ঝানা গাছ
প্রচলিত নাম : গর্জন
ইংরেজী নাম : Jhana, Garjan
বৈজ্ঞানিক নাম : Rhizophora mucronata Larmk.
পরিবার : Rhizophoraceae
পরিচিতি : প্যারাবনের চিরসবুজ মাঝারী গাছ, উচ্চতায় ৩-৫ মিটার। এ গাছে শাখা ও কাণ্ড থেকে বাহির হওয়া অসংখ্য ঠেস মূল আছে। ব্ৰঞ্চলেট বেগুনি। পাতা কালো জামা পাতার খুবই পুরু, উপরের দিক গাঢ় সবুজ উজ্জ্বল, লম্বায় ১০-১২ সে. মি. লম্বা বাদামী বর্ণের হয়। কিন্তু ভ্ৰণমূল প্রায় ৭৫ সে. মি. হয় এবং ঝুলন্ত অবস্থায় থাকে। সাধারণত মোহনার নিকটবর্তী নদীতীরে এবং জোয়ারের প্রভাবাধীন উপকূলীয় এলাকায় জন্মে। ঝানার কচি শাখাতে ঝড়া পাতার সুস্পষ্ট দাগ দেখতে পাওয়া যায়। বাকল মোটামুটি মসৃণ, বর্ণ বাদামী। প্রতিটি গাছে প্রচুর ঠেসমূল জন্মায়। যদি কাণ্ডের নীচের অংশ মারাও যায় তবুও উপরের অংশ ঠেসমূলের সাহায্য বেঁচে থাকে।
নজরকাড়া সাদা ফুল মার্চ এপ্রিল মাসে ফোটে, ফুলের গর্ভমুণ্ড গর্ভদণ্ড বিহীন। জুলাই-আগস্টে ফল পাকে। ফল ৪-৫ সেন্টিমিটার লম্বা হয়ে থাকে। ফলের শীর্ষদেশ থেকে ৩০-৬০ সেন্টিমিটার লম্বা অমসৃণ আঁচিলযুক্ত বীজপত্রাব কাণ্ড বের হয় এবং এটি মাটির কিছুটা গভীরে ঢুকে ঝানার চারাকে জোয়ারের পানিতে ভেসে যাওয়া থেকে রক্ষা করে।
বিস্তৃতি : শুধুমাত্র সুন্দরবনে ও চকরিয়া সুন্দরবনে খাল ও নদীর ধারে পাওয়া যায় ।
বীজ সগ্রহ : জুলাই-আগস্ট।
বীজের ওজন : কেজিতে ১০-১৫টি।
চাষাবাদ : ঝানা সুন্দরবনে সর্বত্রই কম-বেশী জন্মে। তবে সুন্দরবনের দক্ষিণাংশের অধিক লবণাক্ত অঞ্চলে বেশী জন্মে। ঝানা গাছ। জ্বালানী হিসেবে ব্যবহার হয়। উহার অর্থনৈতিক গুরুত্ব তুলনামূলকভাবে কম। উহা সাধারণতঃ খাল ও নালার ধারে ভাল জন্মে। ঝানার নার্সারী উত্তোলন সাধারণতঃ করা হয় না। বীজ সরাসরি নালার ধারে ভাল জন্মে। বীজ সরাসরি মাঠে লাগানো হয়।
বীজ সগ্রহ : ঝানার বীজ ফল বা প্রপাগিউল জুলাই-আগস্ট মাসে পরিপক্ক হয়। ঝানার বীজ ফল লম্বায় প্রায় ৪০-৬০ সে. মি. পর্যন্ত লম্বা হয়। এক কেজিতে ১২-১৫টি বীজ হয়। গাছের নীচ থেকে জোয়ারের সময় ছোট নৌকায় করে বীজ সংগ্রহ করা হয় এবং বস্তায় ভরে পরিবহন করা হয়।
নার্সারী উত্তোলন : ঝানার সাধারণতঃ কোন নার্সারী উত্তোলন করা হয় না। প্রপাগিউল সরসারি বাগানে লাগানো হয়। বীজ সংগ্রহের পরপরই বীজের অঙ্কুরোদগমের হার ১০০%। এপ্রিল-মে মাসে ১০ মাস বয়সের ১০০-১২৫ সে. মি. চারা খাল বা নালার ধারে লাগাতে হয়। চারার পরিচর্যায় স্বাভাবিক নিয়ম অনুসরণীয়।
সাধারণ ব্যবহার : কাঠ গাঢ় লাল বর্ণের, শক্ত ও টেকসই। কাঠ সাধারণতঃ কুঁড়েঘরের খুঁটি ও জ্বালানী হিসেবে ব্যবহৃত হয়। বাকলে ২৫% ট্যানিক আছে বিধায় চামড়া ট্যানিক হিসাবে ব্যবহৃত হয়।