতার রস ২ চা চামচ, তুলসী পাতার রস ১ চা চামচ, ২ চা চামচ মধুর সাথে মিশিয়ে প্রত্যহ ২-৩ বার সেব্য। উল্লিখিত নিয়মে ১০-১৫ দিন নিয়মিত সেবন করে যেতে হবে ।

২. অতিরিক্ত রজঃস্রাব : অতিরিক্ত রজস্রাব ও তথা (Menorrhoegia)-তে বাসক ছালের রস ফলদায়ক। মহিলাদের ডিম্বকোষ (Ovary) থেকে (Estrogen) হরমোনের মাত্রাতিরিক্ত ক্ষরণ এবং Progesteron-এর স্বল্প ক্ষরণে বাসক ছালের রস ফলদায়ক।

৩. বাসকের মূল খিচুনীরোধক, পচন নিবারক এবং কৃমিনাশক হিসাবে ব্যবহৃত হয়।

৪. এছাড়া, ডিপথেরিয়া ও গণোরিয়াতেও উপকারী। বাসক পাতার ক্বাথ ক্ষুদ্র কীট-পতঙ্গের জন্য বিষতুল্য।

৫. পানি বিশুদ্ধ করার জন্য এর পাতা কুচি করে কেটে পানিতে মিশালে জীবাণু মরে যায়।

৬. গায়ের স্থান বিশেষের ঘামে দুর্গন্ধ হলে বাসক পাতার রসে দুর্গন্ধ দূর হয়।

৭. পাতার রস ২/১ টিপ শঙ্খ ভষ্ম মিশিয়ে স্নানের ২/৩ ঘন্টা আগে গায়ে লাগালে শ্যামবর্ণ উজ্জ্বল হয়।

৮. বসন্ত রোগের সংক্রমণ থেকে বাঁচাতে হলে বাসক পাতা সেদ্ধজল পানীয় জলের সাথে মিশিয়ে প্রত্যহ খেলে আর সংক্রমণ হওয়ার ভয় থাকে না।

৯. এক কলসী পানিতে ৩/৪টি বাসক পাতা কুচি করে ৩/৪ ঘন্টা ভিজিয়ে রাখলে পানি জীবাণুমূক্ত হয়। পুকুরের পোকা-মাকড় মারতেও সেকালে বাসক পাতা পানিতে ফেলা হতো।

ঔষধ প্রস্তুতকরণ : এছাড়াও বাসক বাড়ীর সৌন্দর্য বৃদ্ধির লক্ষ্যে রোপণ করা হয়ে থাকে। তাছাড়া জ্বালানীর কাজে বাসক ব্যবহৃত হয়ে থাকে।

সাধারণ ব্যবহার : বাসকের পাতা সবুজসার এবং হলুদ রং তৈরীর কাজে ব্যবহৃত হয়। এছাড়া পাতায় বিভিন্ন Alkaloid থাকায় ছত্রাকনাশক ও কীটনাশক হিসেবে ফল প্যাকিং ও সেটিং-এর কাজে ব্যবহৃত হয়।

রাসায়নিক উপাদান : পাতায় কুইজোলিন এলকালয়েড, ভ্যাসিনিন (পেগনিন), ভ্যাসিনিন ইত্যাদি রাসায়নিক উপদান রয়েছে। এতে আরো রয়েছে এডহাটোডিক এসিড, ভিটামিন সি, ফুয়াসসিটিন সিটোস্টেরর প্রভৃতি থাকে।

বাজার চাহিদা : দেশে ইউনানী-আয়ুর্বেদিক ও হোমিওপ্যাথিক ঔষধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলোতে ব্যাপকভাবে বিভিন্ন ঔষধ তৈরির ক্ষেত্রে বাসক পাতা ব্যবহার হয়ে থাকে। প্রতি বছর প্রায় ৫০০ টন বাসক পাতা ব্যবহৃত হয়ে থাকে। পরিকল্পিতভাবে চাষাবাদ করা হলে দেশের ওষুধের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানি করার মাধ্যমে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব হবে।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *