নিরাপদ চিকিৎসা, লিভার ও গলব্লাডার রোগ

লিভার ক্যানসারের চিকিৎসা ও সকল পদ্ধতির ডাক্তারদের বক্তব্য।

Liver Cancer Treatment and All Methods Doctors Speech.

লিভার ক্যানসার বিশ্বব্যাপী ভয়াবহ রোগ হিসাবে চিহ্নিত। এর পরিধি দ্রুত বাড়ে সারা বিশ্বে এ রোগে প্রতি বছর প্রচুর লোক মারা যাচ্ছে। বর্তমান বিশ্ব তাই একে চ্যালেঞ্জ হিসাবে গ্রহণ করেছে এবং একে পরাভূত করতে সমর্থ হয়েছে। নানাবিধ পরীক্ষা-নিরীক্ষার দ্বারা আজ চূড়ান্ত পর্যায়ে এই রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা করা সম্ভব হয়েছে।

এই রোগের বহুবিধ কারণ রয়েছে তার মধ্যে বি এবং সি ভাইরাস অন্যতম। আমাদের দেশে এর হার যথাক্রমে ৬ থেকে ৩ ভাগ। এর দ্বারা ক্রনিক হেপাটাইটিস এবং লিভার ক্যানসার হয়ে থাকে। মদ্যপায়ীদের ক্ষেত্রে এর হার অধিক। সভ্যতার বিকাশের সাথে সাথে মদ্যপের সংখ্যা বাড়ছে। ফলে লিভার ক্যানসার হারও দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। মহিলাদের ক্ষেত্রে দেখা গেছে জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি খাওয়ার ফলে লিভার ক্যানসার হয় ।

লিভারের বাংলা নাম যকৃত বা কলিজা, ওজন প্রায় ১.৫ কেজি। পেটের ডান পাশ জুড়ে অবস্থান। এটি শরীরের দ্বিতীয় বৃহত্তম অঙ্গ। এই অঙ্গের ৭০ ভাগ রক্ত আসে পাকস্থলী, খাদ্যনালি, মলদ্বার, প্লীহা, প্যানক্রিয়াস, পিত্তনালি ও পিত্তথলি থেকে পোর্টাল ভেইন দ্বারা । বাকি ৩০ ভাগ রক্ত প্রবাহ আসে হেপাটিক শিরা দ্বারা। স্বাভাবিক অবস্থায় তাই হেপাটিক শিরা বাধা পড়লে লিভারের কোনো ক্ষতি হয় না। পোর্টাল ভেইন। লিভারের সিরোসিসে নষ্ট হয়ে অকার্যকর হওয়ায় তখন হেপাটিক শিরা লিভারকে বাঁচিয়ে রাখে। হেপাটিক ভেইন দ্বারা রক্ত লিভার থেকে ভেনাকেভায় যায় । মেটাবলিক ও সিনথেটিক কার্যক্রম পরিচালনার গুরুদায়িত্ব বহন করে লিভার ।

খাদ্যনালির সকল গুরুত্বপূর্ণ খাদ্য উপাদানসমৃদ্ধ রক্ত লিভারে আসে। লিভার খাদ্য থেকে শক্তি তৈরি করে। যা শরীরকে সতেজ ও শক্তিশালী রাখে। লিভার অপ্রয়োজনীয় অংশ যা খাদ্যনালি থেকে রক্তদ্বারা গ্রহণ করে, তাকে ধ্বংস করে দেয় । লিভার ম্যাস/লেশন চিকিৎসককে মারাত্মক ভাবিয়ে তোলে। এই লেশনের আওতায় পড়ে টিউমার, সিস্ট, এবসেস, হেমাটোমা, গ্রানুলোমা। লিভারে ক্যানসার নারী ও পুরুষ উভয়েরই হতে পারে । তবে পুরুষের ক্ষেত্রে হার অনেক বেশি, বাচ্চাদের ক্ষেত্রে কম হয়। ৩০ বছর বা। তদূর্ধ্ব বয়সে এই রোগের হার অনেক বেশি।

