স্ত্রী প্রজননতন্ত্র
স্ত্রী প্রজননতন্ত্র
মহিলাদের প্রজননক্রিয়া সম্পাদনকারী অঙ্গ ও টিস্যু সমুহকে সম্মিলিত ভাবে ফিমেল রিপ্রোপ্রোডাকটিভ সিস্টেম (female reproductive system) স্ত্রী প্রজনন তন্ত্র নামে আখ্যায়িত করা হয়।
স্ত্রী প্রজনন ক্রিয়া
স্ত্রী প্রজননক্রিয়ার অন্তর্ভুক্ত রয়েছে
হরমোন নিঃসরনের মাধ্যমে স্ত্রী জনন কার্যনিয়ন্ত্রন।
ওভুলেশন ( ওভাম তৈরির প্রক্রিয়া)
যৌন ক্রিয়া সম্পাদন
স্ত্রী প্রজনন অঙ্গসমুহ
প্রাথমিক জননাঙ্গ
ডিম্বাশয় বা ওভারী
আনুষাঙ্গিক (সেকন্ডারী)
ফ্যালোপিয়ান টিউব
ইউটেরাস বা গর্ভাশয়
ভ্যাজাইনা বা যৌন পথ
বার্থোলিন গ্রন্থি
ভালবা
অন্যান্য
স্তন
প্লাসেন্টা বা অমরা
ওভারী বা ডিম্বাশয়
ওভারী (ovary) হলো একজোড়া (ডান ও বাম)স্ত্রী প্রজনন অঙ্গ যা লেসার পেলভিসে অবস্থিত। এটি মহিলাদের প্রায়মারী সেক্স অরগান (প্রাথমিক জননাঙ্গ)। প্রিফিক্স/সাফিক্স উফুর দ্বারা ওভারী বোঝায়।
এটি লেসার পেলভিসে ইউটেরাসের নিকটে অবস্থান করে। এটি হাইপোগ্যাস্ট্রিক রিজিওনে অবস্থান করে। এর আকার: উলম্ব দৈর্ঘ্য: ৩ সেমি, সম্মুখ পশ্চাৎ-১.৫ সেমি, আড়াআড়ি ১ সেমি ।
ওভারী ওভাম তৈরি করে এবং স্ত্রী প্রজনন হরমোন এস্ট্রোজেন ও প্রজেস্টেরন নিঃসরণ করে।
স্ত্রী প্রজনন হরমোন
স্ত্রী প্রজননের জন্য প্রয়োজনীয় হরমোন সমূহ
এস্ট্রোজেন ও প্রজেস্টেরন প্রধান স্ত্রী হরমোন। এগুলো মূলত ওভারীতে তৈরি হয়। এই হরমোনের প্রভাবেই একজন নারী দেহ গড়ে ওঠে, জননাঙ্গ বৃদ্ধি ও বিকশিত হয়। তবে প্লাসেন্টা থেকেও এস্ট্রোজেন ও প্রজেস্টেরন তৈরি হয়।
ওভুলেশন
প্রতি মাসে মহিলাদের ওভারী ( সাধারণত পর্যায়ক্রমে একটি ) থেকে একটি ডিম্বানু পরিপক্ক হয়ে ওভারী থেকে বের হয়ে ফেলোপিয়ান টিউবে আসে। এই প্রক্রিয়াকে ওভুলেশন বলা হয়। এই ওভাম পুরুষ শুক্রানুর সংস্পর্শে আসলে তা নিষিক্ত হয়ে ভ্রুনে পরিণত হয়। সাধারনত মাসিক চক্রের ১৪ + ১ তারিখে এই ওভুলেশন সংঘটিত হয়।
ইউটেরাস বা গর্ভাশয়
ইউটেরাস (uterus) বা গর্ভাশয় বা জরায়ু একটি পেশী দ্বারা তৈরি পুরু দেয়াল বিশিষ্ট ফাঁপা অঙ্গ যা লেজার পেলভিসে আড়াআড়ি ভাবে অবস্থান করে এবং মহিলাদের সন্তান ধারনের অঙ্গ হিসেবে কাজ করে। প্রিফিক্স/ সাফিক্স হিস্টেরো দ্বারা। ইউটেরাস কে বোঝায়।
ইউটেরাস পেলভিসে ব্লাডার ও রেকটামের মধ্যস্থলে অবস্থিত। গর্ভহীন অবস্থায় এটি হাইপোগ্যাস্ট্রিক অঞ্চলে অবস্থান করে। গর্ভকালীন সময় এটি এপিগ্যাস্ট্রিক পর্যন্ত। পৌছাতে পারে।
গর্ভকালীন অবস্থায় ইউটেরাসের আকার বৃহৎ হয় এবং মেনোপজের পর শীর্ণতা প্রাপ্তি হয়। গর্ভধারণ করেনি এমন ইউটেরাসের গড় আকৃতি- দৈঘ্য- ৭.৫ সেমি। সর্বোচ্চ প্রস্থ (ফান্ডাসে)-৫ সেমি। পুরুত্ব-২.৫ সেমি। ওজন-৩০-৪০ গ্রাম।
মাসিক চক্র
মহিলাদের জরায়ু ও অন্যান্য জননাঙ্গে (ওভারী, জরায়ু মুখ ও জনন পথ) আবর্তনমুলক যে পরিবর্তন হয় এবং জরায়ু থেকে রক্ত ক্ষরন (মাসিক) ও অন্তবর্তীকাল সমন্বয়ে প্রকাশিত হয় তাকে মেস্ট্রয়াল সাইকেল (menstrual cycle) বা মাসিক চক্র বলে। এই চক্রের স্বাভাবিক স্থায়ীত্বকাল গড়ে ২৮ দিন। এর তিনটি পর্যায় রয়েছে প্রথম পর্যায়ে জরায়ুর অভ্যন্তরস্থ কোষের স্তর বৃদ্ধি পেতে থাকে, দ্বিতীয় পর্যায়ে এই স্তরগুলো বিকশিত হয়, যদি ভ্রুনের সৃষ্টি না হয় তবে তৃতীয় পর্যায় সংঘটিত হয় এবং জরায়ুর অভ্যন্তরে গড়ে ওঠা স্তর ভেঙ্গে গিয়ে রক্তক্ষরনের সাথে তা বেরিয়ে আসে । এই রক্তক্ষরনকে মাসিক বলা হয়। মাসিককে চক্রের তৃতীয় পর্যায় বলা হলেও মাসিক চক্রের প্রথম দিন হলো যেদিন মাসিক শুরু হয় সেদিন।
মেট্টয়েশন বা মাসিক
গর্ভহীন জরায়ু হতে পর্যায়ক্রমিক (আবর্তনমুলকভাবে মৃত কোষ কলা ও রক্ত জননপথ দ্বারা বের হয়ে যাওয়াকে মেট্রুয়েশন (menstruation) বা মাসিক বলে।
মহিলাদের প্রজনন কালীন সময়ে ২৮ দিন পর পর চক্রাকারে জরায়ু হতে রক্ত, মৃত কোষ, অনিষিক্ত ডিম্বানু বের হয়ে যাওয়াকে মাসিক (মেন্সট্রুয়েশন ) নামে অভিহিত করা হয়। মাসিকের গড় ব্যপ্তিকাল ৪-৭ দিন।
মাসিকের রক্তের গাঠনিক উপাদান
রক্ত (৩০-৭০ মিলি), ধ্বংশ প্রাপ্ত এপিথেলিয়াল টিস্যু, মিউকাস, লিউকোসাইট, ব্যকটেরিয়া, ফিব্রিনোলাইসিন ইত্যাদি।
গর্ভ ধারণ
