বীজতাড়ক গাছ
প্রচলিত নাম : গুগলি, আবেগী, জুঙ্গক, হাতীলতা, ছাগলান্ত্রিক ও ঋশ্যগন্ধা
ইংরেজী নাম : Elephant creeper
বৈজ্ঞানিক নাম : Argyreia nervosa (Burm.) Bojer.
পরিবার : Convolvulaceae
পরিচিতি: একটি বৃক্ষাশ্রয়ী বহুবর্ষজীবী এবং বহুদূরব্যাপী বিস্তৃত লতা। কাণ্ড শক্ত, সাদা পশমের মতো নরম রোমাবৃত। প্রশাখা মোটা, শ্বেতবর্ণ এবং শক্ত লোমাবৃত। পাতা ডিম্বাকৃতি, দেখতে প্রশস্ত পানের মতো, দৈর্ঘ্যের চেয়ে বিস্তারে অধিক। পাতার এক পিঠ ঘন সবুজ অর্থাৎ আরোমশ, আর একপিঠ যেন সাদা ভেলভেটের মতো অর্থাৎ সাদা পশমাবৃত। বোটা ৪-৬ সে.মি. লম্বা হয়। ফুলকুঁড়ি বড়, অগ্রভাগ ছুচালো। ফুল অনেকটা কলমি ফুলের মতো, গোলাপি আর বেগুণী রঙে মেশানো, রাতে ফোটে, সুগন্ধি। ফল গোলাকৃতি, মসৃণ, উজ্জ্বল, ফিকে ধূসর। ফল পাকলে আপনাআপনি ফেটে যায়।
ফুল ও ফলের সময় : বর্ষাকাল থেকে শীতকাল ফুল ফোটার সময়, তারপর ফল পাকে। বাংলাদেশের অনেক স্থানে এবং ভারতের প্রায়। সব অঞ্চলেই এ গাছ হয়।
ঔষধি ব্যবহার :
১) ক্রোস্টুকশীর্ষ বাতব্যাধিতে বৃদ্দদারক। মূলচূর্ণ গরম পানিসহ এবং শ্রীপদে বৃদ্দদারক মূলচূর্ণ কাজিসহ সেবন করলে উপকার হয়।
২) বৃদ্দকারক রসবহ ও শুক্রবহ স্রোতে কার্যকর। মলবদ্ধতাজনিত আনাহ আন (Flatulence), আমসংযুক্ত অতিসার, সেবন করলে নিরাময় হয়। বয়স্ক লোকের মেধাক্ষীণতায় এবং বীজচূর্ণ ২০০ মিলিগ্রাম মাত্রায় গরুর দুধসহ সেবন করতে বলা হয়েছে। রতিকাল দীর্ঘকরণে বীজচূর্ণ ২০০ মিলিগ্রাম মাত্রায় সকাল-বিকাল দুধসহ সেব্য।
৩) ফোঁড়া ফাটানো বা পাকা ফোড়া থেকে পুঁজ টেনে বের করার জন্য এর পাতার উভয়দিক ব্যবহার করা যায়। এমন অদ্ভুত ব্যাপার অন্য কোন গাছ দিয়ে হয় কিনা জানা নেই। এর পাতার নিচের দিকটা সাদা ভেলভেটের মতো অর্থাৎ সূক্ষ্ম রোম বিশিষ্ট। ফোঁড়া ফাটাতে চাইলে ঐ ভেলভেট মতো দিকটায় একটু ঘি মাখিয়ে ফোড়ার উপর বসিয়ে দিলে পুঁজটা টেনে বের করে দেবে।
৪) বাংলাদেশে জাতীয় আয়ুর্বেদিক ফর্মুলারী ১৯৯২-তে পনেরোটি ওষুধে বৃদ্দদারক (ফর্মুলারীতে বৃদ্দদারক বলে উল্লিখিত) ব্যবহার করার উল্লেখ দেখা যায়। এর মধ্যে কেবল একটি ওষুধ (মহাদশমূল তৈল) বৃদ্দদারক মূল ব্যবহার করা হয়। বাকী। সবগুলোর বীজ ব্যবহার করা হয়। ওষুধগুলো মূলত আমবাতসহ সর্বপ্রকার বাতজরোগ, যোনিব্যাপৎ শুক্ৰদোষ, জরায়ুদোষ, বন্ধ্যাত্ব, পুরাতন গ্রহনী, সূতিকা গ্রহণী, আমাজীর্ণ, অগ্নিমান্দ্য, শিরঃরোগ, কর্ণরোগ, নাসারোগ, শ্বেতপ্রদর, রক্তপ্রদর, কটিশুল, হার্ণিয়া, ধ্বজভঙ্গ, সন্ধিমজ্জাগত বাত, সায়েটিকা প্রশমক হিসাবে এবং স্নায়ুর পুষ্টিকারক লক্ষণভেদে নির্বাচন করা হয়।
৫) বাংলাদেশ জাতীয় ইউনানী ফর্মূলারী ১৯৯৩-তে তিনটি ওষুধে বীজতাড়ক ব্যবহারের উল্লেখ রয়েছে। এ ফর্মুলারীতে বীজতারককে সমুন্দর সুখ’ নামে অভিহিত করা হয়েছে। মা ‘জুন ছালাব ওষুধটি যৌন দুর্বলতা ও শত্রতারল্যে; কুরছ সায়লান ওষুধটি শ্বেত প্রদরে; হাব্বে নিশাত ওষুধট যৌন দুর্বলতা, বীর্ষস্থলন, অবসাদ এবং প্রমেহে ব্যবহারের জন্য ব্যবস্থা দেওয়া হয়।
রাসায়নিক উপাদান : এর বীজে প্রায় ১ ভাগ আরগোলিন অ্যালকালয়ড-আর্গোফ্লাভিন, ছানোক্লাভিন-১, ছানোক্লাভিন-২, রেসিমিক ছানোক্লাভিন-২, এলিমোক্লাভিনসহ বেশ কিছু শনাক্ত এবং অশানক্ত অ্যালকালয়ড রয়েছে।