গাছপালা

দুর্বাঘাস

প্রচলিত নাম : দুর্বাঘাস

ইংরেজী নাম : Caugh Grass

বৈজ্ঞানিক নাম : Cynodon dactylon Pers.

পরিবার : Gramineae

পরিচিতি : এটা ঘাসজাতীয় উদ্ভিদ এবং জীব। দীর্ঘকাল ধরে প্রতিকুল পরিবেশে লড়াই করে বেঁচে থাকার ক্ষমতা রাখে। বর্ষার আগেই বৈশাখের প্রথম বৃষ্টি পেয়ে প্রতিটি গিট থেকে শেকড় বেরিয়ে মাটি আঁকড়ে দুর্বার ডগা এগিয়ে যায়। সাধারণত আমরা যে দুর্বা দেখে থাকি, তা ছাড়াও আরও দুজাতের দুর্বা রয়েছে। তাদের মধ্যে একটি সাদা এবং অপরটি নীল। এ দু’জাতের দুর্বা সাধারণতঃ আমাদের দেশে কমই দেখা যায়।

বিস্তৃতি : বাংলাদেশের গ্রামে, ময়দানে সর্বত্র দুর্বাঘাস দেখা যায়। সাধারণতঃ পতিত জায়গায় ভাল জন্মে, জলমগ্নতা সহ্য করতে পারে ।

বংশ বিস্তার : দুর্বাঘাস চাষ করতে হয় না। কোথাও থেকে একটু অংশ এনে মাটিতে পুতলেই সহজে বাড়ে তবে যত্ন নিতে হয়। এটি বন্যা সহ্য করতে পারে না, তাই উচু জমিতে দুর্বা লাগানো উচিত। ধান-তিল যেমন মানব শ্রেণীর জীবন রক্ষার প্রথম উপাদান, দূর্বা তেমন এর জন্মভূমিকে কবলে ধারণ করে রেখে তার ক্ষয় নিবারণ করে এবং আদিভৌতিক বিপদ থেকে রক্ষা করে। এজন্যই বোধহয় সকল বৈদিক, লৌকিক এবং মাঙ্গলিক কার্যে ধানের সাথে দুর্বা দিয়ে আশীর্বাদ করার বিধান হয়েছে।

ঔষধি ব্যবহার :

১) পায়োরিয়া রোগে : দুর্বাঘাস শুকিয়ে-গুঁড়ো করে সে গুঁড়ো দিয়ে দাঁত মাজলে পায়োরিয়া সেরে যাবে।

২) কেটে গেলে কিংবা আঘাতে রক্তপাত : শরীরের কোথাও কেটে গেলে যদি রক্ত পড়ে, তবে টাটকা দুর্বা সামান্য পানি দিয়ে থেঁতো করে, সে কাটা জায়গায় থেতো করা দুর্বা লাগিয়ে বেঁধে দিলে রক্তপড়া বন্ধ হয় এবং কাটা জায়গা তাড়াতাড়ি জুড়ে যায়।

৩) চুল ওঠা : একটি স্টীলের পাত্রে এক লিটার নারকেল তেল নিয়ে আগুনে গরম করতে হবে। তেলের ফেনা মিলিয়ে যাবার পর পাত্র আগুনে বসাতে হবে। দুর্বার রস তেলের মধ্যে সবটা মিশে গেলে এবার আগুন থেকে নামিয়ে বড় বোতলে ভরে রাখতে হবে। প্রতিদিন গোসলের এক ঘন্টা আগে এটা চুলে মাখলে চুল ওঠা বন্ধ হবে।

৪) গা বমি : কোন কারণে বমির ভাব থাকলে এক চামচ দুর্বার রসে আধা চামচ চিনি মিশিয়ে আধা ঘন্টা পরপর খেলে গা-বমি ভাব দূর হয়।

৫) সাদা ও রক্ত আমাশয় : ৪টি কচি টাটকা জামপাতা, ১ গ্রাম দুর্বাঘাস, এ দুটি একসঙ্গে সামান্য পানি দিয়ে বেটে তার রস ছেকে সামান্য গরম করে, আধা কাপ ছাগলের দুধের সঙ্গে (ছাগল দুধ না পেলে গরুর দুধ মিশিয়ে দুবার খাওয়ালে তিনচার দিনের মধ্যে সাদা ও রক্ত আমাশয় নিরাময় হবে।

৬) হঠাৎ নাক-মুখ দিয়ে রক্তপড়া শুরু করলে, আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে এটাকে বলে রক্তপিত্ত, দুর্বার রস কাঁচা দুধ মিশিয়ে খাওয়ালে এটি উপশম হয়।

৭) আমাশয় নয় অথচ মলের সাথে মিশে বা মলত্যাগ করার পর রক্ত পড়ছে কিন্তু কোন জ্বালা যন্ত্রণা নেই, এক্ষেত্রে ১০/১২ মি.লি. দুর্বার রস গরম করে ৭/৮ চামচ ছাগলের দুধের সাথে একটু চিনি মিশিয়ে দিনে দুইবার খেলে রক্তপাত বন্ধ হবে।

৮) প্রস্রাব হতে কষ্ট হচ্ছে অথচ পাথুরী নয়, এ মূত্র কৃচ্ছতায় দেড়/দুই চামচ দুর্বার রসে দুধ ও পানি মিশিয়ে খেলে ভাল ফল পাওয়া যায়। তবে অর্শ থাকলে কাজ হয় না।

৯) চরক সংহিতায় উল্লেখ আছে ৪ গুণ দুর্বার রস পাক করে ঘৃ ঘা-তে লাগালে দুষিত ও দুষ্ট ব্রণের ক্ষত শীঘ্র সেরে যায়।

১০) দুর্বাঘাস শুকিয়ে গুঁড়া করে সেই গুঁড়া দিয়ে দাঁত মাজলে পায়োরিয়া সেরে যায়।

১১) চরক সংহিতার মতে, মাঝে মাঝে নাক টনটন করে, আবার নাক থেকে রক্তও পড়ে অথচ উচ্চ রক্তচাপ নেই, সেক্ষেত্রে দুর্বাঘাসের নস্য নিলে রক্তপড়া বন্ধ হয়।

১২) গায়ে বিশেষ কিছু নেই অথচ চুলকায়, সেক্ষেত্রে দুর্বার রস চারগুণ তিল তেলের সাথে পাক করে গায়ে লাগাতে হবে।

আয়ুর্বেদ মতে দুর্বা শতগুণসম্পন্ন এবং মধুর ও ইষৎ কষায় রসসম্পন্ন, দুর্বার গুণ কিন্তু বর্ষার পর থেকেই বৃদ্ধি পায়।

রাসায়নিক উপাদান : Terpenoid constituents viz, 28 triterpenes and its methlyl ethers, b) Sterols, c) Fatty oil 2

 

 

 

 

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *