গাছপালা

চালতা গাছ

প্রচলিত নাম : চালিতা

ইংরেজী নাম : Chalta, Elephant Apple

বৈজ্ঞানিক নাম : Dillenia indica Linn.

পরিবার : Dilleniaceae

পরিচিতি : চালতা মাঝারি আকারে ১৪-১৫ মিটার উচ্চতাসম্পন্ন চিরহরিৎ বৃক্ষ। এর বাকল লাল ও মসৃণ। পাতা ঘন, ২৫-৩০ সে. মি. লম্বা, কিনারা করাতের ন্যায় কাটা-কাঁটা এবং উঁচু। সাদা রং-এর সুগন্ধযুক্ত ফুল ১৫-১৮ সে.মি. লম্বা, পাঁপড়ি ১৫-২০টি। ফুল মে-জুন মাসে ফোটে। ফুলের বৃতিই ফল হিসাবে ব্যবহৃত হয়। ফল ১২-১৫ সে. মি. ব্যাস বিশিষ্ট। ফলে অনেক বীজ লোমশ কোষের মধ্যে থাকে। শীতকালে ফল পাকে।

বিস্তৃতি : অদিবাস দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া। ভারত, শ্রীলংকা, নেপাল ও বাংলাদেশের প্রায় সব অঞ্চলেই চালতা জন্মে। ভেজা স্যাঁতস্যাঁতে জায়গায় এ গাছ ভাল জন্মে।

বীজ সগ্রহ: অক্টোবর- ডিসেম্বর।

বীজ সগ্রহ, চারা উত্তোলন ও রোপণ : প্রতিটি চালতার মধ্যে ২০টির মতো প্রকোষ্ঠ থাকে এবং প্রতিটি প্রকোষ্টে ৪-৬টি বীজ থাকে। বীজ স্বচ্ছ আঠাযুক্ত হালকা হলুদাভ বর্ণের। ফল থেকে বীজ ছড়িয়ে রোদে শুকাতে হয়। বীজ বেশীদিন সংরক্ষণ করা যায় না। ফেব্রুয়ারী-মার্চ মাসে বীজতলায় বীজ বপন করতে হয়। চালতা প্রায় সব রকমের মাটিতেই জন্মে। বীজ হতে জুন-জুলাই মাসে চারা উৎপন্ন করা যায়, আবার শাখা কলম হতেও চারা জন্মাতে পারে। বাগানে ৩০ ফুট দূরে দূরে বর্গ প্রণালীতে চারা রোপণ করা যেতে পারে। সারের প্রকার এবং পরিমাণ অনেকটা আমের মত । তবে মাটি উর্বর থাকলে বিনা সার এবং সামান্য যত্নেও বেশ ভাল গাছ জন্মালে পারে। টক ও মিষ্ট এই উভয় প্রকারের চালতা দেখা যায়।

বীজ সংগ্রহ : আগস্ট-সেপ্টেম্বর।

সাধারণ ব্যবহার : কাঠ লাল, মোটামুটি শক্ত, ভারী, পানি ও মাটিতে টেকসই। ওজন ৭০৫ কেজি/ঘনমিটার। কাঠ গানস্টকে (gun . stock), আঁদলরোয়া, যন্ত্রের হাতল, নৌকার তলা ও দরজা-জানালার পাল্লায় ব্যবহৃত হয়। এছাড়া, জ্বালানী ও কাঠকয়লা তৈরীতে ব্যবহৃত হয়। বাকল থেকে ট্যানিন তৈরী হয়। খাদ্য হিসেবে চালতা আচার, চাটনী প্রভৃতি তৈরীতে ব্যবহৃত হতে পারে। তেমন বিভিন্ন প্রকারের রন্ধনেও বিশেষতঃ চিংড়ি মাছ সহযোগে টক রন্ধনের জন্য বেশ উপযোগী। চালতাকে জেলী তৈরীতে ব্যবহারের অবকাশ আছে।

ঔষধি ব্যবহার :

১) শুল রোগ : পাকা চালতা থেঁতো করে ২০ মিলিলিটার রসে এক চামচ চিনি মিশিয়ে দিনে একবার খেলে শুলরোগ দূর হয়।

২) বাত রোগে : ৩০ গ্রাম কচি চালতা বেটে, এক গ্লাস ঠাণ্ডা পানি মিশিয়ে খেলে, বাতে উপকার পাওয়া যায়।

৩) পিত্ত বাড়লে : ছোট আকারের কচি চালতা ছোট ছোট টুকরো করে ১২০ মিলিলিটার পানিতে সিদ্ধ করে, আধা কাপ করে তা ঠাণ্ডা অবস্থায় দিনে একবার খেতে হবে।

৪) কফ ও সর্দি : গাছের শুকনো ছালের গুঁড়ো এক গ্রাম; চিনি বা মিছরি গুঁড়ো এক চামচ, আধা কাপ সামান্য গরম পানিতে মিশিয়ে দিনে একবার খেলে সর্দি ও কফ চলে যায়।

৫) ঠাণ্ডা লেগে জ্বর : ৩০ মিলিমিটার পাকা চালতার রস, তিন চামচ চিনি ৭০ মিলিলিটার পানি—এ তিনটি একসঙ্গে মিশিয়ে দিনে একবার খেলে জ্বরের প্রকোপ কমে যায়।

৬) চালতার পাতা দধির সাথে গরুকে খাওয়ালে রক্ত আমাশয় উপশম হয়। বাছুরের রক্ত আমাশয়ে চালতার পাতা বিশেষ উপকারী।

রাসায়নিক উপদান : বেটুলিন (Betulin), বেটুলিনিক এসিড (Betulinic acid), ফ্লেভানয়েড়স (Flavonoids) ও স্টেরল ৫. (Sterols) ইত্যাদি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *