মেহেদী গাছ
প্রচলিত নাম : মেন্দী, বনমল্লিকা, মদয়ন্তিকা
ইংরেজী নাম : Henna, Shamphire
বৈজ্ঞানিক নাম : Lawsonia inermis Linn.
পরিবার : Lythraceae
পরিচিতি : ছোট ঝোপ জাতীয় গাছ, উচ্চতায় ২-৩ মি. পর্যন্ত হয়। শাখা থেকে কাটাযুক্ত উপশাখা বের হয়। ফুল অসংখ্য, ছোট, সাদা বা গোলাপী বর্ণের হয়। ফল ছোট ক্যাপসূল ও গ্লোবুজ। পাতা ডিম্বাকৃতির, বিপরীত, ছোট ও ২-৩ সে. মি. লম্বা হয়।
বিস্তৃতি : বাংলাদেশের সর্বত্র ও বসতবাড়ীর আশেপাশে লাগানো হয়। ভারত, পাকিস্তান ও বাংলাদেশে মেহেদির চাষ হয়। এর আদিবাস উত্তর আফ্রিকা।
ব্যবহার্য অংশ : ফল, পাতা, ফুল ও মূল।
বীজ সংগ্রহ সময় : আগস্ট-সেপ্টেম্বর।
বীজ আহরণ ও বংশ বিস্তার : বর্ষাকালে প্রাপ্তবয়স্ক গাছে সাদা বা গোলাপী রং-এর ছোট ছোট অসংখ্য ফুল দেখা যায়। লম্বা পুষ্পদণ্ডের চারিদিকে ছোট বোঁটা বিশিষ্ট ফুল হয়। আকন্দ, সর্পগন্ধা ও ধুতুরার মত একই সময় ফুল ও ফল দেখা যায়। প্রায় মটর দানার আকারের ধুসর বর্ণের ফলের ভিতর ছোট ছোট ৮৫-৯৫টি বীজ থাকে। বীজ অথবা অঙ্গজভাবে (শাখা কাটিং) মেহেদির বংশ বিস্তার সম্ভব। তবে কাটিং-এর সাহায্যে নতুন চারা উত্তোলন সহজ বলে আমাদের দেশে এ পদ্ধতিই অবলম্বন করা হয় এবং এক্ষেত্রে শতকরা ৭০-৮০টি চারা সহজেই পাওয়া যায়। সাধারণতঃ ৬ মাসের কাটিং রোপণের জন্য উপযুক্ত এবং ৪/৫ বৎসরের গাছ থেকে পাতা আহরণ শুরু করা যায়।
সাধারণ ব্যবহার : কাঠের তেমন কোন ব্যবহার নাই। তবে যন্ত্রের হাতল বা তাবুর খুঁটি হিসেবে ব্যবহৃত হয়। পাতার রস মেহেদী রং (হালকা কমলা) হিসেবে হাত, আঙ্গুল ও নখ রাঙ্গানোর জন্য ব্যবহৃত হয় এবং চুল, দাড়ি, চোখের ব্রু-তে দিলে চেস্টনাট বাদামী সেড দেখায় এবং নীলের সাথে দিলে কালো হয়। কেটেচুর সাথে এ রং মিশালে গাঢ় লাল হয়। মেহেদী রস উল, সিল্ক ও সুতার কাপড়ে লাল বাদামী হাল্কা সেড দেয়ার জন্য ব্যবহৃত হয়। পাতা থেকে সুগন্ধি তেল হয়।
বিস্তার ও চাষাবাদ : সর্বজনপরিচিত এ গাছটি সাধারণতঃ বেড়ার ধারে এবং বাড়ীর আংগিনায় লাগানো হয়। কাটিং দিয়ে ইহার বংশ বিস্তার করা উত্তম। বর্ষাকালে কাটিং করে কাটিং বীজ তলায় লাগালে ভাল হয়। শতকরা ৭০/৮০টি কাটিং সফলতা লাভ করে। মূলসমেত কাটিং সরাসরি মাঠে লাগানো যায় অথবা মাটি ও গোবর (৩:১) ভর্তি পলিথিনের ব্যাগে কিছুদিন রেখে তারপর লাগানো যেতে পারে।
ঔষধি ব্যবহার :