লিভার ক্যানসারের আর কী কী কারণ

B ও C ভাইরাস ছাড়াও নিম্নলিখিত কারণে লিভার ক্যানসার হয়। যেমন—

  • আফলা টক্সিন।
  • আয়রন ওভারলোড
  • জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি সেবন
  • ভেনাস অবস্ট্রাকশন ইন লিভার ।
  • রেডিয়েশন।
  • মদপান

 

লিভার ক্যানসারের লক্ষণ

  • পেটে ব্যথা।
  • শরীরের ওজন কমে যাওয়া।
  • শরীর দুর্বল হওয়া।
  • ডান পাশের পেটে চাকা অনুভূত হওয়া।
  • পেট ফুলে যাওয়া।
  • জন্ডিস দেখা দেওয়া।
  • ক্ষুধামন্দা।
  • খাওয়ায় অরুচি ভাব।
  • বমি হওয়া।
  • পাতলা পায়খানার বেগ থাকা।
  • রক্তপায়খানা।
  • রক্তবমি ইত্যাদি ।

 

মেটাসটাটিক লিভার ক্যানসার

লিভারে সর্বাধিক ক্যানসার মেটাসটাসিস হয়। তার শতকরা হার ৪১ ভাগ, পরিসংখ্যানে এটা সর্বোচ্চ। শরীরে যেকোনো অঙ্গের ক্যানসার থেকে লিভারে মেটাসটাসিস হয়, তবে পোটাল সারকুলেশান থেকে মেটাসটাসিসের হার সর্বোচ্চ। এটাকে সেকেন্ডারি ক্যানসার বলে। কলোরেকটাল ক্যানসারে এর হার শতকরা ৭০ ভাগ।

 

লিভার ক্যানসার ও অন্য রোগ

এই রোগের সাথে ডায়াবেটিসের নিখুঁত সম্পর্ক আছে। কারো সুগার ধরা পড়ল আর তিনি সেটা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন, তা নিয়ন্ত্রণ করতে থাকলেন, সুগার কখনো নিয়ন্ত্রণে থাকে কখনো থাকে না এটা নিয়ে তিনি পেরেশান। কারণ লিভারে ক্যানসার থাকলেও তা কখনো কোনো লক্ষণ সৃষ্টি করেনি। তার ফলে এই রোগ সম্পর্কে তিনি কিছুই বুঝতেন না। তবে যখন পেটের ডান পাশের এক বিরাট চাকা আবিষ্কার হলো তখন তো ভয়াবহ পরিস্থিতি। নানা পরীক্ষার পর। আবিষ্কার হলো এটি লিভার ক্যানসার, যা আজ জীবন হানি করে দেবে।

অনেক অসুখের উপসর্গ যা লিভার ক্যানসারের সাথে সংযুক্ত

  • ডাইরিয়া,
  • থাইরয়েড ওভার ফাংশান,
  • রক্তকণিকার বৃদ্ধি,
  • হাইপার টেনশন,
  • ক্যালসিয়াম বৃদ্ধি,
  • যৌনক্ষমতা লোপ,
  • হাড়ের ব্যথা,
  • নার্ভের অসুখসমূহ,
  • লিভার ক্যানসারে সিরামে কলেস্টেরোল হার বৃদ্ধি হয়ে থাকে শতকরা ১১ থেকে ৩৮ ভাগ পর্যন্ত।
  • আলফা ফিটো প্রোটিনের বৃদ্ধি ঘটে লিভার ক্যানসারে, এর মাত্রা ৫০০ মাইক্রোগ্রাম/লি। এর মাত্রা ৫০০-এর কম হলে মনে করতে হবে ক্যানসার নয়, অন্য অসুখ যেমন— একিউট ও ক্রনিক হেপাটাইটিস। অন্যান্য ক্যানসারেও এরমাত্রা বেশি হয়, যেমন— অণ্ডকোষ ও ওভারীর ক্যানসার।

 

লিভার টিউমার ও ক্যানসার

লিভার টিউমার দুই প্রকার যথা : ১. প্রাইমারি ২. সেকেন্ডারি।

প্রাইমারি আবার দুই প্রকার। যথা : ১. ক্যানসার টিউমার ২. বেনাইন টিউমার।

প্রাইমারি ক্যানসার লিভার টিস্যু ও পিত্তনালি থেকে উৎপত্তি হয়।  লিভার টিস্যু থেকে হলে নাম হেপাটোসেলুলার ক্যানসার। পিত্তনালি থেকে হলে কোলানজিওকারসিনোমা।

হেপাটোসেলুলার কারসিনোমা

লিভার টিস্যুর ক্যানসার কাদের হয়: সাধারণত বি ও সি ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত লোকদের এই রোগের হার অধিক।

লক্ষণ: অবসন্ন ভাব, দুর্বলতা, জন্ডিস, পেটে পানি জমা, রক্তবমি ও রক্তপায়খানা, ক্ষুধামন্দা।

কোলানজিওকারসিনোমা

পিত্তনালির ক্যানসার: লিভারের ভিতরের ও বাইরের পিত্তনালিতে তৈরি এ ক্যানসার দেখা যায়।

লক্ষণ: জন্ডিসই এর প্রধান লক্ষণ।

পরীক্ষা পদ্ধতি

  • ১. সাধারণত আন্ট্রাসনোগ্রাফি পরীক্ষা দ্বারা এই রোগ ধরা যায়। তবে ক্ষেত্র বিশেষ আন্ট্রাসনোগ্রাফিও ব্যর্থ হয়ে যায়।
  • ২. সিরামে বিলিরুবিন বাড়ার কথা থাকলেও অনেক সময় দীর্ঘদিন পরে জন্ডিস দেখা দেয়। কারণ হলো টিউমার হওয়ার পরও দেখা গেছে লিভারের ভালো অংশটুকু স্বাভাবিক কাজকর্ম করছে তাই জন্ডিস তখনও দেখা দেয়নি। এজন্যই বিলিরুবিনের পরিমাণ স্বাভাবিক আছে।
  • ৩. সিটিস্ক্যান রোগ নির্ণয়ের জন্য খুবই উপকারী। তবে দক্ষ ও অভিজ্ঞ টেকনিশিয়ান ও ডাক্তার দরকার।
  • ৪. টিউমার/ক্যানসার মার্কার রোগ নির্ণয়ের ক্ষেত্রে উপকারী। বায়োপসি একমাত্র ভরসা সঠিক রোগ নির্ণয়ের জন্য।
  • ৫. পিভকা-২ নির্ণয় করা যা রক্তে বৃদ্ধি হয়। ক্যানসারে এর মাত্রা বাড়ে।
  • ৬. এন্ডোসকপি করা খুবই জরুরি। লিভার ক্যানসার রোগীদের খাদ্যনালির ও পাকস্থলীর শিরাগুলো ফুলে ওঠে। তাই তা নির্ণয় করা ও ব্যবস্থা দেওয়া জরুরি হয়ে পড়ে।
  • ৭. প্রোকটোসকপি করে মলদ্বারে পাইলস আছে কিনা দেখে নিতে হবে। কারণ ক্যানসার রোগীর মলত্যাগের সময় রক্ত গেলে শুধুমাত্র পাইলস হয়েছে মনেকরলে চিকিৎসা ভুল হয়ে যায়।
  • ৮. এমআরআই, এর দ্বারা সিরোসিসের ছোট ছোট ক্যানসার ধরা সম্ভব হবে।
  • ৯. ল্যাপারোসকপিক পদ্ধতি যা দ্বারা ক্যানসার নির্ণয় করা যায় ।
  • ১০. বুকের এক্সরে দ্বারা ফুসফুসে আক্রান্ত হয়ে থাকলে তা নির্ণয় হয়।
  • ১১. কালার ডপলার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *