গাছপালা

তেজপাতা গাছ

প্রচলিত নাম : তেজপাতা

ইংরেজী নাম : Bay Leaf, Indian Cassia Ligea

বৈজ্ঞানিক নাম : Cinnamonum tamala Nees.

পরিবার। : Louraceae

পরিচিতি : তেজপাতা মাঝারি ধরণের সুগন্ধ বিশিষ্ট চিরহরিৎ বৃক্ষ। এটি ১৫/১৬ মিটার পর্যন্ত উঁচু হয়। গাছের কাণ্ড লালচে আভা যুক্ত ধূসর বর্ণের হয়। তেজপাতার প্রধান পরিচয় মসলা হিসেবে। শিরাবহুল বর্ষাকৃতির পাতা ১৫-২০ সে.মি. লম্বা ও ৫-৬ সে.মি. চওড়া হতে দেখা যায়। পাতাগুলি ডালের সাথে বিপরীতভাবে বিন্যস্ত থাকে। পাতা কচি অবস্থায় লাল, পরিণত অবস্থায় সবুজ ও শুকালে খয়েরী রং ধারন করে। বাকল পাতলা, ঘন বাদামী, কোকড়ানো ও সুগন্ধযুক্ত।

বিস্তৃতি : ভারত ও বাংলাদেশের পাহাড়ী এলাকায় তেজপাতা ভাল জন্মে। বিশেষ করে বাংলাদেশের সিলেটের জয়ন্তিয়া ও হরিপুর এলাকার বনাঞ্চলে এটি প্রাকৃতিকভাবে জন্মে। বর্তমানে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এ গাছের চাষ হয়ে থাকে।

বীজ সংগ্রহ সময় : জুন-জুলাই।

বংশ বিস্তার : মার্চ-এপ্রিল মাসে তেজপাতা গাছে সাদা ছোট ছোট ফুল দেখা যায়। ফল পাকলে খয়েরী বা কালো রংয়ের হয়। ফল মাটিতে পড়ে চারাগাছ জন্মে। আমাদের দেশে সিলেট অঞ্চলের জঙ্গলে জুলাই-আগস্ট মাসে প্রাকৃতিকভাবে জন্মানো প্রচুর চারা পাওয়া যায়। এ চারা সংগ্রহ করে দেশের বিভিন্ন নার্সারীতে বড় করে বিত্রী করা হয়। বাংদেশের ছোট-বড় প্রায় সব ধরনের নার্সারীতেই তেজপাতার চারা পাওয়া যায়। অথবা গাছের তলা পরিস্কার করে গাছ কঁকি দিয়ে তা থেকে ফল সংগ্রহ করে ২/৩ দিনের মধ্যেই বপন করলে চারা। পাওয়া যাবে। তেজপাতার গাছ জলাবদ্ধতা সহ্য করতে পারে না। এ কারণে উঁচু জমিতে এ-গাছ লাগানো উচিত। রোপণের ৩/৪ বাৎসরের মধ্যেই তেজপাতা গাছ থেকে পরিপক্ক পাতা সংগ্রহ করা যায়। এ গাছ বসতবাড়ির শোভাও বাড়ায়।

ঔষধি গুণ :

১) তেজপাতার রয়েছে দুর্লভ কিছু ওষুধি গুণ। তেজপাতা গাছের ছাল ও পাতা বেটে রস খেলে অজীর্ণ এবং পেটের পীড়া ভাল হয়ে যায়। যারা গুরুপাক খাদ্য সহজে হজম করতে পারেন না, তাদের জন্য তেজপাতা গাছের রস খুবই কার্যকর ওষুধ।

২) তেজপাতার রস কোলস্টেরল কমাতে সাহায্য করে। এছাড়া, হৃদরোগের ক্ষেত্রে তেজপাতা ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এ রস হৃদযন্ত্রের পেশীগুলোর কার্যক্ষমতা বাড়ায়। আধুনিক ভেষজ চিকিৎসকদের অনেকের মতে তেজপাতা শরীরে রক্ত সংবহনতন্ত্রকে সংবেদনশীল করে তোলে এবং শরীরে রক্ত পরিবহন মসৃণ করে তোলে।

