জলপাই গাছ
প্রচলিত নাম : জলপাই
ইংরেজী নাম : Olive Plant
বৈজ্ঞানিক নাম : Elaeocarpus robustus Roxb
পরিবার। : Elaeocarpaceae
পরিচিতি: একটি চিরসবুজ মাঝারী ধরনের বৃক্ষ ১৫-২০ মিটার পর্যন্ত উঁচু হয়। কাণ্ডের গোড়ায় আধমূল আছে। বাকল কালো ও ধূসর। পাতা সরল, পূর্নাঙ্গ, লম্বাটে, বল্লমাকৃতির, ১০-২০x ৫-১০ সে. মি., গোড়ার দিক গোলাকার, উপরিভাগ মসৃণ ও উজ্জ্বল। ফুল ছোট সাদা ও রেসিম, কাক্ষিক, ১২ সে. মি. পর্যন্ত লম্বা হয়। ফল সবুজ, ডিম্বাকার ও লম্বায় ৩-৫ সে. মি. হয়। ৮-৯ বছরের গাছে ফল হয় ।
বিস্তৃতি : বাংলাদেশের সর্বত্র বসতবাড়ীর আশে পাশে লাগানো হয় ।
বীজের সংগ্রহ : ডিসেম্বর-জানুয়ারী ।
বীজের ওজন : কেজিতে ৪৮০-৮০০টি।
বিস্তৃতি : ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে, পশ্চিম এশীয় দেশে, জলপাইয়ের জন্ম বা উৎপত্তি হয়েছে বলে জানা যায়। পশ্চিম এশীয় দেশ থেকে, খ্রীস্ট জন্মের আগেই এটি দক্ষিণ ইউরোপে বিস্তার লাভ করে। তবে একই বর্ণের অন্য একটি গাছ, গুলিয়া কাসপিডাটা হিমালয়ের পাহাড়ী অঞ্চলে প্রচুর হতে দেখা যায়। ভূমধ্যসাগরীয় অবহাওয়াযুক্ত স্থানগুলিতে জলপাইয়ের ব্যাপক চাষ হয় এবং ঐ সব অঞ্চলের প্রান্তিয় দেশগুলি জলপাই চাষের জন্য বিখ্যাত। জলপাই চাষ করার প্রচেষ্টা খুব একটা দেখা যায় না। তবে গ্রামাঞ্চলে বিক্ষিপ্তভাবে কিছু গাছ দেখা যায়।
মাটি ও জলবায়ু : জলপাই ভূমধ্যসাগরীয় জলহাওয়াতে প্রচুর চাষ হলেও গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ও ক্রান্তীয় অঞ্চলেও গাছ সন্তোষজনকভাবে বাড়ে। কিন্তু শৈত্যপ্রবাহ (Chilling) না হলে গাছে ফুল আসে না। সাধারণভাবে ১৩° সে. তাপমাত্রায় গাছ ঠিকমত বাড়তে পারে। জলপাই গাছ শুকনো জলাহাওয়াতে হতে পারে ও খরা সহ্য করতে পারে। আমাদের দেশের পাহাড়ী অঞ্চলে জলপাই চাষের প্রচুর সম্ভাবনা আছে। যে কোন মাটিতে জলপাই গাছ হতে পারে, তবে মাটির গভীরতা থাকা চাই। উর্বর দো-আঁশ মাটি পেলে সব থেকে ভাল হয়।
চারা তৈরী ও রোপণ : বীজ থেকে বংশবিস্তার সহজ পদ্ধতি। পলিব্যাগে চারা করা হয়। ব্যবসায়িক ভিত্তিতে অঙ্গজ বিভাজনের মাধ্যমেই চারা তৈরী করা হয়। সাধারণতঃ শাখা কলম বা চোখ কলমের অঙ্গজ বিভাজনের মাধ্যমেই চারা তৈরী করা হয়। সাধারণতঃ শাখা কলম বা চোখ কলমের মাধ্যমে অঙ্গজ বিভাজন করা হয়। শাখা কলম করার বিশেষ সমস্যা নেই। তবে চোখ কলম করতে হলে এক বছর বয়সী ভারতীয় জলপাই, অর্থাৎ ওলিয়া ফেরুজিনিয়া (O. ferruginea) চারার উপর প্রচলিত জলপাই, অর্থাৎ ওলিয়া ইউরোপিয়া (O. europaea) চোখের প্রচলিত পদ্ধতিতে চোখ কলম করা হয়। চারা করার পরবর্তী বর্ষার আগেই চাষ দিয়ে জমি তৈরী করতে হবে এবং লাগানোর অন্ততঃ একমাস আগে ৭-৮ মি. দূরে দূরে ৬০ ঘন সে.মি. গর্ত করে ৭ দিন রোদ খাওয়াতে হবে। নির্দিষ্ট সময়ের পর উপর ও নিচের মাটি ভালভাবে মিশিয়ে গর্তগুলি পূরণ করতে হবে। প্রয়োজনে গর্তপিছু ১০ কেজি গোবর সার দেওয়া যেতে পারে। গর্তের ঠিক মনভাবে চারা বসাতে হবে, যে চারার মূল মাটির নিচে এবং কাণ্ড, বিশেষত কলম দ্বারা করা স্থানটি মাটির যথেষ্ট উপরে থাকে এবং কোনভাবে আঘাত পাবারও সম্ভাবনা না থাকে।
সার ও সেচ প্রয়োগ : জলপাই গাছের সার প্রয়োগের তেমন রেওয়াজ নেই। তবে সার প্রয়োগ করলে অবশ্যই সুফল পাওয়ার সম্ভাবনা আছে। সাধারণভাবে প্রতিবছর বর্ষার আগে, গাছপিছু ১৫ কেজি গোবর সার, গাছের চারদিকে মাটির সাথে মিশিয়ে দেওয়া হয়। বড় বা ফলন্ত গাছে গোবর বা জৈব সারের পরিমাণ বাড়িয়ে ৩০-৪০ কেজি করা হয়। যেহেতু জলপাই গাছ শুকনো জলহাওয়া ও খরা সহ্য করতে পারে, সেইজন্য বৃষ্টিপাতের পরিমাণ, জলহাওয়া, মাটি ও গাছের উপর নির্ভর করে সেচের ব্যবস্থা করতে হবে। শীতকালে ৪-৫ সপ্তাহ পর ও গরম কালে ২-৩ সপ্তাহ পর সেচ দিলে ভাল হয়। ফুল আসার সময় ও ফল ধরার পর ২-১টি সেচ দিতে পারলে উপকার পাওয়া যায় ও ফলের আকার বড় হয়।
ফল সংগ্রহ ও ফলন : ৪-৫ বছর বয়স থেকেই গাছের ফুল আসতে থাকে। মার্চ-এপ্রিল মাসে ফুল আসার পর ফল পুষ্ট হতে ৩-৪ মাস সময় লাগে। গাছের ৮-১০ বছর বয়স থেকে স্বাভাবিক ফল পাওয়া যায়। গড়ে গাছপিছু ২-৩ কুইন্টাল ফলন পাওয়া যায়। ভাল পরিচর্যা হলে ফলন বাড়ে।
সাধারণ ব্যবহার : জলপাই টকফল হিসাবে পরিচিত। জলপাই ফল থেকে আচার ও চাটনী তৈরী হয়। ডাল ও তরকারীর সাথে জলপাই খাওয়া হয়। জলপাই কাঠ থেকে সস্তা আসবাবপত্র, গৃহনির্মাণ সামগ্রী ও জ্বালানী তৈরী হয়।