গিমেশাক
প্রচলিত নাম : গিমাশাক
ইংরেজী নাম : Ghima sak
বৈজ্ঞানিক নাম : Mollugo oppositifolia Linn.
পরিবার : Molluginaceae
পরিচিতি : গিমে শাকের লতানো শাখা-প্রশাখা গুচ্ছাকারে গাছের গোড়া থেকে চারদিকে ছড়িয়ে ভূমির/মাটির উপর দিকে বেয়ে চলে । গ্রামের ক্ষেতে, ময়দানে, পুকুর বা জলাশয়ের ধারে এদের অনাদৃত হয়ে বেড়ে উঠতে দেখা যায়। সরু লতার পত্ৰসন্ধি থেকে বিপরীতমুখী হয়ে ছোট ছোট পাতা বের হয়। পাতার আকার ছোট-বড় বিভিন্ন আকৃতির হয়ে থাকে। সবুজ ছোট ছোট পাতাসহ কচি আগা/ডগা খাওয়ার জন্য ব্যবহার করা হয়। এটি তিক্ত স্বাদের। এটি একেক অঞ্চলে একেক নামে পরিচিত। কোথাও টিমে, আবার কোথাওবা গিমা বা জিমা নামে অবিহিত হয়। সংস্কৃতে এটি পরিচিত গ্রীষ্ম সুন্দরকে হিসেবে। গ্রীষ্মের শেষে গাছে ছোট ছোট ফুল ও ফল হয়।
বিস্তৃতি : গিমে শাকের বিস্তৃতি সম্বন্ধে ঋকবেদে বলা হয়েছে-বিষুব রেখার পাশে লম্বিত ভূখণ্ডে গিমে শাক যে অঞ্চলে যে ধরনের রোগের প্রাদুর্ভাব বেশী সে স্থানে ঐ রোগ প্রতিরোধক বেশী জন্মে বলে ভেষজ শাস্ত্রের মূলনীতির সার্থক প্রমাণ হচ্ছে গিমে শাক। গ্রীষ্মকালে প্রকৃতির আর সব উদ্ভিদ যখন প্রায় শুষ্ক হয়ে যায়, তখন গিমে শাকই তরতাজা হয়ে ওঠে। রোদের প্রখরতা যত বাড়ে, গিমে শাকও তত সতেজ হয়। বাংলাদেশে গ্রামের মাঠে-ময়দানে সর্বত্রই এ শাক জন্মে।
বংশ বিস্তার : গিমে শাক উষ্ণ ও আর্দ্র মাটিতে ভাল জন্মে। কোন স্থান থেকে শিকড় বা গিটসহ গিমে শাকের লতা এনে মাটিতে পুঁতে দিলেই নতুন গাছ হয়ে বেড়ে উঠবে।
ঔষধি ব্যবহার :
১) অম্লপিত্ত রোগে যাদের বমি হয়, তারা গিমে পাতার ১ চামচ রসের সাথে আমলকি ভিজানো পানি আধাকাপ মিশিয়ে সকালে খেলে অচিরেই বমি ভাব দুর হবে।
২) চোখ উঠলে বা চোখে পিচুটি পড়লে, গিমে পাতা সেঁকে নিয়ে তার রস ফোটা ফোটা করে চোখে দিলে চোখের করকরানি কমে, পিচুটি পড়া বন্ধ হয়।
৩) লিভারের সমস্যা দেখা দিলে সপ্তাহে ৩/৪ দিন অল্প পরিমাণে গিমে শাক খেলে করলে যকৃতের ক্রিয়া স্বাভাবিক হয়ে আসে।
৪) আয়ুর্বেদাচার্য কালিপদ ভট্টাচার্য তার গ্রন্থে লিখেছেন—নিঃসন্দেহ যে, মহিলারা ডিসমেনোরিয়া (কষ্টরজ) ভুগলে গিমে শাক খেলে সে সমস্যা থেকে রেহাই পাবেন। তবে যাদের স্রাবের আধিক্য আছে তারা এটা খাবেন না।
৫) সর্বোপরি, আহার্যের সাথে মাঝে মাঝে শাক হিসেবে বা ফুলুরির মত বড়া করে গিমে শাক খেলে কিছু না কিছু উপকার হয়।
গিমে শাকে সাবান পানির ফেনার মত কিছু পিচ্ছিল পদার্থ আছে, তার নাম স্যাপেনিন। এর থেকে কতগুলো নতুন ধরনের টাইটারপিন জাতীয় দ্রব্য পাওয়া যায়। বর্তমানে এটি মানুষের রোগের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করে উপযোগিতার ক্ষেত্র অনুসন্ধান করা প্রয়োজন।
রাসায়নিক উপাদান: a) Saponin, b) Vitamin viz, carotene, c) Fatty acid, d) Glucoside, e) Alkaloid, f) Highly essential oil.