গাছপালা

ধনিয়া গাছ

প্রচলিত নাম : ধনিয়া

ইংরেজী নাম : Coriander

বৈজ্ঞানিক নাম : Coriandrum sativum Linn.

পরিবার : Umbelliferae

পরিচিতি : বর্ষজীবী ১.৫/২ ফুটের বেশী উঁচু হয় না। ভাদ্রমাসে মাঠে ধনে ছড়িয়ে দেওয়া হয়, চারাগাছের পাতার ধার কাটা অসমান কোণ তবে অনেকটা গোলাকার গাছ যত লম্বা হয় তার পাতার আকার পরিবর্তিত হয়ে লম্বা হয়। সোজা একটি বেরোয়, শীতকালে সাদা ছোট ছোট ছত্রাকার ফুল হয়। তবে পুস্পদণ্ডে বিশেষ পাতা থাকে না, থাকলেও দুই/একটা খুব ছোট।

ঔষধি ব্যবহার :

১) আহার্য : ঔষধ হিসেবে ব্যবহার করা হয় পাতা ও বীজ। এটির প্রধান কাজ রসবহ ও রক্তবহ স্রোতে পিত্তবিকারজনিত রোগগুলির উপর প্রধানভাবে কাজ করে।

২) দেহে জ্বালা : দিবা-রাত্র শরীরের ভিতরে বা বাইরে জ্বালা বোধ হয়, চোরা অম্বল (অম্লরোগ) হয়, সেক্ষেত্রে ধনে ৫/৬ গ্রাম এক কাপ গরম জলে রাত্রে ভিজিয়ে রেখে সকালে ঘেঁকে খালিপেটে খেতে হবে। এর দ্বারা দাহ প্রশমিত হবে। এটা কিন্তু মাঝে মাঝে খেতেই হবে; তবে চোরা অম্বলটা কি করে বন্ধ হয়, তার ব্যবস্থা সর্বপ্রথম দরকার।

৩) অতিসারে : যে অতিসার পিত্তবিকারজনিত হয়, এর লক্ষণ- স্বল্প প্রস্রাব ও মলটা খুবই তরল হবে, মলত্যাগ করার সময় মলদ্বার জ্বালা করবে আর এই মলের রং প্রতিবারেই যেন বদলে যায় কখনও ঘাসের রং, কখনও হলদে, কখনওবা পচা পাতার রং; এক্ষেত্রে ২৫ গ্রাম ধনে বেটে নিয়ে ২৫ গ্রাম গাওয়া ঘি, জল ১১৪ মিলিলিটার অর্থাৎ প্রায় আধ পোয়া একসঙ্গে একটি পাত্রে পাক করে, জলটা মরে গেলে (অথচ ভেজে যাবে না) ওটা নামিয়ে হেঁকে সকালে ও বিকালে দুবারে অর্ধেকটা আর বাকী অর্ধেকটা পরেরদিন দুবারে খেতে হবে। এর দ্বারা ঐ পিত্তবিকারের অতিসার সেরে যাবে।

৪) শিশুদের কাশি ও দুধে শ্বাসে : দেখা যায় কাশতে কাশতে শিশুর চোখমুখ লাল হয়ে যায়, মনে হয় যেন দম বন্ধ হয়ে গেল, এরকম অবস্থায় ২ চা চামচ আতপ চাল ১০/১২ চা চামচ জলে ভিজিয়ে সেই জল ৭/৮ চা চামচ নিয়ে ঐ জলে আধ চামচ ধনে বেটে ওটাকে ঘেঁকে নিয়ে সেই জলটি আধ চামচ করে ৩/৪ ঘন্টা অন্তর সমস্ত দিন ধরে খাওয়ালে ঐ কাশিটা বন্ধ হয়ে যাবে ।

৫) বাতরক্তে : বাতরক্তের ক্ষেত্রে ধনে ও সাদাজীরে যেটা আমরা তরকারিতে সর্বদা খাই ঐ দুটো সমান পরিমাণে নিয়ে জলে বেটে, ঐ দুটোর দ্বিগুণ পরিমাণ গুড়ের সঙ্গে নারকোল সন্দেশ যে রকমে করে সেই রকম পাক করে রাখতে হবে । (সেটার পাক ঠিক হলো কি না জানার উপায় সেই পাক করা জিনিসটি জলে ফেলে দিলে আর এলিয়ে যাবে না। সেই জিনিসটি প্রত্যহ ১০/১২ গ্রাম করে জলসহ খেতে হবে। এর দ্বারা আপাততঃ উপশম তো হবেই’ তবে দীর্ঘদিন চিকিৎসা করার প্রয়োজন হয়।

৬) নবজ্বরের পিপাসায় : ১০/১২ গ্রাম ধনে একটু কেটে (কুটিত) নিয়ে ৪ কাপ জলে সিদ্ধ করে ২ কাপ থাকতে নামিয়ে হেঁকে সমস্তদিন ৩/৪ বার ঐ জলটা খেতে দিতে হবে, এর দ্বারা জ্বরের তাপটা কমে যাবে এবং পিপাসারও নিবৃত্তি হবে।

৭) পেটে বায়ু : যাদের খাওয়ার ৩/৪ ঘন্টা বাদে পেটে বায়ু জমতে থাকে (এটা বর্ষাকালেই বেশী হতে দেখা যায়, আবার যেদিন আকাশে মেঘ হয় সেদিন আর কথাই নেই) অর্থাৎ ভুক্ত দ্রব্যটি যখন অন্ত্রে গিয়ে উপস্থিত হয়, তখনই সমুদ্রের নিম্নচাপের মত বায়ুর সঞ্চার হতে থাকে, সেক্ষেত্রে ১০/১২ গ্রাম ধনে থেঁতো করে এক গ্লাস গরম জলে রাত্রে ভিজিয়ে রাখতে হবে, পরেরদিন সকালের দিকে অর্ধেকটা ও দুপুরবেলা খাওয়ার ২ ঘন্টা বাদে বাকী জলটা খেয়ে নিতে হবে; এর দ্বারা পেটে আর বায়ু হবে না। তবে কিছুদিন খেলে এটাতে স্থায়ী ফল পাওয়া যাবে। আর একটা কথা, তরকারীর স্কুলাংশ খাওয়া কামানো দরকার তবে তরকারীর ঝোলটা খেলে ক্ষতি নেই। এই খাওয়ার ব্যাপারেও সাবধান হতে হবে।

৮) পেট কামড়ানিতে : সে যে কোন কারণেই হোক, ধনে আর যব সমান পরিমাণে নিয়ে জলে বেটে পেটে প্রলেপ দিতে হবে। এর দ্বারা পেট কামড়ানির উপশম হবে।

৯) কেশপতন ও খুস্কিতে : প্রথমোক্তটির হেতু কি, সেটা চিকিৎসকের কাছে আজও ধাঁধা, তবু যেটা প্রত্যক্ষ ফল পাওয়া যায়, সেটাই লিখছি-২০০ গ্রাম খাঁটি তিল তেল নিয়ে তার সঙ্গে ৭/৮ চা-চামচ ধনে (নতুন ধনে হলে ভাল হয়) একটু কুটে নিয়ে ঐ তেলে ভিজিয়ে ৭/৮ দিন রেখে সেই তেল মাথায় মাখলে চুল ওঠা বন্ধ হয়ে যাবে। এই তেলের পাত্রটি অনেকে সমস্ত দিন রৌদ্রে বসিয়ে রাখেন, এটাতে তেলে একটা মিষ্ট গন্ধও হয়।।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *