ডেঙ্গু জ্বরের চিকিৎসা ও সকল পদ্ধতির ডাক্তারদের বক্তব্য।
ডেঙ্গু (dengue) হলো একধরনের ফ্লাভি ভাইরাস দ্বারা সৃষ্ট ইনফেকশন যা এডিস মশার দংশনের মাধ্যমে বিস্তার লাভ করে। এটি মূলত শহরাঞ্চলে বেশি দেখা যায়। এখানে ডেঙ্গু জ্বরের চিকিৎসা এবং এর বিস্তারিত আলোচনা করা হল।
আমাদের দেশে দুই ধরনের ডেঙ্গু জ্বর দেখা যায়।
- ক্লাসিক্যাল ডেঙ্গু জ্বর।
- হেমোরেজিক ডেঙ্গু জ্বর।
ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ
সাধারণভাবে ডেঙ্গুজ্বরের নিম্ন লিখিত লক্ষণগুলো দেখতে পাওয়া যায়।
- মৃদু থেকে তীব্র মাত্রার জ্বর। জ্বর ২-৩ দিন থেকে তারপর চলে যায় আবার ১-২ দিন পুনরায় দেখা যায়;
- গাত্র বেদনা, মাথা ব্যথা, চোখ ব্যথা ;
- পিঠ ও কোমর বেদনা ;
- দেহে লাল লাল র্যাস হওয়া ;
- হেমোরেজিক ডেঙ্গু ;
- হেমোরেজিক ডেঙ্গুর ক্ষেত্রে প্রথমে উপরোক্ত লক্ষণ দেখা যাবে তারপর দেহের বিভিন্ন স্থান (যেমন- মাড়ি, মলদ্বার, নাক,ত্বক) দিয়ে রক্তক্ষরণ হতে পারে। এছাড়াও রক্তবমি বা আলকাতরার মত কালো পায়খানা হতে পারে। | এর পর রোগী অচেতন হয়ে যেতে পারে। অবশ্যই মনে রাখবেন এই সমস্ত লক্ষণ পরিলক্ষিত হলে ডেঙ্গু জ্বরের চিকিৎসা নিতে অবহেলা করবেন না।
ডেঙ্গু জ্বরের চিকিৎসাঃ
১। যদি জ্বর থাকে তাহলে ডেঙ্গুর ওষুধের বিষয়ে ডাক্তার দের সিদ্ধান্ত “প্যারাসিটামল ট্যাবলেট খেতে হবে”। তবে প্রাপ্ত বয়স্ক দের জন্য নিয়ম হলঃ- ‘২টি করে প্রতি ৬/৮ ঘণ্টা পর পর’। এছাড়া বাচ্চাদের জন্য অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ খেতে হবে।
২। যখন জ্বর থাকবে তখন অবশ্যই রোগী মশারির ভিতরে থাকবে। বাড়ির আশেপাশের এডিস মশার সম্ভাব্য জায়গা গুলো স্প্রে করতে হবে।
৩। ডেঙ্গু রোগীর শরীরে যদি জ্বর থাকে তাহলে বেশ কিছু ঔষধ সেবন থেকে বিরত থাকতে বহবে । যেমনঃ- ব্যথানাশক ঔষধ (এন.এস.এ.আই.ডি গ্রুপ যেমন, ডাইক্লোফেন, আইবুপ্রোফেন, ন্যাপারক্সেন, মেফেন)।
৪। জ্বর কমানোর জন্য শুধুমাত্র প্যারাসিটামল জাতীয় ঔষধ খাওয়ানোই যথেষ্ট। এসপিরিন বা ডাইক্লোফেনাক জাতীয় ব্যথার ঔষধ কোন অবস্থাতেই রোগীকে দেয়া যাবে না। এতে রক্তক্ষরণের ঝুঁকি বাড়ে যাবে।
৫। খেতে না পারলে দরকার হলে রোগীর শিরাপথে স্যালাইন দেওয়া যেতে পারে।
ডেঙ্গু জ্বরের চিকিৎসা এবং ডেঙ্গু প্রতিকারে পদক্ষেপ সমূহঃ-
১। মশার বংশবিস্তারের স্থানগুলো নির্মূল করা –
- বাড়ির বাইরে গাছের টব ও জলাধারগুলো শুকনা এবং পানিশূন্য রাখতে হবে। যেসব জিনিসে বৃষ্টি বা বৃষ্টির পানি জমা হয়, যেমন- পুরনো টায়ার, ডাবের খােসা ইত্যাদি বাসার আশে পাশে না ফেলে ডাস্টবিনে ফেলে দিবেন ;