১. মেন্দি পাতার রস ও সরষে তৈল মিশিয়ে ঘাড়ে মালিশ করলে ঘাড়ের ব্যথা কমে যায়। এমনকি গরুর ঘাড়ের ব্যথাও কমে।
২. এ পাতা বেটে নখে ও চুলে লাগালে নখ ও চুল ভাল থাকে।
৩. পায়ের তলায় পাতা বাটার প্রলেপ দিলে চোখে গুটি ওঠে না।
৪. পাতা বেটে পুরানো একজিমায় লাগলে ভাল ফল পাওয়া যায়।
৫. পাতা বেটে হাতে লাগালে লাল হয়। অনেকে পাকা চুলেও ব্যবহার করেন।
৬. ইউনানী চিকিৎসকদের মতে, চুল উঠে যাওয়া বা পাকায় ১টি হরিতকি ও ১০/১২ গ্রাম মেহেদি পাতা একটু থেতো করে ২৫০ মি.গ্রা. পানিতে সেদ্ধ করে ৬০-৭০ মি.লি. থাকতে নামিয়ে হেঁকে ঠাণ্ডা হলে মাথায় লাগালে উপকার পাওয়া যায় ।
৭. শ্বেতপ্রদরে ২৫ গ্রাম মেহেদি পাতা সেদ্ধ করে সেই পানিতে উত্তরবস্তি (ডুশ দেওয়া) দিলে সাদাস্রাব ও অভ্যন্তরের চুলকানি প্রশমিত হয়। স্থানভ্রষ্ট জরায়ুর ক্ষেত্রেও উপযুক্ত পদ্ধতি প্রয়োগ করলে অসুবিধা কমে যায়।
৮. শুক্রমেহ রোগে মেহেদি পাতার রস এক চা-চামচ দিনে দুবার পানি বা দুধের সাথে একটু চিনি মিশিয়ে খেলে এক সপ্তাহের মধ্যে উপকার পাওয়া যায় ।
৯. মুখ ও গলার ক্ষতে পাতা সেদ্ধ পানি মুখে খানিক্ষণ রাখলে (কেবল ধারণ) সেরে যায়।
১০. গ্রীষ্মকালে খেমে গিয়ে গায়ে দুর্গন্ধ হলে মেহেদি পাতা ও বেণামূল সেদ্ধ পানিতে গোসল করলে উপকার পাবেন ।
১১. কানে পুঁজ হলে এ পাতার রস ২ ফোটা করে কানে দিলে ৪/৫ দিনে পুঁজ পড়া বন্ধ হয়ে যায় ।
১২. চোখ ওঠায় অল্প কয়েকটা পাতা থেঁতো করে গরম পানিতে ফেলে ছেকে সেই পানির ফোটা চোখে দিলে সেরে যায়। এমনকি চোখের কোণ থেকে পুঁজের মত পড়তে থাকলেও এটি ব্যবহারে সেরে যায়।
১৩. প্রাচীনপন্থী বৈদ্য সম্প্রদায়ের মতে শরীরে হিমোগ্লোবিন সঠিক পরিমাণে আছে কি না জানার জন্য এটি ব্যবহার করা হয়। মেহেদি পাতা বাটা হাতের তালুতে লাগালে রংটা লালচে আভা দিলে ভাল, না হলে হিমোগ্লোবিন কম আছে বলে ধারণা করা হয়।
১৪. আগের দিনে নবাব-বাদশাহদের অনিদ্রা রোগ হলে মেহেদি ফুলের বালিশে ঘুমানোর পরামর্শ দেয়া হত। এতে আছে লাইলাকের (আধুনিক এক প্রকার প্রসিদ্ধ সুগন্ধি) গন্ধ। চরক সংহিতায় বলা হয়েছে গন্ধটি পার্থিব সত্তায় সমৃদ্ধ।
রাসায়নিক উপদান : a) Essential oil, b) Glycoside, c) Colouring matter viz. 2 hydroxyalphnapthoquinone d) Other constituents viz. hennotannic acid and e) Fatty alcoholer