প্রচলিত নাম : পাথরকুচি
ইংরেজী নাম : American Life Plant
বৈজ্ঞানিক নাম : Kalanchoe pinnata Pers.
পরিবার : Crassulaceae
পরিচিতি : পাথরকুচি একটি শাখাবিহীন গুল্মজাতীয় উদ্ভিদ। ০.৫-১.০ মিটার পর্যন্ত বড় হয়। কান্ড খুবই সরু থাকে। পাতা বেশ মসৃণ খাজকাটা, ডিম্বাকৃতি ৮-১২ সে. মি. পর্যন্ত লম্বা হয়।
বিস্তৃতি : বাংলাদেশের সর্বত্র।
ব্যবহার্য অংশ : পাতা।
চাষাবাদ : বটের ঝুরির মতো শেকড়গুলো বড় হয়ে মাটির সঙ্গে ঠেকলে তা থেকে আবার নতুন চারাগাছ জন্মে। ফুলের পাপড়ির বাইরের দিকটা সবুজ ও লাল রং মেশানো থাকে এবং এর ওপর সাদা সাদা দাগ থাকে। কার্তিক মাসের শেষদিকে ফল ফুটতে শুরু করে আর ফারুনে ফল ধরে ।
বংশ বিস্তার : পাথরকুচির বংশ বিস্তার বা নতুন চারা উত্তোলন খুব সহজ। একটি পরিপক্ক পাতা ছিড়ে রসযুক্ত মাটিতে দিলে কয়েকদিন পর পাতার কিনারা থেকে একাধিক নতুন চারা গজায় এবং এর জন্য বিশেষ যত্নের প্রয়োজন হয় না, তবে মাঝেমাঝে পানি সিঞ্চন প্রয়োজন।
ঔষধি ব্যবহার :
১) মেহরোগে : পাথরকুচির টাটকা পাতার দশ মিলিলিটার রস সকালে এবং বিকালে একবার করে খেলে অবশ্যই সুফল পাওয়া যাবে। নিয়মিত সাত দিন ঔষধ খাওয়া দরকার । রোগ যদি বেশিদিনের পুরাতন হয়, তবে ধৈর্য ধরে ২০/৩০ দিন পর্যন্ত নিয়মিত এ ঔষধ খাওয়া দরকার ।
২) পেট ফাঁপায় : গুরুপাক বা অসময়ে ভোজনে, অনেক সময় পেট ফেঁপে যায়। ২০ মিলিলিটার পাথরকুচি পাতার টাটকা রস এবং এক চামচ চিনি আধাকাপ গরম পানিতে মিশিয়ে রোগীকে খাওয়ালে আধা ঘন্টার মধ্যে প্রস্রাব স্বাভাবিক হবে। এর সঙ্গে পেটের মধ্যে জমে থাকা বায়ু মলদ্বার বা মুখ দিয়ে বেরিয়ে আসবে। পেট ফাপাও সঙ্গে সঙ্গে চলে যাবে।।
৩) মৃগী রোগে : মৃগী রোগী ফিট হয়ে পড়লে যখন তার হাত-পা বেঁকে যায় এবং দাঁত লেগে যায়, তখন পাথরকুচি পাতার পাঁচ থেকে দশ ফোঁটা টাটকা রস যেভাবেই হোক রোগীকে খাইয়ে দিতে হবে। অবশ্য দেখা দরকার যাতে রসটা রোগীর পেটের ভেতরে যায়। খুব অল্প সময়ের মধ্যে রোগীর সম্পূর্ণ জ্ঞান ফিরে আসবে। তবে এতে স্থায়ীভাবে রোগ আরোগ্য হয় না। সাময়িক উপশম হয় মাত্র।
৪) পুরনো সর্দি : ১৫ মিলিলিটার পাথরকুচি পাতার রস, ২৫০ মিলিগ্রাম সোহাগার খৈ-এর সঙ্গে মিশিয়ে, পাথরের খলে ভালভাবে নেড়ে নিতে হবে। এর ঔষুধ সকালে একবার এবং একই পরিমাণে বিকেলে আরেকবার খাওয়া দরকার। সর্বদা যদি কাশি হয়, তবে তাও বন্ধ হয়ে যাবে। শীতকাল হলে আরও ২/৩ দিন ঔষুধ খাওয়ার প্রয়োজন হতে পারে।
৫) কাটা, আঘাত ও বিষিয়ে গেলে ও দেহের কোন অংগে আঘাত লেগে যতি থেতলে যায়, ধারালো অস্ত্রের আঘাতে গভীরভাবে কেটে রক্ত পড়তে থাকে, কিংবা কাটা ঘা বিষিয়ে গেলে, পাথরকুচি পাতাকে হালকা তাপে সেঁকে আঘাত লাগা অংগে চাপা দিয়ে কাপড়ের ফালি দিয়ে বেঁধে রাখলে, তিন দিনেই সুফল পাওয়া যায়।
৬) যে কোন কারণেই হোক বা যে কোন বয়সেই হোক মূত্র রোধে ২ চমচ পাথরকুচি পাতার রস আধাকাপ কুসুম গরম পানিতে মিশিয়ে সকালে ও বিকালে খেলে উপকার হবে। শিশুদের ক্ষেত্রে মাত্রা অর্ধেক।
৭) রক্তপিত্তে পাথরকুচি পাতার রস উপরের নিয়মে ২/৩ দিন খাওয়ালেই ধীরে ধীরে কমে যাবে। পুরোনো সর্দি বা কফ ও ঠাণ্ডা লেগে শ্লেষ্মা হলে ২ চা-চামচ পাথরকুচি পাতার রস গরম করে সাথে ১৬৫ মি. গ্রা. সোহাগা- খই মিশিয়ে সকাল-বিকাল ২ বার খেলে সর্দি চলে যাবে এবং কাশির হাত থেকেও বাঁচা যাবে।
৮) অনেক সময় দেড় দুই বৎসরের শিশু কান্নাকাটি করে কোথায় কি হয়েছে বলতে পারে না, যদি বোঝা যায় পেটে ব্যথা তবে পাথরকুচি পাতার রস ৩০-৬০ ফোটা গরম করে ঠাণ্ডা হলে মুখে দিতে হবে এবং কাঁচা রস পেটে লাগিয়ে দিতে হবে।
রাসায়নিক উপাদান : Leaves contains a) Malic acid, b) Isocitric acid & c) Citric acid.