প্রচলিত নাম : তেলাকুচা
ইংরেজী নাম : Ivy Gourd
বৈজ্ঞানিক নাম : Coccinia indica Cogn.
পরিবার : Cucurbitaceae
পরিচিতি : তেলাকুচা একটি লতানো উদ্ভিদ, বাগানের বেড়ায় অথবা কোন গাছকে আশ্রয় করে প্রকৃতিগতভাবে জন্মে থাকে। পাতার আকার পাঁচকোণা, ব্যাস ৪/৫ ইঞ্চি পর্যন্ত দেখা যায় এবং তার কিনারা করাতের ছোট দাঁতের মত কাটা। প্রায় বারোমাসই এই লতাগাছে ফুল হয়, তবে শীতকালে বিশেষ হতে দেখা যায় না। ফল লম্বায় ১.৫-২ ইঞ্চির হয়, উপরটা মসৃণ, কাঁচা সবুজ রং, গায়ে সাদা ডোরা দাগ, পাকলে লাল হয় এবং স্বাদে তিতা। একই রকম দেখতে কিন্তু স্বাদে তিতো নয়, অপর একটা ফল পাওয়া যায়। তাকে বেলকুদরি বা কুন্দরুকি বলে; অনেকে তেলাকুচো বলে থাকে।
বিস্তৃতি : সমগ্র বাংলাদেশ। সাধারণতঃ জংগলা জায়গায় অযন্তে অবহেলায় এরা বেড়ে উঠে।
বংশ বিস্তার : কন্দু ও বীজের সাহায্যে বংশ বিস্তার করে।
ব্যবহার্য অংশ : ফল, ফুল, পাতা ও মুলের রস।
ঔষধি ব্যবহার
১) সর্দিতে : ঋতুকালের বিবর্তনে সর্দি তেলাকুচা পাতা ও মূলের রস ৪/৫ চা-চামচ একটু গরম করে সকালে ও বিকালে খেলে শ্লেষ্মার আক্রমণের ভয় থাকে না। পাতার ওজন সিকি পরিমাণ মূলের সমান।
২) অধোগত রক্তপিত্তে : জ্বালা-যন্ত্রণা থাকে না অথচ টাটকা রক্ত পড়ে, অশ্বের কোন লক্ষণই পূর্বে বোঝা যায়নি; এক্ষেত্রে মূল ও পাতার রস ৩ চা চামচ গরম করে খেলে ঐ রক্তপড়া ২/৩ দিনের মধ্যেই বন্ধ হয়ে যাবে।
৩) হাঁপানির মতো হলে : বুকে সর্দি বসে গিয়ে শ্বাস-প্রশ্বাসে কষ্ট হচ্ছে, পূর্বে বংশপরম্পরায় হাঁপানি বা একজিমা অথবা হাতের তালু ও পায়ের তলায় অস্বাভাবিক ঘাম হয়, এইরকম ক্ষেত্রে তেলাকুচার পাতা ও তার সিকিভাগ মূল একসঙ্গে তেতো করে তার রস ৩/৪ চা চামচ একটু গরম করে খেলে ঐ সর্দিটা তরল হয়ে উঠে যায়।
৪) শ্লেষ্মাজনিত কাশিতে : এই রকম ক্ষেত্রে মুল ও পাতার রস ৩/৪ চা-চামচ একটু গরম করে ঠাণ্ডা হলে আধ চা-চামচ মধু মিশিয়ে (সম্ভব হলে) খাওয়ালে ঐ শ্লেষ্মা তরল হয়ে উঠেও যায় ও কাশিরও উপশম হয়।
৫) জ্বরভাবে : জ্বর যে হবে তার সব লক্ষণ দেখা যচ্ছে, মাথা ভার, সর্বশরীরে কামড়ানি। এ অবস্থায় কাঁচা তেলাকুচো ফলের রস ১ চা-চামচ একটু মধুসহ সকালে ও বিকালে ২ বার খেলে ঐ জ্বরভাবটা কেটে যাবে তবে অনেক সময় একটু বমি হয়ে তরল সর্দিও উঠে যায়; এটাতে শরীর অনেকটা হালকা বোধ হয়। তবে যে ক্ষেত্রে এই রোগে বায়ু অনুষঙ্গী হয় সেখানে কাজ হবে না, যেখানে পিত্ত অনুষঙ্গী হয় ডায়াবেটিস, সেখানেই কাজ করবে।
৬) বমনের প্রয়োজনে : অনেক সময় বমি করানোর দরকার হয়, যদি কোন কারণে তার পেটে কিছু গিয়ে থাকে বা খেয়ে থাকেন সেক্ষেত্রে তেলাকুচো পাতার রস ৫/৬ চা-চামচ কাচাই অর্থাৎ গরম না করেই খেতে হয়, এর দ্বারা বমন হয়ে থাকে।
৭) অরুচিতে : যে অরুচি শ্লেষ্মাবিকারে আসে অর্থাৎ সর্দিতে মুখে অরুচি হলে তেলাকুচোর পাতা একটু সিদ্ধ করে, জলটা ফেলে দিয়ে শাকের মত রান্না করে খেলে ঐ অরুচিটা সেরে যায়।
৮) ডায়াবেটিস: এক্ষেত্রে তেলাকুচোর পাতা ও মূলের রস ৩ চা-চামচ করে সকালে ও বিকালে একটু গরম করে খেতে হবে। এর দ্বারা ৩/৪ দিন পর থেকে তার শারীরিক সুস্থতা অনুভব করতে থাকবেন।
৯) স্তন্যহীনতায় : মা হলেও স্তনে দুধ নেই, এদিকে শরীর ফ্যাকাশে হয়ে গেছে এতে কাঁচা সবুজ তেলাকুচো ফলের রস একটু গরম করে ছেকে তা থেকে এক চা-চামচ রস নিয়ে ২/৫ ফোটা মধু মিশিয়ে সকালে ও বিকালে ২ বার খেলে ৪/৫ দিনের মধ্যে স্তনে দুধ আসবে।
১০) জন্ডিস হলে তেলাকুচার মূলের রস ২/৩ চামচ সকালে নিয়মিত খেলে জন্ডিস নিরাময় হয়।
১১) অনেকের পা ঝুলিয়ে বসে থাকলে পা ফুলে যায় (শোথ) এবং প্রায়ই আমাশয় লেগে থাকে। এ অবস্থায় মূল ও পাতার রস ৩/৪ চামচ করে প্রত্যহ একবার করে খেলে পা ফোলাটা চলে যায়।
১২) ভূল করে বা ইচ্ছাকৃতভাবে বিষাক্ত কিছু খেয়ে ফেললে বমি করানোর জন্য ৫/৬ চা চামচ কাঁচা তেলাকুচা পাতার রস খাওয়ালে বমি হয়ে যাবে।
১৩) ছোট বাচ্চারা ৬/৭ বৎসর বয়স হলেও অনেকে বিছানায় প্রস্রাব করে, এ ক্ষেত্রে তেলাকুচা পাতার রস চিনিসহ ৫/৬ চামচ কিছুদিন খাওয়ালে কমে যায়।
রাসায়নিক উপাদান : a) Enzyme Hormone, Amylase, b) Alkaloids, c) Vitamin A&C