চোখের প্রদাহ
চোখে ব্যথা অনুভব হওয়া প্রধান কারণগুলো হলো- ইনফেকশন, চোখের আভ্যন্তরিন সমস্যা, আঘাত, রাসায়নিক পদার্থের সংস্পর্শ ইত্যাদি। চোখ ব্যথা করা লক্ষণটি কখনো কখনো মারাত্মক রোগের বহিপ্রকাশ হতে পারে যেমন- গ্লুকোমা, রেটিনোপ্যাথি ইত্যাদি। চোখের পাতায় অথবা ভেতরের অংশে কখনো কখনো ব্যথা হতে পারে। চোখের পাতায় ব্যথা হওয়ার পিছনে অনেক কারণ থাকতে পারে। যেমনঃ চুলকানি, অ্যালার্জি ও জ্বালাপোড়া ইত্যাদি। চোখের ভেতরের অংশে ব্যথা সাধারণত গুরুতর কোনো শারীরিক অসুস্থতার কারণে হয়ে থাকে । যেমনঃ ব্ল্যাক ফাঙ্গাসসহ বিভিন্ন সংক্রমণ এবং চোখের পুরাতন নানা জটিল রোগের কারণে চোখের প্রদাহ হতে পারে।
চোখ ব্যথা কী কী কারণে হয়?
অনেক রোগের কারণেই চোখ ব্যথা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তার মধ্যে অন্যতম- চোখ ওঠা, চোখের মণির সংক্রান্ত রোগ, চোখে আঘাতজনিত কোনো রোগ, চোখের ভেতরের রোগ ইত্যাদি। শরীরের অন্যান্য রোগের কারনেও চোখে প্রদাহ হতে পারে। তন্মধ্যে মাইগ্রেন, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস ইত্যাদি।
চোখে ব্যথা করে কেন
চোখে ব্যথা করার অনেক কারণ থাকতে পারে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু তুলে ধরা হলঃ-
১। চোখের ছানির জটিল অবস্থা এবং কর্নিয়াল ইনফেকশন।
২। নেত্রবর্ত্মকলাপ্রদাহ (নেত্রবর্ত্মকলাপ্রদাহ)
৩। অপটিক স্নায়ু প্রদাহ, আইরিস প্রদাহসহ, সাইনাসের প্রদাহ।
৪। কর্নিয়ায় আঘাত পেলে অথবা বা কিছু ঢুকলে তীব্র ব্যথা হয়।
৫। চোখের একটি রোগের নাম “গ্লুকোমা”। চোখের অভ্যন্তরীণ চাপ বেড়ে গিয়ে রোগটি হয়ে থাকে এবং এর উপসর্গ হিসাবে থাকতে পারে-
- তীব্র চোখ ব্যথা,
- বমি ও বমি বমি ভাব,
- মাথা ব্যথা,
- দৃষ্টিশক্তি কমে যাওয়া ইত্যাদি।
৬। এছাড়া চোখের নার্ভের প্রদাহ জনিত কারনেও চোখে তীব্র ব্যথা হয়।
৭। চোখে ব্যথা হওয়ার আরেকটি কারণ হল সাইনোসাইটিস ।
৮। চোখে অঞ্জনি হলে চোখের প্রদাহ হতে পারে।
চোখের ভেতরে প্রদাহ হওয়ার কারণ
বিভিন্ন কারণে চোখের ভেতরে প্রদাহ হতে পারে ।
১। অ্যালার্জিজনিত কনজাঙ্কটিভাইটিস
২। ছানি
৩। ক্যালাজিয়ন
৪। কর্নিয়া ইনফেকশন
৫। ডেঙ্গু জ্বর, ব্ল্যাক ফাঙ্গাস, দাঁতের ক্ষয়রোগ।
৬। ক্ষীণদৃষ্টি, কালাজ্বর, সিউডোটিউমার সেরেব্রি, প্রেসবায়োপিয়া, টেরিজিয়াম, ব্লাস্টোমাইকোসিস, ফ্যাট এমবলিজম, অ্যামব্লায়োপিয়া, ক্রনিক গ্লুকোমা, রেটিনাল ডিটাচমেন্ট ছাড়াও অনেক কারণে চোখের ভেতরে প্রদাহ হতে পারে।
চোখে ব্যথা হলে কি করব
চিকিৎসা :
চোখের প্রদাহের চিকিৎসা নির্ভর করে সাধারণত অ্যালার্জির কারণ এবং উপসর্গের তীব্রতার ওপর ভিত্তি করে। অ্যালার্জিক কনজাংটিভাইটিসের কারণ সঠিক ভাবে নির্ণয় করতে হবে এবং এটি দূর করতে পারলে সবচেয়ে ভালো হয়। যেমন-
১। ঘর থেকে ধুলোর জীবাণু দূর করার জন্য ঘরের কার্পেট সরিয়ে ফেলা।
২। বালিশ এবং মাদুর ঢেকে রাখা।
৩। ৫৫ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রায় বিছানার চাদর ধুয়ে পরিষ্কার করা।
৪। ঠাণ্ডা পানিতে চোখ ধোয়া।
৫। চোখে বরফ চেপে রাখা বা ঠাণ্ডা পানিতে কাপড় ভিজিয়ে রেখে চোখ ঢেকে রাখাই এসব উপসর্গ দূর করার জন্য যথেষ্ট।
চোখ প্রদাহর ঘরোয়া প্রতিকার
ঘরোয়া ভাবে চোখের প্রদাহ দূর করতে নিচের উল্লিখিত পদক্ষেপ সমূহ নিতে পারেন।
১। ঠাণ্ডা পানিঃ ঠাণ্ডা পানির ঝাপটা দিয়ে চোখের রক্তনালীগুলো শিথিল করার মাধ্যমে লালচে ভাব দূর করা যায় এবং সাথে প্রদাহও দূর হয়। এছাড়াও পরিষ্কার কাপড়ে বরফের টুকরা নিয়ে আক্রান্ত চোখে ব্যবহার করলেও যথেষ্ট উপকার পাওয়া যায়।
২। কান্নাঃ শুনলে হাসি আসতে পারে, চোখ ব্যথা সারাতে কান্নাকাটিও করতে পারেন। চোখের পানি মূলত হালকা অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল এজেন্ট, এর ফলে চোখের ব্যকটেরিয়া ধুয়ে ফেলতে সাহায্য করে। পাশাপাশি চোখের পানি চোখ আদ্র রাখে, যার ফলে চোখে ঘর্ষণের ফলে তৈরি ব্যথা কমে যায়।
৩। অ্যাপল সাইডার ভিনিগারঃ সমপরিমাণ পানি ও অ্যাপল সাইডার ভিণিগার মিশিয়ে তুলার বলের সাহায্যে চোখের পাতায় ভালো করে মাখিয়ে দিন। অ্যাপল সাইডার ভিনিগারের মাইক্রোবায়াল উপাদান ব্যকটেরিয়া ধ্বংস করবে এবং ধীরে ধীরে প্রদাহ কমতে থাকবে।
৪। ঠাণ্ডা চামচঃ বরফশীতল পানি নিয়ে তার মধ্যে দুতিন জোড়া চামচ ডুবিয়ে রেখে সেটা চোখের উপর ধরে রাখুন। চামচের ঠাণ্ডাভাব ফুরিয়ে গেলে চামচ পরিবর্তন করে নিন এবং পুনরায় চোখের উপর ধরুন। এতে অনেকটা উপকার পাবেন।
৫। শসাঃ শসা রূপচর্চায় যেভাবে ব্যবহার করা হয় সেভাবে ব্যবহার করলেও চোখের ব্যথা দূর করতে অন্যতম ভূমিকা পালন করবে।
৬। অ্যালোভেরা জেলঃ আমরা জানি এটি জ্বলা, প্রদাহ ও আরও অনেকরকম ত্বকের সমস্যা দূর করতে অ্যালোভেরা জেল ব্যবহার করা হয়। চোখ ব্যথার উপসর্গ দূর করতেও এটা খুবই কার্যকর একটি উপাদান। তবে চোখের ক্ষেত্রে ব্যবহার এর জন্য পাতা থেকে জেল বের করে তা কয়েক মিনিট ফ্রিজে ঠাণ্ডা করে তারপর চোখের পাতায় মাখতে পারেন। এতে অনেক উপকার পাবেন।
অনলাইনে আমাদের অবিজ্ঞ দাক্তারদের থেকে পরামর্শ নিতে এখানে ক্লিক করুন এপয়েন্টমেন্ট