৩) হাম, ডায়রিয়া ও দীর্ঘস্থায়ী জ্বর থেকে সেরে উঠলে তেজপাতা সিদ্ধ পানি ব্যবহার করা ভাল।

৪) ঠাণ্ডাজনিত বা উচ্চভাষণজনিত স্বরভঙ্গে ৫/৭ গ্রাম তেজপাতা থেতো করে ৩/৪ কাপ পানিতে সেদ্ধ করে ১ কাপ থাকতে নামিয়ে হেঁকে নিয়ে আধা ঘন্টা পর পর ৩/৪ বারে একটু একটু করে খেলে স্বরভঙ্গটা চলে যাবে।

৫) রক্ত প্রসাবে ৫/৭ গ্রাম তেজপাতা থেতো করে ২/৩ কাপ গরম পানিতে ২ ঘন্টা ভিজিয়ে রেখে হেঁকে নিয়ে ১ ঘন্টা পরপর একটু একটু করে খেলে উপকার হয়। একদিনে উপশম না হলে এটি ২/৩ দিন খেতে হবে।

৬) দুটি তেজপাতা গরম পানিতে ধুয়ে নিয়ে একটু থেতো করে সিকি কাপ গরম পানিতে কয়েকঘন্টা ভিজিয়ে রেখে পরিস্কার ন্যাকড়া দিয়ে হেঁকে নিয়ে সেই পানি চোখে দিলে চোখওঠা সেরে যাবে।

৭) তেজপাতা চন্দনের মত করে বেটে গায়ে মাখালে গায়ে দুর্গন্ধ হওয়া বন্ধ হয়ে যায়।

৮) বেশী ঘাম হলে তেজপাতা বাটা গায়ে মেখে আধা ঘন্টা পরে গোসল করে ফেললে অত্যধিক ঘাম হওয়া কমে যাবে।

৯) উপযুক্ত নিয়মে তেজপাতা বাটা গায়ে মেখে ১ ঘন্টা পর গোসল করে ফেললে ঘামাচি চলে যাবে। এতে গায়ের ময়লাও কেটে যাবে।

১০) গরমের দিনে গায়ে ফোড়া উঠলে তেজপাতা বাটার প্রলেপ দিলে ফোঁড়ার যন্ত্রণা চলে যাবে ও শক্ত আঁটির মত যে গুল রয়েছে তাও কমে যাবে।

১১) তেজপাতা চূর্ণ দিয়ে দাঁত মাজলে মাড়ির ক্ষত সেরে যায়।

১২) তেজপাতা সেদ্ধ করে সে-পানিতে কুলি করলে অরুচি চলে যায় ।

সাধারণ ব্যবহার : তেজপাতা শুধু ওষুধি হিসেবেই নয়, এটি বাংলাদেশ, ভারত, এমনকি সুমাত্রা, জাভা অবধি সুস্বাদু রান্নার অন্যতম সুগন্ধী উপকরণ হিসেবেও ব্যবহৃত হয়। দেশী সজিবহুল রান্নায় তেজপাতার ব্যবহার অতটা না হলেও মাংস, মোরব্বা, পোলাও ইত্যাদি রান্নয় তেজপাতা অত্যাবশ্যক মসলা। এছাড়া, বাকল থেকে সুগন্ধ উদ্বায়ী তেল পাওয়া যায় যা সাবান উৎপাদনে ব্যবহার করা যায়। গাছেল বাকল ও পাতা ট্যানিন হিসেবেও ব্যবহার করা যায়।

রাসায়নিক উপাদান : ফেলড্রিন (Phellandrin), ইউজিনল (Eugenol) ও সিননামিক এলডিহাইড (Cinnamic aldihyde) ইত্যাদি।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *