পাতলা পায়খানা বন্ধ করার উপায় ও সকল পদ্ধতির ডাক্তারদের বক্তব্য।
পাতলা পায়খানা
পাতলা বলতে স্বাভাবিকের চেয়ে নরম পায়খানা হওয়াকে বোঝানো হয়েছে। পাতলা পায়খানা পানির মত তরলও হতে পারে আবার নাও হতে পারে। পাতলা পায়খানা বিভিন্ন কারনে হতে পারে। জীবাণু, ইন্টেস্টাইনের সমস্যা,ঔষধ ইত্যাদি কারণে পাতলা পায়খানা হতে পারে।
দিনে তিন বারের বেশি পানির মত তরল পায়খানা হওয়াকে ডায়রিয়া বলা হয়। মনে রাখতে হবে ডায়রিয়া ও পাতলা পায়খানা এক বিষয় নয়। ডায়রিয়ার প্রধান কারন জীবানু। আমাদের দেশে ভাইরাস জনিত ডায়রিয়া বেশি হয়ে থাকে। আবার কলেরা নামক আরেকটি ডায়রিয়া রয়েছে যা ব্যকটেরিয়া দ্বারা সৃষ্ট। কলেরার বৈশিষ্ট্য হলো চাল ধোয়া পানির পায়খানা বার বার পায়খানা হওয়া।
প্রাথমিক চিকিৎসা
সাধারণ ব্যবস্থাপনা
পাতলা পায়খানা হলে বার বার খাবার স্যালাইন খেতে হবে। প্রতিবার পায়খানা থেকে ফেরার পর আধা পোয়া থেকে আধালিটার পর্যন্ত খাবার স্যালাইন খেতে হবে। মনে রাখবেন ডায়রিয়ার প্রস্রাব কমে গেলে মারাত্নক জটিলতা দেখা দিতে পারে। ডাব, কাঁচা ও পাকা পেপে, বেল ডায়রিয়ার উপশম ঘটাতে পারে।
ঘরে খাবার স্যালাইন তৈরির নিয়ম
প্রথমে দুই হাত, আধা লিটারের বেশি পানি ধরে এমন পাত্র, একটি চামচ ভালভাবে সাবান দিয়ে পরিস্কার করে নিতে হবে।
পাত্রে আধালিটার বিশুদ্ধ পানি নিতে হবে ।
সেখানে একমুঠ চিনি দিতে হবে (গুড় দেয়া যাবে না কারন গুড়ের মাঝেই
ডায়রিয়ার জীবানু থাকতে পারে)।
তারপর এতে এক চিমটি লবন দিতে হবে। v এরপর চামচ দিয়ে এটি ভাল ভাবে নাড়তে হবে।
স্বাদের জন্য এতে লেবু দেয়া যেতে পারে।
এভাবে তৈরি হলো খাবার স্যালাইন। একবার তৈরি করলে এটি ৬ ঘন্টা পর্যন্ত ভাল থাকে। ঘরে তৈরি স্যালাইন হালকা গরম করা যেতে পারে, তবে তৎক্ষণাৎ পান করতে হবে। (প্যাকেটের স্যালাইন গরম করা যাবে না ) ।
ঔষধ
ক) এন্টিডায়রিয়াল ড্রাগ।
জেনেরিক: রেসিকাডোট্রিল: ব্রান্ড-রেসিকা। ডোজ: প্রাপ্ত বয়স্কদের ক্ষেত্রে-১ ক্যাপসুল দিনে তিন বার
খ) এন্টিবায়োটিক: ভাইরাস জনিত ডায়রিয়ায় এন্টিবায়োটিক কোন কাজ করে না। তবে ব্যকটেরিয়া জনিত ডায়রিয়ায় এন্টিবায়োটিক প্রয়োজন। যদি ভাইরাস জনিত ও ব্যকটেরিয়া জনিত ডায়রিয়া পার্থক্য করা সম্ভব না হয় তবে এন্টিবায়োটিক প্রয়োগ করা যেতে পারে।
জেনেরিক: এজিথ্রোমাইসিন (azithromycin)
ব্র্যান্ড : জিথ্রিন (zithrin) প্রস্তুকারক: রেনাটা।
ডোজঃ
প্রাপ্ত বয়স্কদের ক্ষেত্রে : দৈনিক ৫০০ মিগ্রা একক মাত্রা হিসেবে ৩ থেকে ৬ দিন।
শিশুদের ক্ষেত্রে ১০ মিগ্রা/কেজি হিসেবে
বয়স। ৩-৬ মাস বয়স পর্যন্ত 1 সিরাপ: একচামচের চারভাগের একভাগ দিনে।
একবার ৩-৬ দিন। ৬ মাস থেকে ১ বছর | একচামচের তিনভাগের একভাগ ৩-৬ দিন। বয়স পর্যন্ত ১ বছর থেকে ২ বছর আধা চামচ দিনে একবার ৩-৬ দিন। | ২ বছর থেকে ৫ বছর | এক চামচ দিনে একবার ৩-৬ দিন।
৫-১২ বছর।
২৫০ মিগ্রা ট্যাবলেট অথবা ১.২৫ চামচ সিরাপ | দিনে এক বার, ৩-৬ দিন ।
গ) জিংক সাপ্লিমেন্ট: পাচ বছরের কম বয়স্ক শিশুদের ক্ষেত্রে।
জেনেরিক: জিংক সালফেট; (Zinc Sulphate)
ব্র্যান্ড- সিরাপ – ম্যাজিক (Mazic} ; প্রস্তুতকারক রেনাটা)
ডোজঃ
৬ মাসের কম বয়স: আধা চামচ দিনে ২ বার ।
৬ মাস-৫ বছর: এক চামচ (১০ মিগ্রা) দিনে দুই বার।
ডায়রিয়ার রোগী কখন হাসপাতালে রেফার করতে হবে।
শিশুদের ক্ষেত্রে দিনে ১০ বারের বেশি।
প্রাপ্ত বয়স্কদের ক্ষেত্রে দিনে ২০ বারের বেশি।
মারাত্নক ডিহাইড্রেশন দেখা দিলে।
প্রস্রাব বন্ধ হয়ে গেলে।
রোগীর জ্ঞান লোপ হলে।
বমি ও পাতলা পায়খানা একসাথে থাকলে।
হাসাপাতালে প্রেরণের সময় করণীয় ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীকে হাসপাতালে প্রেরণের পূর্বে একটি কলেরা স্যালাইন ইনফিউশন করতে হবে ৩০ ফোটা/মিনিট হারে। কলেরা স্যালাইন না পাওয়া নরমাল স্যালাইন ইনফিউশন করা যেতে পারে।