হরিতকি গাছ
প্রচলিত নাম : হওকী
ইংরেজী নাম : Chebulic Myrobalam
বৈজ্ঞানিক নাম : Terminalia chebula Retz.
পরিবার : Combrataceae
পরিচিতি : মধ্যম থেকে বৃহদাকারের পত্রমোচী বৃক্ষ। উচ্চতায় ২০-৩০ মিটার হয়। বাকল গাঢ় বাদামী। বাকলে লম্বা ফাটল থাকে। পাতা। লম্বাকৃতির, ৭-২০ সে. মি. হয়। ফুল সাদা বা হলুদ হয় এবং স্পইকে ঝুলন্ত অবস্থায় থাকে। ফল ড্রপ, ঝুলন্ত, ৪ সে. মি. লম্বা সবুজাভ হয়। কাঠের রং ঘন বেগুনি, খুব শক্ত, ভারী ও মধ্যম আকারের টেকসই।
বিস্তৃতি : হরিতকি গাছের আদি নিবাস ভারত, পাকিস্তান, মায়ানমার এবং বাংলাদেশ। এদেশে ঢাকা-ময়মনসিংহ ও পার্বত্য চট্টগ্রামের বনাঞ্চলে হরিতকি গাছ রয়েছে। গ্রামাঞ্চলের বসতবাড়িতেও হরিতকি গাছ দেখা যায়। বৃষ্টিপাত ৭৫০-৩২৫০ মি.মি. অঞ্চলে হরিতকি ভাল জন্মে।
বীজ সংগ্রহ : মার্চ-এপ্রিল।
বীজের ওজন : কেজিতে ১৪০-২৩০টি।
বীজ সংগ্রহ ও চারা উত্তোলন : এপ্রিল-মে মাসে হরিতকির গাছে ফুল ফোটে। ফুল হলুদ অথবা সাদা, উৎকট গন্ধযুক্ত। ফল ড্রপ, ২-৩ সে.মি. লম্বা হয় ও পাঁচটি উঁচু শির থাকে। কাঁচা ফল সবুজ, পাকলে হলুদ হয়। বীজ খুব শক্ত। নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসে বীজ পাওয়া যায়। মার্চ মাসে পাকা ফল মাটিতে পড়ে। এ ফল ৫/৭ দিন রোদে শুকিয়ে ৬ মাস থেকে ১ বৎসর পর্যন্ত সংরক্ষণ করা যায়। ৩০-৪৫ দিনের মধ্যে বীজতলায় দিনে ২/৩ মাসের মধ্যে চারা গজায় তবে অংকুরোদগমের হার ৫০% এর নীচে। ফল তৃক ছাড়িয়ে বীজ পানিতে ৪৮ ঘন্টা ভিজিয়ে রেখে ১০% সালফিউরিক এসিডে ২০ মিনিট ভিজিয়ে বেডে দিলে অংকুরোদগমের হার ৭০% পাওয়া যায় ।
ওষুধি ব্যবহার : ভেষজ চিকৎসকরা হরিতকি গাছকে মায়ের সাথে তুলনা করে থাকেন। তারা বলেন, মানুষের কাছে এ বৃক্ষ মায়ের মতই আপন। মানুষের শরীরে সংক্রমিত প্রায় সব রোগ-ব্যাধির ওষুধ হিসেবে হরিতকির ব্যবহার রয়েছে। সকল রোগ হরণ করে বলেই প্রাচীন শাস্ত্রকাররা এর নাম দিয়েছেন হরিতকি।
১) অর্শ রোগে হরিতকি চূর্ণ ৩-৫ গ্রাম (কোষ্টকাঠিন্যের অবস্থাভেদে) পরিমাণ ঘোলের সাথে একটু সৈন্ধব লবণ মিশিয়ে খেলে সেরে যাবে।
২) রক্তার্শে আখের গুড়ের সাথে হরিতকি গুড়া মিশিয়ে খেলে কয়েকদিনের মধ্যেই সুফল পাওয়া যায় ।
৩) চোখের রোগে হরিতকি ছেঁচে পানিতে ভিজিয়ে, এ পানি দিয়ে চোখ ধুতে হবে।
৪) পিত্ত বেদনায় সামান্য গাওয়া ঘিয়ের সথে হরিতকি গুঁড়া সেবন করতে হয় ।
৫) গলার স্বর বসে গেলে মুথা ও হরিতকি চূর্ণ মধুর সাথে বেটে অথবা যোয়ানের সাথে পান করলে স্বর স্বাভাবিক হয়।
৬) হরিতকি ফল হৃদরোগ, বদহজম, আমাশয়, জন্ডিস এবং ঋতুস্রাবের ব্যথায় খাওয়ানো হয়।
৭) ফলের রস জ্বর, কাশি, হাঁপানি, পেট ফাঁপা, ঢেকুর উঠা, বর্ধিত যকৃত ও প্লীহা, বাতরোগ ও মূত্রনালীর অসুখেও বিশেষ উপকারী।
৮) কাঁচা ফল রেচক হিসেবে কাজ করে।
৯) আধুনিক ভেষজ চিকৎসকরা ফুসফুস ও শ্বাসনালীঘটিত রোগে হরিতকি বহুল ব্যবহার করে থাকেন। কাশি ও শ্বাসকষ্টে হরিতকি খুবই কার্যকর।
১০) এছাড়া, ঘন ঘন পানির তৃষ্ণা কিংবা বমি বমি ভাব কাটাতেও হরিতকি ব্যবহৃত হয়।
১১) ত্রিফলা অর্থাৎ আমলকি, হরিতকি ও বহেরা এর প্রতিটির সমপরিমাণ গুড়ার শরবত কোলেস্টেরল কমাবার অর্থাৎ প্রেসার বা রক্তচাপ কমাবার মহৌষধ। এক ঔষধ গবেষক দলের মতে, আধুনিক যে কোন এ্যালোপ্যাথিক ঔষধের তুলনায় ত্রিফলা কোলেস্টেরল কমাবার ক্ষেত্রে অনেক বেশী ফলপ্রসূ।
সাধারণ ব্যবহার : কাঠ আসবাবপত্র কৃষি যন্ত্রপাতি ও অন্যান্য নানা কাজে ব্যবহার করা যায়। গাছের সবচাইতে মূল্যবান অংশ হচ্ছে ফল। ফল থেকে ট্যানিন, লেখার কালি ও রং পাওয়া যায়। ফল কোষ্ট পরিস্কারক ও ফলের গুঁড়া দাতের মাজন হিসাবে ব্যবহার করা হয়। আয়ুর্বেদিক ওষুধ ত্রিফলার একটি অন্যতম ফল হরিতকি।
রাসায়নিক উপাদান : a) Tanins, b) Polyphenolic compounds viz. chebulinic acid, chebulagic acid, corilagin & number of unidentified phenolic constituents & c) Anthraquinone dye Stuff