গাছপালা

বকুল গাছ

প্রচলিত নাম: বকুল

ইংরেজী নাম : Elengi, Indian Medlar

বৈজ্ঞানিক নাম : Mimusops elengi Linn

পরিবার। : Sapotaceae

পরিচিতি : বড় চিরহিরৎ বৃক্ষ । ১৫-২০ মিটার পর্যন্ত উঁচু হতে পারে। ডালপালা প্রসারিত ও ঘন উজ্জ্বল পত্র। ফুল সাদা, উত্তম গন্ধযুক্ত। বাকল ধূসর বর্ণের অমসৃণ, ফাটলযুক্ত। পাতা একান্তর ৪-১০x ৩-৫ সে. মি. লম্বাটে, গাঢ় সবুজ। ফল বেরি ও গ্লোবুজ, ২.৫ সে. মি. লম্বা হয়। ফুলে সুগন্ধ আছে। গ্রীষ্মকাল থেকে শুরু করে শরঙ্কাল পর্যন্ত এর ফুল ফুটে। বীজ হতে বংশ বিস্তার হয়।

বিস্তৃতি : দেশের সর্বত্র লাগান হয়।

বীজ সংগ্রহ : নভেম্বর-ডিসেম্বর।

বীজের ওজন : কেজিতে ১৬০০-২০০০টি।

সাধারণ ব্যবহার : কাঠ গাঢ়, লাল, দৃঢ়, খুবভারী, শক্ত ও টেকসই। ভাল পালিশ নেয় কিন্তু শক্ত বিধায় কাজ করা যায় না। কড়ি কাঠ, সাকো, টেকি ও গরুর গাড়ির চাকার ধুরি, রোয়া, সরক ইত্যাদি তৈরীতে ব্যবহার করা যায়। বকুল ফুলের উদবায়ী তেল থেকে সুগন্ধি ও বীজ থেকে তেল পাওয়া যায়। ফলও খাওয়া চলে। বকুল তেল রান্নার কাজে, মালিশ করতে ও রং মিশ্রণে ব্যবহার করা যায়। বকুল গাছের ছাল দাঁতের ব্যথা নিরসনে ও ছালের ক্বাথ কোষ্টবর্ধক হিসাবে ব্যবহৃত হয়। এছাড়া, কাঠ পাইলিং, নৌকা, দাড়, মাস্তুল, হাটার ছড়ি, কেবিনেট কাজ, ছবির ফ্রেম ও বাদ্যযন্ত্র নির্মাণে ব্যবহৃত হয়।

ব্যবহার্য অংশ : ঔষধার্থে ব্যবহার হয় গাছের বা মূলের ছাল, কাঁচা ও পাকা ফল, ফুল ও বীজ।

ঔষধি ব্যবহার :

১. মূত্রকৃচ্ছতায় বা শিথিলতায় : বাতশ্লেষ্ম বা পিত্তশ্লেষ্মা ধাত যাঁদের, ঋতুবিশ্লেষে তাদের মূত্রাবেগ কখনও ঢিলে কখনও কষা হতে দেখা যায়; তাঁদের ধারণা হয় বোধ হয় প্রোস্টেট গ্লান্ড বড় হয়েছে অথবা ত্বকে ধরে রাখার ক্ষমতা চলে গিয়েছে; এক্ষেত্রে বকুল ছাল ১০ গ্রাম একটু কুটে (থেঁতো করে) ৪ কাপ জলে সিদ্ধ করে ২ কাপ থাকতে নামিয়ে হেঁকে সেইটাকে সকাল-বিকাল এর দ্বারা ঐ অসুবিধেটা চলে যাবে। যদি দেখা যায় কোষ্টবদ্ধতা আছে তবে ৫ গ্রাম ওজনে নিয়ে একটু থেঁতো করে ৩ কাপ জলে সিদ্ধ করার পর এক কাপ থাকতে নামিয়ে ছেকে ৩ বার খেতে হবে।

২. শুক্রতারল্যে : দীর্ঘদিন অজীর্ণে ভূগলে শুক্রতারুল্য হয় আবার শরীরের পুষ্টির অভাবেও শুক্রতারুল্য হয়। পাকা বুকল ফলের সিরাপ প্রত্যহ আহারের পর (এক বেলা) ১ চা-চামচ করে ঠাণ্ডা জলে মিশিয়ে ১৫/২০ দিন খেলে অপুষ্টিজনিত তারল্য সেরে যাবে।

৩. সিরাপ প্রস্তুত পদ্ধতি : পাকা বকুল ফল ৫০০ গ্রাম, ছোট ফল হলে ৭৫০ গ্রাম নিয়ে চটকে বীজ ও খোসা বাদ দিয়ে ২৫০ গ্রাম মধু মিশিয়ে ৩ দিন ঢেকে রাখতে হবে। তারপর একটা পাতলা ন্যাকড়ার (গামছা হলেও চলবে) পুটলী করে টাঙিয়ে রাখতে হবে; তা থেকে ফোঁটা ফোঁটা করে ঝড়ে পরে যাবে। সেইটাই হলো বকুল ফলের সিরাপ।

৪. অকালে দাঁত নড়ায় : সে যে কোন কারণেই হোক, ২০/২৫ গ্রাম বকুল ছাল ৪ কাপ জলে সিদ্ধ করে ২ কাপ থাকতে নামিয়ে, ছেঁকে নিতে হবে। আর ২/৩ টিপ (নষ্যির মত) পরিমাণ পিপুল চূর্ণ ১০/১৫ ফোঁটা মধুর সঙ্গে মিশিয়ে প্রথমে দাঁতের গোড়ায় লাগিয়ে দিতে হবে। এইটা লাগাবার ৫/৭ মিনিট বাদে, যে ক্বাথ তৈরী করা আছে সেই কৃাথকে নিয়ে ৭/৮ মিনিট করে মুখে এই প্রক্রিয়ায় ১০/১২ দিন বকুল ছালের ক্বাথ ব্যবহার করলে নড়া-দাঁত বসে যাবে। তবে এর দ্বারা বুড়োকালের নড়া-দাঁত কি আর বসবে? এটা চক্রদত্তের অভিমত।

৫. মাথার যন্ত্রণায় : (যেখানে কফের সংযোগ থাকবে সেখানেই কেবল কাজ হবে।) বকুল ফুলের গুঁড়োর (চূর্ণের) আটভাগের এক ভাগ ফিটকিরির গুঁড়ো মিশিয়ে রেখে দিতে হবে, যাদের মাঝে মাঝে সর্দি বসে মাথায় যন্ত্রণা হয়, তাঁরা এই নস্যিটা ব্যবহার করবেন। মাথার যন্ত্রণা সেরে যাবে।

৬. দাঁত পড়ায় : অল্প বয়সে যাদের দাঁত নড়ে যাচ্ছে বা পড়ে যাচ্ছে তারা কাঁচা বকুল ফল কিছুদিন চিবিয়ে দেখুন-দাঁতের গোড়া শক্ত হয়ে যাবেই, তা না হলে কাঁচা ফলকে পেড়ে শুকিয়ে সেই শুকনো ফলের শাঁসের গুঁড়ো দিয়ে দাঁত মাজলে অকালে দাঁত নড়বেও না, আর পড়বেও না।

৭. নাসাজ্বরে : এ জ্বরে সাধারণতঃ মাথায় ও ঘাড়ের যন্ত্রণা তো হয়ই, অধিকন্তু সমস্ত শরীরেই প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি, এক্ষেত্রে বকুলফুলের বর্ণের নস্য নিলে ঐ অসুবিধেগুলি চলে যায় ।

. শিশুদের কোষ্টবদ্ধতায় : বকুল বীজের অভ্যন্তরস্থ শাসটাকে বাদ দিয়ে শক্ত অংশটাকে মিহি চূর্ণ করে, পুরাতন ঘিয়ের সঙ্গে মিশিয়ে বর্তি বা বাতি তৈরী করে অথবা পানের বোঁটায় লাগিয়ে শিশুর মলদ্বারে দিলে ১০/১৫ মিনিটের মধ্যেই দাস্ত হয়ে যায়। তারপর কোন স্নেহজাতীয় দ্রব্য, যেমন : নারকেল তেল বা ঘি লাগিয়ে দিতে হয়। বীজের চূর্ণটা অল্প পরিমাণে মিশাতে হয়।

. পুরাতন আমাশয় রোগে : প্রত্যহ কয়েকটি করে পাকা বুকল ফলের শাঁস খেলে এ রোগের উপশম হয়।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *