ফ্যাটি লিভারের চিকিৎসা ও সকল পদ্ধতির ডাক্তারদের বক্তব্য।
Treatment of fatty liver and all the procedures of the doctors.
ফ্যাটি লিভার বা লিভারে চর্বিঃ
আমাদের লিভার সাধারণত পাঁচ থেকে ছয় শতাংশ চর্বি শোষণ করতে পারে। এর চেয়ে বেশি চর্বি লিভারে জমা হলে আমরা একে ফ্যাটি লিভার বলি। সময় মতো চিকিৎসা না করার ফলে লিভার সিরোসিস হতে পারে।
আমাদের লিভার শরীর সুস্থ রাখতে নানান রকম কাজ করে থাকে। যেমন শরীরের জন্য প্রোটিন তৈরি করা, হজমের জন্য পিত্ত সরবরাহ করা, পুষ্টিকে শক্তিতে রূপান্তরিত করা এবং রক্ত থেকে ব্যাকটেরিয়া ও টক্সিনগুলি সরিয়ে আমাদের বহু রোগ আক্রান্ত হওয়া থেকে রক্ষা করে।
কি কারনে ফ্যাটি লিভার হয়?
অনিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাস এবং আরামপ্রদ জীবনযাপন লিভার কোষে অতিরিক্ত চর্বি জমার প্রবণতা বাড়িয়ে দেয়। এছাড়াও শরীরের অন্যান্য অবস্থা বা রোগের কারণেও ফ্যাটি লিভার রোগ দেখা যায়, যেমন— অতিরিক্ত ওজন, ডায়াবেটিস, রক্তে কোলেস্টোরোলের আধিক্য, ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্টস, হাইপারটেনশন, হেপাটাইটিস বি অথবা সি এবং অ্যালকোহল ইত্যাদি।
ফ্যাটি লিভারের কারনে কি কি রোগ হয়?
লিভারে অতিরিক্ত চর্বি জমার কারণে প্রদাহ এমনকি ক্ষত তৈরি হয়, যা থেকে পরবর্তীতে সিরোসিস বা লিভার ক্যানসারও হতে পারে।
তবে চিন্তার কারণ নেই, প্রাথমিক পর্যায়ে ধরা পড়লে ফ্যাটি লিভার রোগ নিরাময় এবং রোগের পরবর্তী জটিলতা প্রতিরোধ করা সম্ভব। শুধুমাত্র ঔষধই যথেষ্ট নয়, দৈনন্দিন ব্যায়াম এবং খাদ্যাভ্যাসের নিয়ন্ত্রণও অত্যন্ত জরুরি। ব্যায়াম ও খাদ্যতালিকা একজন অভিজ্ঞ ডাক্তারের মাধ্যমে নির্ধারন করে নিতে হবে।
ফ্যাটি লিভারের চিকিৎসাকালীন এবং চিকিৎসা পরবর্তী সময়ে করণীয় কি?
- প্রতিদিন ন্যূনতম ৩০-৪৫ মিনিট ঘাম ঝরিয়ে হাঁটুন/ব্যায়াম করুন।
- প্রতিদিনের গ্রহণকৃত খাবারের ক্যালরি মাত্রায় যেন ১২০০-১৪০০ কিলোক্যালরি অতিক্রম না করে ।
- স্বাস্থ্যসম্মত খাবার, পর্যাপ্ত পরিমাণে আঁশসমৃদ্ধ খাবার, সবুজ শাকসবজি এবং ফলমূল গ্রহণ করুন।
- অতিরিক্ত তৈলাক্ত এবং চর্বিযুক্ত খাবার যেমন: ক্রিম, চিজ, ঘি, বাটার, চর্বিযুক্ত মাংস, চকলেট ইত্যাদি খাদ্যাভ্যাস নিয়ন্ত্রণে রাখুন ।
- ধূমপান, মদ্যপান এবং অন্যান্য নেশা জাতীয় দ্রব্য বর্জন করুন।
- প্রতিদিন ন্যূনতম ২ লিটার পানি পান করুন।
- বিভিন্ন ঔষধ গ্রহণের পূর্বে লিভারের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে সচেতন হোন।
- ডায়াবেটিস ও অন্যান্য রোগের ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী খাবার ও ঔষধ মেনে চলুন।
উপযুক্ত নিয়ম অনুসরণ করে ৬ মাসের মধ্যে ৫-১০% শরীরের ওজন কমাতে চেষ্টা করুন এবং প্রতিমাসে ওজন পরিমাপ করে লিপিবদ্ধ করে রাখুম। মনে রাখতে হবে যে দ্রুত শরীরের ওজন কমানো এবং রোগে ভীত হয়ে খাবার গ্রহণ বন্ধ করে দেওয়া একেবারেই উচিত নয়। এতে রোগের এবং চিকিৎসার অবনতি হতে পারে।
[videogallery id=”fatty-live-alo”]
[videogallery id=”fatty-live-harbal”]
ফ্যাটি লিভারের চিকিৎসা
১। কফি পান করলে ফ্যাটি লিভারের সমস্যায় উপকার উপকার পাওয়া যায়। নিয়মিত পরিমান মত কফি পান করলে তাদের লিভার অন্যদের তুলনায় যথেষ্ট ভালো থাকে। কফি লিভারের প্রদাহের বিরুদ্ধে লড়াই করে এবং লিভারে বিভিন্ন স্বাস্থ্যকর এনজাইমের উৎপাদন বাড়িয়ে তোলে।
২। লিভারের রোগীদের জন্য একটি বিশেষ উপাদান হচ্ছে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড। ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড সাধারণত সামুদ্রিক বিভিন্ন মাছ যেমন- সালমন, সার্ডাইনস, টুনা এবং ট্রাউটের মতো ফ্যাটযুক্ত মাছে বেশি পরিমাণে পাওয়া যায়। এটি লিভারে জমে থাকা চর্বি দূর করতে বিশেষ ভাবে সাহায্য করে।
৩। লিভারের স্বাস্থ্য রক্ষা করতে সাহায্য করে আখরোট। এই বাদামে ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিড থাকে যা খেলে ফ্যাটি লিভার রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের যকৃতের কার্যকারিতা বৃদ্ধি করে।
৪। ফ্যাটি লিভারের রোগীদের জন্য একটি আদর্শ পানীয় হলো ‘গ্রিন টি’। গ্রিন টি যকৃতে জমা চর্বি হ্রাস করতে পারে কোলেস্টেরলের মাত্রাও কমাতে সাহায্য করে।
৫। বেশির ভাগ মানুষের লিভারে চর্বি জমে থাকার কারণ হল = অতিরিক্ত ওজন। জলপাই তেল খেলে এই সমস্যার সমাধান হয়। এই তেল শরীরের জন্য খুবই উপকারী। পাশাপাশি দ্রুত ওজন কমায় ।