জৈন গাছ
প্রচলিত নাম : জৈন
ইংরেজী নাম : Jain
বৈজ্ঞানিক নাম : Trachyspermum ammi Linn.
পরিবার : Apiaceae
পরিচিতি : জৈন এক প্রকার বর্ষজীবী উদ্ভিদ। গাছগুলো দেখতে অনেকটা ধনিয়া গাছের মতো। সাধারণতঃ গাছগুলো ৮০ সে. মি. হতে ১ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে। ছত্রাকারে সাদা রং-এর ফুল হয়। এর বীজগুলো অনেকটা রাঁধুনী বীজের মত গোলাকার তবে অপেক্ষাকৃত ছোট প্রকৃতির। বীজের গন্ধ অতীব তীব্র এবং স্বাদ ঝাঝালো।
ব্যবহার্য অংশ : বীজ ও তেল।
বীজ বপন ও রোপণ পদ্ধতি : সাধারণতঃ কার্তিক-অগ্রাহায়ণ মাসে জৈন ক্ষেতে বপন করতে হয়। পৌষ-মাঘ মাসের দিকে ফুল হয় ও পরবর্তীতে ফল হয়। ফল বা বীজ ফাল্গুন-চৈত্র মাসে পাকে।
উপযোগী আবহাওয়া ও মাটি : সমতল ভূমিতে বীজ বপন করতে হয়। বিশেষতঃ বেলে দো-আঁশ মাটিতে উৎকৃষ্ঠমানের জৈন উৎপন্ন হয়।
সংগ্রহ ও সংরক্ষণ পদ্ধতি : জৈন পরোপুরিভাবে পাকলে ক্ষেত হতে জৈন উঠিয়ে ভালোভাবে রৌদ্রে শুকানোর পরে মাড়াই করে বা পিটিয়ে সংগ্রহ করতে হয়। অতঃপর পরিচ্ছন্ন করে শুষ্কস্থানে রাখা হলে ১ বৎসর পর্যন্ত জৈন সংরক্ষণ করা যায় এবং এর কার্যকারিতা অটুট থাকে।
ঔষধি গুণাগুণ : পাকস্থলী ও যকৃতের শক্তিবর্ধক, হজমকারক, বায়ুনিঃসারক, পাকস্থলীর ব্যথা নিবারক, অজীর্ণ, পেটফাঁপা, ক্ষুধামন্দ্য ও মুখের দুর্গন্ধ নিরসনে বিশেষ ফলপ্রদ।
ঔষধি ব্যবহার :
১) হজম শক্তি ও পেট ফাঁপায় : ১-২ গ্রাম পরিমাণ জৈন চূর্ণের সাথে সামান্য পরিমাণ বিট লবন মিশিয়ে আহারের পর দিনে ২ বার সেব্য। উল্লিখিত নিয়মে ১৫-২০ দিন নিয়মিত সেবন করে যেতে হবে।
২) অজীর্ণ ও পাকস্থলীর ব্যথা : ১০০ গ্রাম জৈন, ৫০ গ্রাম ঠ (শুকনো আদা), বিট লবন ২৫ গ্রাম নিয়ে মিহিচূর্ণ করে চালুনি দিয়ে সংরক্ষণ করতে হয়। প্রত্যহ আহারের পর ৩-৫ গ্রাম পরিমাণ দিনে ২ বার গরম পানিসহ সেবন করলে অজীর্ণ ও পাকস্থলীর ব্যথা কমে যায়।
৩) বাত ব্যথা : জৈনের তৈল প্রয়োজনমতো নিয়ে আক্রান্ত স্থানে হালকাভাবে দিনে ২ বার মালিশ করতে হয়। উক্ত নিয়মে ৭-১০ দিন নিয়মিত মালিশ করে যেতে হয়।
৪) বাতক বেদনায় : জৈন ২৫-৩০ গ্রাম পুটলী বেঁধে তলপেটে সেঁক দিলে বাতক বেদনায় অত্যন্ত ফলপ্রদ।
রাসায়নিক উপাদান : জৈনে Neutral Unsaturated Lactone (নিউট্রাল আনস্যাটুরেটেড ল্যাকটোন)- ১.৩%, Furocoumarin (ফিউরোকুমারিন)- ৬%, Essential Oil (এসেনসিয়ালঅয়েল)- ২.৫%, Fatty Acid (ফ্যাটি এসিড) ২০%, Unsaponin. matter (আন-স্যাপোনিন ম্যাটার)-১৮.৫% এবং কিছুটা Sesquiterpenes (সেসকুইটারপেনস) রয়েছে।
সাধারণ ব্যবহার : বিভিন্ন ধরনের ঔষধ তৈরি ছাড়াও কোন কোন স্থানে জৈন দৈনন্দিন রান্নার কাজে মশলা হিসাবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। বিশিষতঃ খাদ্যকে সুস্বাদু ও মুখরোচক করার জন্য জৈন ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
বাজার চাহিদা : ইউনানী-আয়ুর্বেদক ও হোমিওপ্যাথিক ঔষধ শিল্পে জৈন অত্যন্ত কার্যকরী উপাদান বিধায় প্রচুর ব্যবহৃত হয়। এলোপ্যাথিক ঔষধ শিল্পেও জৈনের ব্যবহার দেখা যায়। বিজ্ঞানীরা জৈন নিয়ে প্রচুর গবেষণা করে যাচ্ছেন। পরিসংখ্যানে জানা যায়, এসব ঔষধ শিল্পে আমাদের দেশে জৈন বিভিন্ন ঔষধ তৈরির ক্ষেত্রে প্রতি বছর প্রায় ১০০০ টনের মত ব্যবহৃত হয়ে থাকে।