কার্ডিওভাসকুলার সিস্টেমের রোগ লক্ষণ ও সকল পদ্ধতির ডাক্তারদের বক্তব্য।
কার্ডিওভাসকুলার সিস্টেমের রোগ লক্ষণ ও ব্যবস্থাপনা
রক্ত সংবহন তন্ত্রের সমস্যা বলতে হার্ট বা হৃদপিন্ড ও রক্তনালীর সমস্যাকে বোঝায়।
রক্তসংবহনতন্ত্র রোগের চিকিৎসার জন্য হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ অপ্রাপ্তিতে মেডিসিন, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহন অধিক ফলপ্রসূ।
রক্তসংবহন তন্ত্রের রোগের সাধারণ কারণ
জন্মগত ত্রুটি।
জীবাণু।
স্থূলতা (মোটা হওয়া)।
অনিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাস
অতিরিক্ত লবন খাওয়া
তামাক সেবন
উচ্চরক্ত চাপ
মানসিক চাপ ইত্যাদি
প্রতিরোধের সাধারণ উপায়
- নিরাপদ মাতৃত্বের নিয়ম মেনে চলা।
- দেহের ওজন নিয়ন্ত্রণ করা।
- রক্তচাপ নিয়ন্ত্রন করা ।
- নিয়মিত ব্যয়াম করা।
- তামাক সেবন পরিহার করা।
- যথাসম্ভব লবন এড়িয়ে চলা।
- নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা।
- শিশুদের গলা ব্যথা হলে দ্রুত চিকিৎসা করানো।
- রোগ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসা নেয়া।
রক্ত সংবহনতন্ত্রের সমস্যার লক্ষণ সমূহ
- শ্বাস কষ্ট (অল্প পরিশ্রমেই হাঁপিয়ে যাওয়া)
- বুকে বেদনা (কায়িক পরিশ্রমে, সিড়ি উঠতে গেলে কিংবা বিশ্রাম অবস্থায়),
- বুক ধরফর করা
- উচ্চ রক্ত চাপ
- পায়ে, পেটে পানি আসা
শ্বাস কষ্ট
শ্বাস কষ্ট শুধু শ্বাসতন্ত্রের লক্ষণ নয় রক্তসংবহন তন্ত্রের লক্ষণও। সাধারণত ছোট শিশুদের হার্টের দুই প্রকোষ্ঠের মাঝে ছিদ্র থাকলে এ ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। হাটের ভাল্বে সমস্যা থাকলেও এ লক্ষণ দেখা যেতে পারে। আবার প্রাপ্ত বয়স্কদের হার্টের রক্তনালীতে প্রতিবন্ধকতা হলে ( সাধারন ভাষায় হার্টে ব্লক থাকা) শ্বাস কষ্ট হতে পারে। এ ধরনের শ্বাসকষ্টে সাধারণত বুকে সাই সাই শব্দ থাকে না এবং অনেক ক্ষেত্রেই বুকে ব্যথা থাকতে পারে।
বুকে বেদনা
বুকে বেদনা কার্ডিওভাসকুলার সিস্টেম রোগের অন্যতম লক্ষণ। তবে এটি অন্যান্য সিস্টেমের রোগেও হতে পারে। বুক বেদনার সাধারণ কারণ সমূহ
লাঙ : বিভিন্ন ধরনের রোগাবস্থা যেমন- ব্রংকাইটিস, নিউমোনিয়া, | টিউবারকুলোসিস, ক্যান্সার, এম্বোলিজম ইত্যাদি।
প্লুরা (লাঙ এর আবরণ): বিভিন্ন ধরনের ইনফেকশন ও ইনফ্লামেশন, নিউমোথোরাক্স, প্লুরাল ইফিউশন ইত্যাদি।
কার্ডিয়াক: হার্টের বিভিন্ন রোগাবস্থা; যেমন-মায়োকার্ডাইটিস, পেরিকার্ডাইটিস, মায়োকার্ডিয়াল ইসকেমিয়া, মায়োকার্ডিয়াল ইনফারকশন, সেপটাল ডিফেক্ট, ভালভুলার ডিজিজ ইত্যাদি।
ইসোফেজিয়াল: ইসোফেগাস বা অন্ননালীর বিভিন্ন রোগাবস্থা যেমন ইসোফেগাইটিস, ইসোফেজিয়াল স্পাজম, ম্যালোরি-ওয়েলস সিন্ড্রোম ইত্যাদি।
স্টমাক (পাকস্থলি): এর বিভিন্ন রোগাবস্থায় যেমন- হায়াটাস হার্নিয়া, পেপটিক আলসার, স্টমাকে অতিরিক্ত বায়ু জমা থাকা, জি ই আর ডি ।
মাসকুলোস্কেলেটাল (হাড় ও মাংসপেশি সংক্রান্ত): যেমন অস্টিওআথ্রাইটিস, কস্টোকনড্রাইটিস, রিব ফ্রাকচার/আঘাত, ইন্টারকোস্টাল মাসল-এ আঘাত নিউরোলজিক্যাল (নার্ভ জনিত): যেমন- পোলা ইন্ট্রাভার্টিব্রাল ডিস্ক, হারপিস জোস্টার, থোরাসিক আউটলেট সিন্ড্রোম।
সাইকোজেনিক (মানসিক): যেমন- উদ্বিগ্নতা, আবেগ।
হার্টের সমস্যার ক্ষেত্রে সাধারণত বুকের মধ্যখানে ও সামান্য বামে ব্যথা বেশি অনুভূত হয়। তবে প্রাপ্ত বয়স্কদের ক্ষেত্রে হার্টের রক্তনালীতে প্রতিবন্ধকতা জনিত বুক ব্যথাই বেশি দেখা যায়। এ ধরনের ব্যথাকে সাধারণভাষায় হার্ট এটাক বলা হয়। হার্ট এটাকের কারনে বুক ব্যথা হলে রোগী অস্থির হয়ে যায়, শ্বাসকষ্ট থাকতে পারে, শরীরে ঘাম হতে পারে। উল্লেখিত লক্ষণ দেখা দিলে রোগীকে ততক্ষনাৎ হাসপাতালে প্রেরনের ব্যবস্থা করতে হবে।
শিশুদের বুকে ব্যথার অন্যতম কারন হার্টের ভাল্বের সমস্যা। যে সকল শিশুর ঘন ঘন গলা ব্যথা হয় (টনসিলাইটিস বা অন্যান্য কারনে) তাদের হার্টের এই সমস্যা হওয়ার ঝুঁকি বেশি। রিউমেটিক ফিভার নামক রোগের কারনে হার্টের ভাল্বের সমস্যা হয়। তাই শিশুদের গলা ব্যথা বা টনসিলাইটিস কে অবহেলা করবেন না। ।
বুক ব্যথার প্রাথমিক চিকিৎসা
সাধারন ব্যবস্থাপনা
- রোগীকে আরামদায়ক পরিবেশে শুইয়ে দিতে হবে ।
রোগীর পূর্বে থেকে এ ধরনের সমস্যা থেকে থাকলে প্রেসক্রিপশনে জরুরী | ঔষধ লেখা থাকতে পারে। তাকে ঐ ঔষধ সেবন করাতে হবে।
ঔষধজ
প্রাপ্ত বয়স্কদের ক্ষেত্রে
প্রথমেই রোগীকে এক প্যাকেট লোসেকটিল পাউডার ( জেনেরিক: অমিপ্রাজল পাউডার অবস্থায়) আধা গ্লাস পানিতে গুলে খেতে দিতে হবে।
যদি প্রথমবার এই সমস্যা হয়ে থাকে (হৃদ রোগের কারণে বুক বেদনা সন্দেহ হলে) কিংবা পূর্বেই ছিল তবে এখন কাছে ঔষধ নেই কিংবা নাম মনে নেই, এক্ষেত্রে ডাঃ দেবী শেঠি (ভারতের প্রখ্যাত হৃদরোগ বিশেষষ্ণ)-র পরামর্শ মতে
ট্যাবলেট ইসরডিন (জেনেরিক: আইসোসরবিড ডাই-নাইট্রেট, প্রস্তুতকারক: স্কয়ার ): রোগীকে জিহবার নিচে একটি দিতে হবে। এবং সম্পূর্ণ গলে না যাওয়া পর্যন্ত রাখতে হবে।
দ্রুত রোগীকে নিকটস্থ হাসপাতালে প্রেরণ করতে হবে।
বুক ধরফর করী
বুক ধরফর করা বলতে অনিয়মিত বা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি হৃদস্পন্দনকে বোঝায়। হার্টের বিভিন্ন সমস্যার কারনে, হরমোন জণিত কারনে, মানসিক কারনে এই বুক ধরফর করতে পারে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই রোগী শারিরীক পরিশ্রম করলে, মানসিক আবেগে আপ্লুত হলে বুক ধরফর দেখা যায়।
এ ধরনের সমস্যা বার বার দেখা দিলে দ্রুত একজন এমবিবিএস ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।