গাছপালা

গেওয়া গাছ

প্রচলিত নাম : গেওয়া

ইংরেজী নাম : Gewa

বৈজ্ঞানিক নাম: Excoecarea agallocha Linn.

পরিবার : Euphorbiaceae

পরিচিতি : গেওয়া ম্যানগ্রোভ বনের স্থলভাগের শুকনো বালুময় কাদামাটিতে জন্মে। উচ্চতায় প্রজাতিটি প্রায় ১০-১৫ মিটার পর্যন্ত হতে পারে। প্রজাতিটি হতে এক ধরনের তরুক্ষীর নির্গত হয় যা চোখ এবং ত্বকের সংস্পর্শে এলে জ্বালা করে। পাতা একান্তর, সরল, বিডিম্বাকার, পত্রফলক দৈর্ঘ্যে ৯ সেন্টিমিটার, প্রস্থ ৬ সেন্টিমিটার এবং দূরবর্তী দাঁতযুক্ত। পাতা কচি অবস্থায় সবুজ এবং পূর্ণাঙ্গ পাতা লাল ও হলদে আভাযুক্ত। পাতা যেখানে বৃতির সঙ্গে যুক্ত সেখানে একজোড়া বৃত্তের মতো গ্রন্থি আছে। ঝুলন্ত ক্যাটকিন পুস্পমঞ্জুরীর কারণে গাছটি সহজে  চেনা যায়। ক্ষুদ্র এক লিঙ্গ ফুল মে-জুলাই মাসে ফোটে এবং ফল আগস্ট থেকে সেপ্টেম্বর মাসে পাকে। ক্যাপসুল ফল তিন ভাগে বিভক্ত: গোলাকৃতি, মসৃণ এবং ১.৫ সেন্টিমিটার ব্যাস বিশিষ্ট। অঙ্কুরোদগম মৃৎভেদী। বাকল ধূসর বর্ণের। কাঠ নরম ও সাদা বর্ণের। এ প্রজাতিটির কোন রকম বায়বীয় মূল না থাকায় এটি ম্যানগ্রোভ বনের প্রকৃত কোন বৈশিষ্ট্য প্রদর্শন করে না।

বিস্তৃতি : সুন্দরবন ও উপকূলীয় বনায়নকৃত এলাকায় পাওয়া যায়। সুন্দরবনের গেওয়া কাঠ খুলনা নিউজপ্রিন্ট মিলে একমাত্র কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার হয়। গেওয়া পাল্প, ম্যাচউড ও জ্বালানী হিসেবে ব্যবহৃত হয়। সুন্দরবনে সর্বত্রই গেওয়ার প্রাকৃতিক বংশ বিস্তার সন্তোষজনক বিধায় বাগান সৃজনের গুরুত্ব কম। উপকূলীয় বনায়নে গেওয়া বাগান ও নার্সারী উত্তোলনের গুরুত্ব কেওড়া ও বাইনের মত। বিভিন্ন এলাকায় ইতিমধ্যে বেশ কিছু গেওয়া বাগান উত্তোলন করা হয়েছে। সুন্দরবনের সর্বত্রই গেওয়া গাছ ভাল জন্মে এবং সুন্দরী ও গরানের সহিত মিশ্রভাবে দেখা যায়। সাধারণতঃ বন থেকে ১ বছর বয়সের গেওয়ার চারা সংগ্রহ করে বাগান এলাকায় সরাসরি লাগানো হয়।

বীজ সংগ্রহ : জুলাই মাসে গেওয়া ফুল আসে। আগষ্ট-সেপ্টেম্বর মাসে গেওয়ার বীজ ফল সুন্দরবনের অথবা উপকূলীয় বনায়নের পুরাতন বাগানের গাছের নীচ থেকে সংগ্রহ করা হয়। বীজের আকৃতি গোলাকার এবং গড় ব্যাস ০.১৫-০.২৫ সে. মি.। একটি ফলে ২-৩টি বীজ থাকে। এক কেজি পরিপক্ক ফল হতে প্রায় ২৫০০ বীজ পাওয়া যায়।

নার্সারীতে চারা উত্তোলন : নার্সারীতে বেডে বা পলিব্যাগে বীজ সংগ্রহের পরপর ডিবলিং পদ্ধতিতে বীজ বপন করা হয়। বীজ বপণের ৩ সপ্তাহের মধ্যে ৭৫% বীজ অঙ্কুরিত হয়। চারার পরিচর্যা বাইন নার্সারীর অনুরূপ।

বাগানের স্থান নির্বাচন : গেওয়া সাধারণতঃ তুলনামূলকভাবে উঁচু চর যেখানে ঘন উরি ঘাসের মাধ্যমে রোপিত চারার ছায়া সৃষ্টির সুযোগ আছে, মাটি মোটামুটি শক্ত ও অধিক কাদাযুক্ত নয় সে ধরনের স্থান নির্বাচন করতে হবে ।

বাগান উত্তোলন : উপকূলীয় বনায়নের অধিকাংশ ক্ষেত্রে সুন্দরবন বা পুরাতন বাগান থেকে মার্চ-মে মাসে ১০-১২ মাস বয়সের (৪০-৭০ সে. মি. উচ্চতা) চারা সংগ্রহ করা হয় এবং বান্ডিল করে দ্রুত নৌযানের মাধ্যমে প্রস্তাবিত বাগান এলাকায় পরিবহন করা হয়। বাগানে কেওড়া চারার মতো ৪ x ৪ বা ৫ x ৫ দূরত্বে লাগানো হয়। বাগানের স্থান নির্বাচন ও পরিচর্যা কেওড়ার অনুরূপ। নার্সারী বেড় হতে ১০ মাস বয়সের চারা নগ্নশিকড় অবস্থায় তুলে সরাসরি বাগানে কেওড়া চারার মতো লাগানো হয়। পলিব্যাগ চারা যখন ৪০-৭০ সে. মি. লম্বা হয় তখন ১ X ১ X ১ গর্ত করে এপ্রিল-মে মাসে বাগানে লাগানো হয় এবং জীবিত চারা প্রায় ৯৫% পর্যন্ত হয়।

সাধারণ ব্যবহার : কাঠ সাদা, খুবই হালকা, ভঙ্গুর। ওজন ৩৮৫ কেজি/ঘন মিটার। সুন্দরবনের গেওয়া কাঠ খুলনা নিজ প্রিন্ট মিলের একমাত্র কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এছাড়া খেলনা, প্যাকিং বাক্স, টেবিল, মাছ ধরার জাল ভাসাতে, সস্তা আসবাবপত্র ইত্যাদি কাজে ব্যবহৃত হয়।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *