গাছপালা

ডালিম ফল গাছ

প্রচলিত নাম : ডালিম

ইংরেজী নাম : Pomegranate

বৈজ্ঞানিক নাম : Punica granatum Linn.

পরিবার : Punicaceae

পরিচিতি : ছোট বৃক্ষ বা গুল্ম জাতীয় গাছ। বাকল কালো। পাতা সরল, প্রতিমূখি, ২-৫x২-১৫ সে. মি., সরু লম্বাটে, উজ্জ্বল ও পাতলা। শাখাশীর্ষের পাতা লালাভ সবুজ। ফুল উজ্জ্বল লাল এবং ফল বেরি, গ্লোবুজ ও গোলাকৃতির বড় আকারের হয়।

বিস্তৃতি : ডালিমের বিস্তার ইরানে বলে বিজ্ঞানীরা মনে করেন। হিমালয়ের বলকান অঞ্চলে এর অনেক বন্য প্রকরণ দেখা যায় । ইরান, মিশর, আফগানিস্তান, বেলুচিস্তান, স্পেন, মরক্কো, আলজিরিয়া ইত্যাদি স্থানে ডালিমের চাষ ভাল ও বেশী হতে দেখা যায়। ভারতে ডালিমের চাষ বেড়ে চলেছে। বাংলাদেশে ডালিমের বাগিচা দেখা না গেলেও প্রত্যেক বাড়িতেই দু’একটি ডালিম গাছ দেখা যায় ।

মাটি ও জলবায়ু : বাংলাদেশের সর্বত্রই ডালিমের চাষ করা যায় এবং বহু প্রাচীনকাল থেকেই এর চাষ হয়ে আসছে। তবে গ্রীষ্মকালে গরম ও শুষ্ক আবহাওয়া থাকলে ফলের স্বাদ ভাল হয়। ১,৬০০ মি. উচ্চতাতেও ডালিমের চাষ হয়। কেননা, ডালিম গাছ তুষারপাত কিছুটা সহ্য করতে পারে। তবে গরমকালে তাপমাত্রা ১০ • সে. এর কম হলে চলবে না। আদ্র আবহাওয়াতে ফলের স্বাদ ভাল হয় না। গাছ শুষ্ক আবহাওয়া সহ্য করলেও প্রয়োজনমতো সেচ দিলে ভাল ফলন পাওয়া যায় । জল নিকাশের ভাল ব্যবস্থাযুক্ত গভীর মাটি ডালিম চাষের উপযুক্ত। বেলে দোআঁশ বা পলিমাটিতে ডালিম গাছ খুব ভাল হয়। এমনকি অল্প। ক্ষার মাটিতেও ডালিম গাছ হয়।

বীজ সংগ্রহ : জুলাই-আগস্ট

চারা তৈরী : বীজ থেকে ডালিমের চারা তৈরী করা হয়, তবে ফলের মান ও উৎপাদন সম্বন্ধে কোন নিশ্চয়তা থাকে না । অঙ্গ ব্যবচ্ছেদের মাধ্যমে চারা তৈরী করে নেওয়াই ভাল। এক বছর বয়সের পুষ্ট ঢাল থেকে শাখা কলম করা যায়। বর্ষাকালে অল্প ছায়ায় নার্সারী বেড তৈরী করে, ৪০-৪৫ সে.মি., লম্বা ও কড়ে আঙ্গুলের মত মোটা ডালিম ডাল বেছে নিতে হবে। এ ধরনের ডালগুলি কেটে নার্সারী বেডে লাগিয়ে দিতে হবে। প্রায় ৯ মাস পরে এগুলো জমিতে লাগানোর উপযুক্ত হয়। কাটিং ছাড়া গুটি কলমও করা যায়। চারার বয়স ১ বছর হলে জমিতে লাগান যায়।

চারার রোপন : বর্ষাকালে চারা রোপণের উপযুক্ত সময়। চারা লাগানোর আগে ভালভাবে চাষ দিয়ে জমি তৈরী করে নেওয়া দরকার। জমি তৈরী হয়ে গেলে ঘন চারা লাগানোর একমাস আগে ৫-৬ মিটার দূরে দূরে লাইনে ৭০ সে.মি. গর্ত করে মাটিকে রোদ খাওয়াতে হবে। ১০-১৫ দিন রোদ খাওয়ান হলে গর্তপিছু ১৫-২০ কেজি জৈব সার মাটির সাথে মিশিয়ে গর্তটি ভরাট করতে হবে। এরপর নার্সারী বেডটি আগের দিন জল দিয়ে ভিজিয়ে দিতে হবে। এরপর চারাগুলো জমিতে নিয়ে পূরণ করা নিদিষ্ট গর্তের মাঝখানে লাগাতে হবে। লাগানোর সময় মাটির তালটি না ভাঙ্গাই ভাল। হালকা করে চাপ দিয়ে গোড়ার মাটি ভিজিয়ে দিতে হবে। দরকার হলে ঠেকা দিয়ে, ভালভাবে জল দিয়ে মাটি ভিজিয়ে দিতে হবে। বিভিন্ন জ্যামিতিক পদ্ধতিতে অর্থাৎ বগাকার বা ষড়ভূজাকার চারাগুলি লাগান যায়।

সার প্রয়োগ : ছোট গাছে ঠিক বর্ষার আগে সার প্রয়োগ করা উচিত। এক বছর বয়সের গাছে ৯ কেজি জৈব সার এবং ৪০ গ্রাম নাইট্রোজেন সার দেয়া দরকার। প্রতি বছর একই হারে বাড়িয়ে ৫ বছরে সেই সারের পরিমাণ দাড়াবে গাছপিছু ৪৫ কেজি জৈব সার ও ২০০ গ্রাম নাইট্রোজেন সার। বসন্তকালে গাছের বৃদ্ধি শুরু হলে জৈব সার এবং ফল ধরার পর নাইট্রোজেন সার দিতে হবে।

সেচ প্রয়োগ ও অন্তবর্তী শস্যের চাষ : প্রথমদিকে প্রয়োজনমত অল্প সেচ নিয়মিত দেওয়া দরকার। তবে গাছগুলোর বয়স ছয় মাস হওয়ার পর সেগুলো জলাভাব সহ্য করতে পারে এবং তখন প্রায় ৩ সপ্তাহ অন্তর সেচ দিলেই চলে। ডালিম গাছে ফল আসতে দেরি হয়, কাজেই এই সময়ের মধ্যে বাগিচায় অন্তর্বর্তী ফসল হিসেবে সজী বা গো-খাদ্য চাষ করা চলে বা সবুজসার চাষ করে মাটির সাথে মিশিয়ে দিলে ভাল ফল পাওয়া যায়। তবে মনে রাখতে হবে, যেন নরম কান্ডযুক্ত সবুজ সারের চাষ করা হয়, কেন না শক্ত কাণ্ডযুক্ত সবুজ সারের গাছ পচাবার সুযোগ ডালিম বাগিচায় থাকে না।

মাধ্যমিক পরিচর্যা : গাছ ছাঁটাই-পুরাতন ডাল থেকে উৎপন্ন ছোট শাখার মাথায় ফুল আসে ও ফল ধরে। এই শাখাগুলোতেই ২-৩ বছর ফল ধরে। তাই ফলন্ত গাছে অল্প ছাঁটাই পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়। ফলন্ত গাছ অল্প ছাঁটাই করলে নতুন শাখা বেরোনোর সুবিধা হয়। লম্বা ও সরু শাখাগুলি ছোট করে দেওয়া ও মাঝে মাঝে পাতলা করে দেওয়া দরকার। শিকড়, কাণ্ড ও শাখা থেকে উৎপন্ন নতুন সাকার বা চারা নিয়মিত ভেঙ্গে দেওয়া উচিত, না হলে ফলন কমে যাবে।

ফল সংগ্রহ ও ফলন : চার বছর বয়স থেকেই গাছে অল্প অল্প ফল ধরতে থাকে, তবে ৮-১০ বছর থেকে ভাল ফলন পাওয়া যায় এবং এই ফলন ৩০ বছর পর্যন্ত বজায় থকে। ফুল আসার সময় থেকে মাস ছয়েক পর ফলগুলি পাড়ার উপযুক্ত হয়। খোসার রং হলদেটে বা বাদামী হলেই বুঝতে হবে, ফলগুলি পাড়ার উপযুক্ত হয়েছে। অকালে পেড়ে নেওয়া ফলের বাজার দর ভাল পাওয়া যায় না। ঠিকমতো পরিচর্যা করলে গড়ে গাছপ্রতি ২৫ থেকে ৫০ টি ফল পাওয়া যেতে পারে। পাকা ফল বেশ কিছুদিন সংরক্ষণ করা যায় ।

সাধারণ ব্যবহার : কাঠ মোটামুটি শক্ত এবং ছোট আকারের জিনিস ও হাতল নির্মাণে ব্যবহৃত হয়। ফল উপাদেয় বিধায় ফলের গাছ হিসেবে পরিচিত। ফলে রস পুষ্টিকর। পেটের অসুখ সারানোর জন্য গাছের ছাল ও ফলের খোসার রস ব্যবহৃত হয়।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *