সাদা স্রাব এর চিকিৎসা ও সকল পদ্ধতির ডাক্তারদের বক্তব্য।
সাদা স্রাব
প্রজনন পথ দিয়ে তরল পদার্থ বের হওয়াকে সাদা স্রাব হিসেবে অভিহিত করা হয়। প্রকৃত পক্ষে স্বাভাবিক ভাবেই প্রজনন পথ থেকে তরল পদার্থ বের হয়। এই তরল পদার্থ প্রজনন পথকে জীবানুমুক্ত রাখতে সাহায্য করে।
বিভিন্ন কারনে এই নিঃসরণ বেশি হতে পারে; যেমন-ইনফেকশন (ব্যকটেরিয়া, ভাইরাস, ছত্রাক, প্রোটোজোয়া), জরায়ুমুখের সমস্যা, অপুষ্টি, মানসিক চাপ ইত্যাদি। তবে নিঃসরন যদি খুব বেশি হয় (যেমন- পা দিয়ে নিচের দিকে গড়িয়ে পড়া, স্যানিটারী ন্যাপকিন বা প্যাড ব্যবহার করার প্রয়োজন হওয়া, সর্বদাই হালকা নিঃসরণ হওয়া), জননাঙ্গে চুলকানী সৃষ্টি করে, বাহ্যিক জননাঙ্গে জ্বালাপোড়ার সৃষ্টি করে, খুব দুর্গন্ধযুক্ত হয় তবে দ্রুত চিকিৎসা নেয়ার প্রয়োজন হতে পারে।
প্রাথমিক চিকিৎসা
সাধারণ ব্যবস্থাপনা
ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা মেনে চলা
বিবাহিতা হলে স্বামীর পরীক্ষা নিরীক্ষা করানো
প্রতিরোধ
ইনফেকশন অতিরিক্ত সাদা স্রাবের প্রধান কারন। তবে এই ইনফেকশন প্রতিরোধ করা যায়। যেমন-
মাসিকের সময় পরিস্কার জীবানুমুক্ত সুতি কাপড় ব্যবহার করা। যদি মাসিকের সময় কাপড় ব্যবহার করা হয় তবে কাপড়গুলো প্রথমে পরিস্কার পানিতে ধুয়ে উন্নতমানের ডিটারজেন্ট/সাবান দিয়ে ১৫ মিনিট ভিজিয়ে রাখতে হবে। এরপর কাপড়গুলো খুব। ভালভাবে ধুতে হবে। কড়া রোদে শুকাতে হবে। কড়া রোগে শুকানো সম্ভব না হলে প্রচুর বাতাসে শুকাতে হবে। খুব ভালভাবে শুকানোর পর সম্ভব হলে এগুলোকে ইস্ত্রি। করতে হবে। এরপর প্রতিটি কাপড় আলাদা আলাদা পরিস্কার পথিব্যগে মুড়িয়ে পরিস্কার স্থানে রেখে দিতে হবে (কখনোই তোষকের নিচে রাখা যাবে না)। কাপড়ের সংখ্যা ও পরিমান নির্ভর করে রক্তক্ষরন ও স্থায়িত্বকালের উপর। তবে স্বাভাবিক ভাবে ১০-১৫ টি কাপড় প্রস্তুত করে রাখা উচিত। মাসিক চলাকালিন সময়ে পরিস্কার করে, শুকিয়ে, ইস্ত্রি করে ব্যবহার করা যায়। মাসিক শেষ হলে ব্যবহৃত সবগুলো কাপড় উপরোক্ত নিয়মে পরিস্কার করে সংরক্ষন করতে হবে । যদি বাইরে অবস্থান। করতে হয় তবে স্যানিটারী ন্যাপকিন ব্যবহার করাই উত্তম। বাংলাদেশের মতো একটি দরিদ্র দেশে নিয়মিত স্যানিটারী ন্যাপকিন ব্যবহার যুক্তযুক্ত নয় কারন স্যানিটারী ন্যাপকিন ব্যয়বহুল। উল্লেখিত নিয়ম মানলে কাপড় দ্বারাও পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা সম্ভব। একটি কাপড় সাধারণত ৬ ঘন্টার বেশি ব্যবহার করা উচিৎ নয়। আবার স্যানিটারী ন্যাপকিন প্রস্তুকারক কর্তৃক নির্ধারিত সময় ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে সেটা ৮-১০ ঘন্টার বেশী না হওয়াই শ্রেয়।
মলত্যাগের পর টয়লেট পেপার ব্যবহার করতে হবে। কমপক্ষে তিন টুকরো টয়লেট পেপার ব্যবহার করতে হবে। প্রথমটি সামনে থেকে পেছন দিকে টানতে হবে। দ্বিতীয়টিও সামনে থেকে পেছন দিকে টানতে হবে। তৃতীয়টি পেছন থেকে সামনের দিকে টানতে হবে। পানি ব্যবহারের সময় হাত প্রথমে মুত্রনালীর নিকটে এরপর যৌনাঙ্গ এবং সর্বশেষে মলদ্বার পরিস্কার করতে হবে। মলদ্বারে হাত দেয়ার পর তা আর যৌনাঙ্গে দেয়া যাবে না।
প্রতিবার টয়লেট ব্যবহারের (মল/মূত্র ত্যাগ) পর একটি পরিস্কার শুকনো সুতি কাপড় দ্বারা যৌনাঙ্গ চেপে চেপে মুছতে হবে। যেন তাতে কোন পানি না থাকে। এ ক্ষেত্রে টয়লেট পেপারও ব্যবহার করা যেতে পারে।
রাতে ঘুমানোর পূর্বে নিম্নাঙ্গ কোমল সাবান ও পানি দ্বারা পরিস্কার করতে হবে। বিবাহিত হলে যৌনমিলনের পূর্বে স্বামী স্ত্রী উভয়েই যৌনাঙ্গ কোমল সাবান ও পানি দ্বারা ধুয়ে পরিস্কার করতে হবে। যৌনমিলনের পরেও যৌনাঙ্গ পরিষ্কার করতে হবে।
এক অন্তর্বাস (প্যান্টি) একবার ব্যবহারের পর পরবর্তীতে না ধুয়ে আবার ব্যবহার না করা। অন্তর্বাস ৮-১০ ঘন্টার বেশী ব্যবহার না করা। রাতে ঘুমানোর সময় অন্তর্বাস ব্যবহার না করাই উত্তম। আর অন্তর্বাস ব্যবহারের অভ্যাস না থাকলে রাতে ঘুমানোর সময় নিম্নাঙ্গের কাপড় (যেমন স্যালোয়ার, পেটিকোট, স্কার্ট ইত্যাদি) পরিবর্তন করে শুতে হবে।