হলুদ গাছ
প্রচলিত নাম : হলদি
ইংরেজী নাম : Turmaric
বৈজ্ঞানিক নাম : Curcuma domestica Vahl.
পরিবার : Zingiberaceae
পরিচিতি : হলুদ একটি বর্ষজীবী কন্দাল ও গুল্ম জাতীয় উদ্ভিদ। হলুদের কাণ্ড মাটির নীচে হলুদ হিসেবে বাড়ে, মাটির উপরে থাকে শুধু এর পাতা। লম্বা পত্রবৃন্তসহ পাতা মাটি হতে এক থেকে ক্ষেত্র বিশেষে দেড় মিটার পর্যন্ত উঁচু হতে দেখা যায়। একই পরিবারভুক্ত হলেও আদার চেয়ে হলুদের পাতা তুলনামূলকভাবে বড় হয়। মাটির নীচে কন্দ/হলুদ থেকে সাদা সাদা শিকড় বের হয়। সৌন্দর্য বর্ণনায় আগুন রং এর কাঁচা হলুদের উপমা কাব্য-সাহিত্যে বহু পূর্ব থেকেই প্রচলিত। নিত্য আহার্য ব্যঞ্জনের রং আকর্ষণীয় করাসহ বিভিন্ন প্রয়োজনেও হলুদ সেবনের ব্যবস্থা আছে। বর্ষাকালে লম্বা পুষ্পদণ্ডের চারিদিকে ঘিরে একাধিক হালকা সবুজ বর্ণের সুগন্ধি ফুল ফোটে। পাহাড়ী উপজাতীয় অধিবাসী এ ফুল সবজি হিসেবে ব্যবহার করে।
বিস্তৃতি : বাংলাদেশের সর্বত্র।
সাধারণ ব্যবহার : আবহমান বাংলায় হলুদ শুভ অনুষ্ঠানের সূচক। বিবাহ, জন্মদিন এবং নতুন বউ বরণ অনুষ্ঠানে হলুদ ব্যবহৃত হয়। আর গায়ের রং উজ্জ্বল করতে হলুদের ব্যবহার সুপ্রাচীন। কাঁচা হলুদ ও মসুরের ডাল বেটে মুখে প্রলেপ দিলে মুখের কমনীয়তা বজায় থাকে। রান্নায় মসল্লা হিসাবে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়।
বিস্তৃতি ও বংশ বিস্তার : হলুদের বিস্তৃতি ও বংশ বিস্তার আদার অনুরূপ যা এ অধ্যায়ের আদা অংশে আলোচনা করা হয়েছে।
ঔষধি ব্যবহার :
১. রক্ত দূষণে : রোজ পাচ গ্রাম শুকনো হলুদের গুঁড়ো খেলে রক্তের দোষ থাকেনা।
২. লিভার খারাপ হলে : সকালে খালিপেটে দশ গ্রাম কাঁচা হলুদ চিবিয়ে মাত্র দু’সপ্তাহ খেলে লিভারের দোষ সেরে যাবে।
৩. চোখ ওঠা : পরিস্কার পাতলা কাপড় হলুদ গোলা পানিতে ভিজিয়ে সে কাপড় চোখের ওপর দিলে চোখ ওঠা এবং চোখের লালভাব চলে যাবে।
৪. হাত ও পা ফোলায় : লিভারের দোষে অনেক সময় হাত-পা ফুলে যায় । টিপলে সে জায়গাটা গর্ত হয়ে যায়। এক্ষেত্রে দশ গ্রাম কাঁচা হলুদ ঠান্ডা পানি দিয়ে খেলে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসে।
৫. মচকে গেলে : কোন অঙ্গ মচকে গেলে বিশ গ্রাম কাঁচা হলুদ বেটে তার সঙ্গে পাঁচ গ্রাম চুন মিশিয়ে মচকানো অঙ্গে প্রলেপ দিলে ফুলো কমে এবং তিন দিনের মধ্যে ভাল হয়ে যায়। দিনে একবার মাত্র প্রলেপ দেয়া দরকার।
৬. হিস্টিরিয়া বা মূৰ্ছায় : হলুদ-পুড়িয়ে তার ধোঁয়া নাকে নিলে এ রোগের উপশম হয়।
৭. ঠাণ্ডা লেগে সর্দি : পাঁচ গ্রাম শুকনো হলুদ গুঁড়ো, ২৫০ মিলিলিটার দুধ এবং ২ চামচ চিনি দশ থেকে বারো মিনিট ফুটিয়ে সে দুধ খেলে সর্দি কমে যায়।
৮. চর্মরোগ ও কাউর ঘা : হলুদ ও বাসক পাতা একসঙ্গে বেটে তিন দিন ধরে লাগালে চর্মরোগ সেরে যায়। ৯. প্রমেহ : ২ চামচ হলুদের রস, সমপরিমাণ মধু বা আমলকির রসের সঙ্গে মিশিয়ে খেলে অবশ্যই আরোগ্য লাভ হয়।
১০. হলুদ নিজে খুবই উত্তেজক। মেয়েদের ঋতুর সময় তিন চার দিন কাঁচা হলুদ খাওয়া কোনমতেই ঠিক নয়। ব্লাড সুগারের রোগীর ক্ষেত্রে একদিন অন্তর অন্তর পাঁচ গ্রাম পরিমাণ কাঁচা হলুদ সকালে খালিপেটে এক গ্লাস ঠাণ্ডা পানি সঙ্গে চিবিয়ে খেলে লিভার খুব ভাল থাকে।
১২) হলুদের এক নাম কৃমিগণ বা কৃমিনাশকারী। কাঁচা হলুদের ১৫/২০ ফোঁটা রস সামান্য লবন মিশিয়ে সকালে খালি পেটে খেলে কৃমির উপদ্রব থেকে রেহাই পাওয়া যায়। অপ্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে মাত্রা কমাতে হবে।
১৩) অনেক শিশুর কথা বলতে আটকে যায়, তোতলায় সেক্ষেত্রে ২/৩ গ্রাম হলুদের গুড়া ১ চা চামচ ঘিয়ে একটু ভেজে অল্প অল্প করে খেতে হবে। এতে তোতলামি কমে যায়।
১৪) প্রস্রাবের জ্বালা-পোড়ার সাথে পুঁজের মত লালা ঝরলে (প্রমেহ) এক চা চামচ কাঁচা হলুদের রসের সাথে একটু মধু বা চিনি মিশিয়ে খেলে উপশম হয়।
১৫) কোন কোন খাদ্যে অনেকের এলার্জি থাকে। যেমন: ইলিশ মাছ, বেগুন, চিংড়ি, গরুর গোশত ইত্যাদি খেলে শরীরে চাকা চাকা হয়ে ফুলে ওঠে, চুলকায় ও লাল হয়ে যায়। এ অবস্থায় এক ভাগ নিম পাতার গুঁড়া, ২ ভাগ হলুদের গুঁড়া ও ৩ ভাগ আমলকি গুঁড়া একত্রে মিশিয়ে প্রতিদিন সকালে এক গ্রাম করে কিছুদিন খেলে উপকার হবে। কিন্তু কোন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নেই।
১৬) কোন সাধারণ কারণে হঠাৎ স্বর ধরে গেলে ২ গ্রাম হলুদের গুঁড়ার সাথে একটু চিনি মিশিয়ে তা দিয়ে সরবত করে খেলে হাঁপানির কিছুটা উপশম হয়।
১৭) কাঁচা হলুদ শুকিয়ে গুঁড়া করে সাথে উচ্ছে পাতার রস ও অল্প মধু মিশিয়ে খেলে হামজুর সেরে যায়। ১৮) পোড়া হলুদের ছাই পানিতে গুলে সেটা ফোড়ায় লাগালে তা তাড়াতাড়ি পাকে এবং ফেটে যায়। আবার গুঁড়া লাগালে তা দ্রুত শুকিয়েও যায়।
১৯) জেঁকে ধরলে জোঁকের মুখে হলুদ গুঁড়া দিলে ছেড়ে দেয় এবং রক্ত পড়াও বন্ধ হয়ে যায়।
২০) শরীরে চুলকানি হলে কাঁচা হলুদ বাটা নিম পাতা বাটার সাথে একটু সরিষার তেল মিশিয়ে ৩/৪ দিন গোসল করলে সেরে যায় । সুস্থ অবস্থায় এটা দিয়ে গোসল করলে চুলকানি হবার সম্ভাবনা থাকে না।
রাসায়নিক উপাদান : a) Colouring matter, Viz., curcumin, b) Alkaloid viz., zingiberine, c) Antiseptic oil.