- টবে যেন পানি জমে না থাকে, সেদিকে খেয়াল রাখুন ;
- ফ্রিজের নিচের ট্রেতে যেন পানি জমে না থাকে, সেদিকে খেয়াল রাখুন ;
- ফুলদানিতে যেন পানি জমে না থাকে, সেদিকে খেয়াল রাখুন ;
- জনস্বাস্থ্যকর্মীরা যাতে স্থির জলাধার, জলাবদ্ধ এলাকা পরিস্কার করে, নির্মাণস্থলে বা বর্জ্য পানি ট্রিটমেন্টের স্থানে স্থির জল সরিয়ে যাতে পাড়ার লোকের স্বাস্থ্যের নিরাপত্তা দেন এজন্য সবাইকে উদ্যোগী হতে হবে।
২। নিজেকে মশার কামড় থেকে রক্ষা করা
- জানালা-দরজায় নেট এবং খাটে মশারি ব্যবহার করতে হবে।
- শিশু, অসুস্থ ব্যক্তি, বৃদ্ধ ইত্যাদি ব্যক্তি যারা দিনের বেলা ঘুমান তাদের মশারি ব্যবহার করতে হবে।
- মশার কয়েল, ভেপর ম্যাট, এরোসল ইত্যাদি ব্যবহার করা যেতে পারে।
- এডিস মশা সাধারণত দিনের বেলা কামড়ায়। তাই এমন কাপড় পরতে হবে যেন শরীরে মশা বসতে না পারে। প্রয়োজনে অনাবৃত অংশে মশা রোধী ক্রিম ব্যবহার করতে হবে ।
অনলাইনে আমাদের অবিজ্ঞ দাক্তারদের থেকে পরামর্শ নেয়ার জন্য এখানে ক্লিক করুন এপয়েন্টমেন্ট
[videogallery id=”dengue-alo”]
[videogallery id=”dengue-homeo”]
[videogallery id=”dengue-harbal”]
ডেঙ্গু রোগীর খাবার
১। প্রোটিন ও আয়রনসমৃদ্ধ খাবার ডেঙ্গু আক্রান্ত ব্যক্তির জন্য সবচেয়ে প্রয়োজনীয় ও গুরুত্বপূর্ণ খাবার ।
২। প্রোটিন বেশি থাকে এমন খাদ্য যেমনঃ- মাছ, মুরগির মাংস, চর্বিহীন লাল মাংস (গরু, ছাগল), ডিম, দুধ ও দুগ্ধজাত খাদ্য। এগুলো রোগীর রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে অনেক বেশি সাহায্য করে।
৩। রোগীর রক্তে প্লাটিলেটের সংখ্যা বাড়াতে বেশি বেশি আয়রনসমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে । আয়রন সমৃদ্ধ খাদ্যের তালিকায় রয়েছে, পালংশাক, সামুদ্রিক মাছ, কলিজা, মিষ্টিকুমড়া, ডালিম, মটরশুঁটি, ছোলা, মসুর ডাল, কচুশাক ইত্যাদি । এগুলো রোগীর শারীরিক দুর্বলতা কাটিয়ে উঠতে অনেক সাহায্য করে থাকে।
৪। ডেঙ্গু রোগীর রক্তক্ষরণ ঝুঁকি কমানোর জন্য ভিটামিন কে জাতীয় খাবার দিতে হবে রোগীকে। যেমন সবুজ শাকসবজি, বাঁধাকপি, ব্রকলি ইত্যাদি খাওয়াতে হবে। এসব খাবারের মধ্যে দরকারি খনিজ উপাদান ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের পরিমাণও বেশি পরিমানে থাকে। প্রতিদিন রোগীকে এই খাবারগুলো খাওয়ালে অবস্থার উন্নতি হবে।
৫। রক্তের প্লাটিলেট বাড়াতে বেশি পরিমানে পেঁপে , বেদানা , ব্রকলি ইত্যাদি খাওয়াতে হবে ।
৬। এছাড়াও অনেক খাদ্য রোগীর জন্য উপকারি হতে পারে। সেগুলো ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী খেতে হবে।