ওবাম বা ডিম্বানু ও স্পর্শ বা শুক্রানু মিলিত হলে সেখানে প্রথমে জাইগোট সৃষ্টি হয়। এই জাইগোট সৃষ্টি ফ্যালোপিয়ান টিউবে সংঘটিত হয়। পরবর্তীতে এই জাইগোট জরায়ুতে স্থাপিত হয় এবং ভ্রুনের সৃষ্টি হয়। এই ভ্রুন একসময় বৃদ্ধি ও বিকাশ লাভ করে পুর্নাঙ্গ শিশু হিসেবে ভুমিষ্ট হয়। এভাবে জরায়ুতে ভ্রুনের অবস্থান করাকেই গর্ভধারন বলা হয় । গর্ভাবস্থায় প্লাসেন্টা নামক একটি অঙ্গের সৃষ্টি হয় যা ভ্রুন ও মায়ের মাঝে সম্পর্ক স্থাপন করে। এছাড়াও গর্ভাবস্থায় স্তনও আকারে বৃদ্ধি পায় ও বিকশিত হয়। উল্লেখ্য গর্ভাবস্থায় মাসিক বন্ধ থাকে।
গর্ভকালীন সময় মাসিক
যদি ডিম্বানু নিষিক্ত না হয় তবে আকস্মিক ভাবে রক্তের এস্ট্রোজেন ও প্রোপ্রোজেস্টেরনের পরিমল কমে ২১ বলে ওভুলেশনের পর ১৪ তম দিনে মাসিক (রক্তক্ষরণ) হয়। যদি ভিষন ভিষিক্ত হয় তবে প্লাসেন্টা (অমরা)-র ট্রফোব্লাস্টিক কোষ প্রচুর পরিমান হিউমেলা কে ঠনিক গোনাডোট্রপিন হরমোন নিঃসরন করে যা করপাস লুটিয়াম কে বিলুপ্ত হতে দেয় না। ফলে করপাস লুটিয়াম পর্যাপ্ত এস্ট্রোজেন ও প্রোপ্রোজেস্টেরন নিঃসরণ কত্র এবং ফলশ্রুতিতে এন্ডোমেট্রিয়ামের বৃদ্ধি চলতে থাকে ও মাসিক বাধা গ্রস্ত হয়। এই গর্বরনকালীন সময়ে মাসিক হয়না।
ইউটেরাইন টিউৰ ৰা ফেলোপিয়ান টিউব
ইউটেরইন টিউব (uterine tube) হলো এক জোড়া (ডান ও বাম) আঁকাবাঁকা নালীক যা তরী থেকে ইউটেরাস ক্যাভিটি (গভাশয় বা জরায়ু গহবর) পর্যন্ত ডিম্বানু বহন করে। একে কেলোপিয়ান টিউব (fallopian tube) নামেও অভিহিত করা হয়। ইউটেরাইন টিউৰ ব্ৰভলিগামেন্টের উৰ্দ্ধ মুক্ত প্রান্তে অবস্থান করে। এটি হাইপেট্র অঞ্চলে অবস্থান করে। এর আকার- দৈর্ঘ্য: ১০ সেমি। প্রস্থ: ৩ মিমি।
ভ্যাজাইনা
ভ্যাজাইনা (vagina) হলো ফাইব্রোমাসকুলার ক্যানেল (পেশী ও স্তু দ্বারা তৈরি পথ) যা মহিলাদের সঙ্গম অঙ্গ। প্রিফিক্স/সাফিক্স কলপো দ্বারা ভ্যাজাইনাকে বোঝায়।
ভ্যাজাইনা পেলভিসে অবস্থান করে। এটি হাইপোগ্যাস্ট্রিক অঞ্চলে অবস্থিত।
এটি ভালবা থেকে ইউটেরাস পর্যন্ত বিস্তৃত। ইউটেরাসের সাথে ৪৫° কোণ তৈরি করে অবস্থান করে। এর দৈর্ঘ্য: সম্মুখদেয়াল- ৮ সেমি, পশ্চাৎ- ১০ সেমি। এর ব্যাস: ভল্ট বা উপরের প্রান্ত- ৫ সেমি। নিচের প্রান্ত- ২.৫ সেমি।
(কুমারী মেয়েদের ক্ষেত্রে নিচের প্রান্ত একটি ঝিল্লির পদা দ্বারা আংশিক আবৃত থাকে একে হাইমেন বা সতীচ্ছদ্দ বলে।
বার্থোলিন গ্ল্যান্ড
বার্থোলিন (bartholin) গ্ল্যান্ড হলো একজোড়া (ডান ও বাম)যা ভ্যাজাইনার রন্ধ্রপথের নিকটে অবস্থান করে। এদের গ্রেটার ভেস্টিবুলার গ্ল্যান্ড, নামেও অভিহিত করা হয়। এগুলো পুরুষের বানোইউরেথ্রাল গ্ল্যান্ডের সমগোত্রীয়।
বার্থোলিন গ্ল্যান্ড ভ্যাজাইনার রন্ধপথের পার্শ্ব-পশ্চাৎ দিকে অবস্থান করে। এরা ভ্যাজাইনাকে পিচ্ছিল করার জন্য মিউকার নিঃসরণ করে। মহিলারা যৌণ উত্তেজনা লাভ করলে বার্থোলিন গ্ল্যান্ড তরল পদার্থ নিঃসরণ করে।
ভালভা
মহিলাদের বাহ্যিক জননাঙ্গকে ভালভা (valva) নামে আখ্যায়িত করা হয়। একে পিউডেম ও বলা হয়। ভালভা বা পিউডেন্ডামের অন্তর্ভূক্ত রয়েছে
মনস পিউবিস (mons pubis)
পিউবিক সিম্ফাইসিসের সম্মুখের গোলাকার উন্নতি। এটি ত্বকের নিচে একগুচ্ছ চর্বি সঞ্চিত হয়ে গঠিত হয়। বয়সন্ধির সময় এটি কেশ দ্বারা আবৃত হয়।
ল্যাবিয়া মেজরা (labia majora)
মনস পিউবিস হতে নিম্ন-পশ্চাৎ দিকে গমনকারী দুটি উলম্ব ত্বকের ভাঁজ বিশেষ। ল্যাবিয়া মেজরা পিউডেন্ডাল ক্লেফট বা রিমার সীমা তৈরি করে (যেখানে ভ্যাজাইনা ও ইউরেথ্রার রন্ধ পথ বিদ্যমান)। প্রতিটি ল্যাবিয়ার বাহ্যিক পৃষ্ঠ পিগমেন্টেড (গাঢ় বর্ণ) এবং দৃঢ় কেশ দ্বারা আবৃত। আভ্যন্তরিন পৃষ্ঠ মসৃণ এবং বৃহৎ সিবাসিয়াস ফলিকল বহন করে।
ল্যাবিয়া মাইনরা (labia minora)
ল্যাবিয়া মাইনরা হলো দুটি ক্ষুদ্রাকতির তুকের ভাঁজ (কিউনেটিয়াস ফোল্ড) যা ল্যাবিয়া মেজরার মাঝে অবস্থান করে। এটি কেশ বিহীন। কুমারীদের ক্ষেত্রে সাধারণত ল্যারিয়া মাইনরার পশ্চাৎ প্রান্ত একটি তুকের ভাঁজ দ্বারা মধ্যরেখা বরাবর সংযুক্ত থাকে, একে ল্যাবিয়ার ফ্রেনুলাম বা ফরচিট বলে।
ক্লাইটোরিস (clitoris)
ক্লাইটোরিস হলো একটি ইরেকটাইল বস্তু (উত্থানক্ষম)। ক্লাইটোরিস মসৃন ত্বক দ্বারা আবৃত থাকে। এর উন্মুক্ত অংশ (গ্ল্যানস ক্লাইটোরিস) অতিমাত্রায় স্পর্শ কাতর।
ভেস্টিবুল (vestibule)
ল্যাবিয়া মাইনরার মাঝের অংশকে ভ্যাজাইনার ভেসটিবুল বলে। এখানে ইউরেথ্রা, ভ্যাজাইনা ও বার্থোলিন গ্ল্যান্ড-এর রন্ধ্রপথ দেখা যায়।
বাহ্যিক মুত্র রন্ধ্র এটি গ্ল্যান্স ক্লাইটোরিসের ২.৫ সেমি পশ্চাতে এবং ভ্যাজাইনার ঠিক সম্মুখে অবস্থিত।
ভ্যাজাইনাল অরিফিস(vaginal orifice)
এটি একটি মিডিয়ান স্লিট (মধ্যরেখা বরাবর রন্ধ্র) যা ইউরেথ্রার রন্ধ্র পথের ঠিক নিচে ও পেছনে অবস্থান করে। কুমারীদের ক্ষেত্রে এটি ক্ষুদ্র রন্ধ্র যুক্ত একটি মিউকাস মেমব্রেনের ভাঁজ দ্বারা আবৃত যাকে হাইমেন বা সতিচ্ছদ্দ নামে অভিহিত করা হয়।
প্রান্সেস্টা ৰা অমরা বা গর্ভফুল
প্লাসেন্টা (placenta) বা অমরা বা গর্ভফুল একটি আনুসাঙ্গিক স্ত্রী জনন অংগ যা। গর্ভকালীন সময়ে সৃষ্টি হয় এবং স্ক্রন ও মায়ের মাঝে একটি যোগাযোগের পথ তৈরি করে। প্লাসেন্টা একটি গুরুত্বপুর্ণ ভ্রণ ঝিল্লি যা অস্থায়ী অন্তক্ষরা গ্রন্থি হিসেবে কাজ করে এবং ন ও মায়ের মাঝে একটি যোগাযোগের পথ তৈরি করে। এটি দুটি উৎস হতে সৃষ্ট জ্বণীয় অংশ ও মায়ের অংশ
প্লাসেন্টার কাজ হলো মা থেকে নে অক্সিজেন সরবরাহ করা। স্ক্রন থেকে কার্বনডাইঅক্সাইড মার রক্তে পৌছে দেয়া। পুষ্টি উপাদান, হরমোন, ভিটামিন ইত্যাদি মা থেকে নে পরিবহন করা। ভ্রুনের বিপাকীয় বর্জ্য পদার্থ বের করে দেয়া। হরমোন নিঃসরন করা। মা হতে ক্ষতিকর পদার্থ নে প্রবেশের ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি করা ।
ব্রেস্ট ৰা স্তন
আপার লিম্বের পেকটোরাল অঞ্চলে ম্যামারী গ্ল্যান্ড বা ব্রেস্ট (breast) বা স্তন নামক একজোড়া গ্রন্থি দৃশ্যমান। সাধারণভাবে ব্রেস্ট-কে থোরাসিক বা বৃক্ষের অঙ্গ মনে হলেও প্রকৃত পক্ষে এর অবস্থান আপার লিম্বে | পুরুষ ও স্ত্রী উভয়ের ক্ষেত্রেই স্তন বা ব্রেস্ট দেখতে পাওয়া যায়। স্ত্রী স্তন সুগঠিত। পূর্বপদ মাস্ট স্তন বোঝাতে ব্যবহার করা হয়। ফিমেল ব্রেস্ট স্ত্রী স্তন একটি রূপান্তরিত ঘর্ম গ্রন্থি যা দুগ্ধ নিঃসরণ করে। এটি স্ত্রী জনন তন্ত্রের একটি আনুসাঙ্গিক অঙ্গ।
বুকের প্রতি পাশে একটি করে স্তন রয়েছে। উক্ত অঞ্চলটিকে পেকটোরাল রিজিওন নামে অভিহিত করা হয়। স্তনের আকার ও বিস্তৃতি বংশগতি, বয়স, স্তন্যদান ইত্যাদির উপর নির্ভর করে। একজন কুমারীর চেয়ে দুগ্ধনিঃসরণরত স্তন আকারে বড়।
স্তনের:গঠন
বাহ্যিক বৈশিষ্ট্য
নিপন বা স্তন বৃন্ত: এটি একটি কণকাকৃতি বা বর্তুলাকার বিবর্ধণ যা স্তনের। কেন্দ্রে ও চতুর্থ ইন্টারকোস্টাল স্থান বরাবর (শশায়া অবস্থায়) অবস্থান করে | এটি ইরেকটাইল (উত্থানক্ষম) মাসকুলার টিস্যু দ্বারা গঠিত। নিপল-এ দুগ্ধ নিঃসরণের জন্য ১৫-২০ টি রন্ধ্রপথ রয়েছে।
এরিওলা: এটি চক্রাকার রঞ্জিত (গাঢ় বর্ণ বিশিষ্ট অর্থে) অঞ্চল যা নিপল বা স্তন বৃন্তের ভিত্তির চারপাশে অবস্থান করে। প্রথম গর্ভধারণের পর গাঢ়ত্ব অপ্রত্যাবর্তনশীল ভাবে আরো গাঢ় বর্ণ ধারণ করে। এরিওলার বাইরের সীমায় কিছুসংক্ষক বিশেষ সিবাসিয়াস গ্রন্থি থাকে যাদের মন্টেগুমেন্টারী টিউবারকল নামে অভিহিত করা হয়।
বডি বা দেহঃবডি বা দেহ আকারে গোলাকার।
টেইল বা পুচ্ছ: এটি এক্সিলা পর্যন্ত বিস্তৃত।
আভ্যন্তরিণ বৈশিষ্ট্য
আভ্যন্তরিনভাবে ব্রেস্ট বা স্তন নিম্নভাবে গঠিত
গ্ল্যাভুলার টিস্যু: গ্ল্যান্ডটি ১৫-২০ টি লোবে সজ্জিত। প্রতিটি লোব এলভিওলাই নামক প্রচুর দুগ্ধ নিঃসরণকারী গুচ্ছ দ্বারা গঠিত। এলভিওলাই এর ক্ষরণ ল্যাকটিফেরাস ডাক্টের প্রান্তিয় অংশে পতিত হয় এবং সেখান থেকে ল্যাকটিফেরাস ডাক্টে (প্রতিটি ললাবের জন্য একটি করে) পতিত হয়। এরিওলার নিকট ল্যাকটিফেরাস ডাক্ট প্রসারিত হয়ে ল্যাকটিফেরাস সাইনাস গঠন করে, যা দুগ্ধের আধার হিসেবে কাজ করে। অবশেষে ল্যাকটিফেরাস সাইনাস নিপলে উন্মুক্ত হয়।
ফাইব্রাস টিস্যু: ফাইব্রাস টিস্যু লোবকে ধারণ করে এবং সেপটা (বিভাজন) গঠন করে। ফাইব্রাস ব্যান্ড (ফিতা অর্থে) সমূহ সাসপেনসরি লিগামেন্ট অব কুপার নামে পরিচিত।
ইন্টারলোবার ফ্যাটি টিস্যু: ফ্যাটি টিস্যু ব্রেস্ট বা স্তন কে গোলাকার আকৃতি প্রদান করে। এডিপোসাইট প্রধান ফ্যাটি সেল (চর্বি কোষ)।
স্তন্যদান
স্তনের এলভিওলাইয়ে দুগ্ধ নিঃসরন থেকে শুরু করে বৃন্ত দ্বারা বাইরে বের হওয়া পর্যন্ত সকল প্রক্রিয়ার সমন্বিত নাম ল্যাকটেশন (lactation) বা স্তন্যদান। পোল্যাকটিং ও অক্সিটোসিন নামক দুটি হরমোনের প্রভাবে এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়।