এনাটমি ও ফিজিওলজি

লাঙ বা ফুসফুসের এনাটমি ও ফিজিওলজি

লাঙ বা ফুসফুস কি?

লাঙ (lung) বা ফুসফুস হলো একজোড়া শ্বসন অঙ্গ যা থোরাসিক ক্যাভিটিতে অবস্থিত। লাঙ দেখতে কোণাকৃতি। প্রতিটি লাঙ তার প্লুরা দ্বারা আবদ্ধ থাকে। দুটি লাঙ মিডিয়াস্টিনাম দ্বারা পৃথকিত। লাঙ গাঠনিকভাবে স্পঞ্জের মত। যুবকদের ক্ষেত্রে লাঙ ধূসর বা বাদামী বর্ণের। পূর্বপদ/ পরপদ পালমোন লাঙকে বোঝাতে ব্যবহৃত হয়।

ব্রংকিয়াল ট্রি

লাঙ এর অভ্যন্তরে বিদ্যমান ব্রংকাই, ব্রংকিয়াল টিউব ও অন্যান্য প্রান্তিয় অংশের বিশেষ সজ্জা কে ব্রংকিয়াল ট্রি (bronchial tree) নামে অভিহিত করা হয়। লাঙ এমন বহু ব্রংকিয়াল ট্রি দ্বারা গঠিত।

লাঙ জোন (স্থান)

ফুসফুসে দুইধরনের স্থান রয়েছে

  • কন্ডাক্টিং জোন – এই অংশে কোন আদান প্রদান ঘটেনা। এ অংশ শুধুমাত্র বাতাস পরিবহনের জন্য।
  • রেসপিরেটরি জোন- এখানে গ্যাসের (অক্সিজেন ও কার্বনডাই অক্সাইড) আদান প্রদান ঘটে।

লাঙ বা ফুসফুসের (শ্বাসতন্ত্রের) কাজ 

রেসপিরেশন বা শ্বসন: গ্যাসের আদান প্রদান।

শ্বসন ব্যতিত অন্যান্য

  • নিস্কাশন- ফুসফুস কিছু উদ্বায়ী পদার্থ দেহ থেকে নিস্কাষন করে।”
  • অম্ল ও ক্ষারের সমতা রক্ষা- কার্বনডাই অক্সাইড নিয়ন্ত্রনের মাধ্যমে এ কার্য সম্পাদিত হয়।
  • দেহের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রনে সাহায্য করা- জলীয় বাষ্প নিঃসরনের মাধ্যমে এ কার্য সম্পাদিত হয়।
  • রক্ত প্রবাহ নিয়ন্ত্রন করে।

 রেসপিরেশন বা শ্বাসক্রিয়া 

একটি শারিরবৃত্তিয় পদ্ধতি যার মাধ্যমে অক্সিডেশনের (জারন) জন্য বায়ু মন্ডল থেকে অক্সিজেন দেহের কোষে পৌছায়।

শ্বাসক্রিয়ার পর্যায় সমুহ 

দুটি পর্যায় রয়েছে

  • শ্বাস গ্রহণ- এর অর্থ ফুসফুসে বাতাস গ্রহণ করা। এই ক্রিয়া দুই সেকেন্ড স্থায়ী।
  • শ্বাস ত্যাগ- এর অর্থ ফুসফুস থেকে বাতাস বের করে দেয়া।এই ক্রিয়া তিন সেকেন্ড স্থায়ী।

শ্বাস প্রশ্বাসের হার 

বয়সের সাথে সাথে এই হার পরিবর্তিত হতে পারে।

  • জন্মের সময়- ১৪-৬০/মিনিট
  • প্রথম বছর ২৫-৩৫/মিনিট
  • পুর্ণ বয়স্ক পুরুষ- ১০-১৮/মিনিট
  • পুর্ণ বয়স্ক মহিলা- ১০-১৮/মিনিট

বিভিন্ন শারীরবৃত্তীয় অবস্থায় এবং রোগাক্রান্ত অবস্থায় শ্বাসপ্রশ্বাসের হার পরিবর্তীত হতে পারে।

শ্বাস প্রশ্বাসের প্রক্রিয়া 

রেসপিরেশন বা শ্বাসক্রিয়ার জন্য কিছু মাসল ক্রিয়া করে। এই মাসল বা । পেশীগুলোকে রেসপিরেটরি মাসল বলা হয়। রেসপিরেটরি মাসল সমুহ ।

সাধারন প্রক্রিয়া

  • ডায়াফ্রামের উর্ধ্বমুখী ও নিম্নমুখী গতিশীলতা যার ফলে বক্ষ গহবরের উলম্ব ব্যস বৃদ্ধিপায় বা কমে যায়। ফলে ফুসফুসের ভেতর বায়ু প্রবেশ করে ও বের হয়ে যায়।
  • রিব বা বক্ষপিঞ্জরের অস্থির উৰ্দ্ধ ও নিম্ন গতিশীতলা ফলে বক্ষগহবরের সম্মুখ-পশ্চাৎ ব্যস বৃদ্ধি পায়। ফলে ফুসফুসের ভেতর বায়ু প্রবেশ করে ও বের হয়ে যায়।

শ্বাস প্রশ্বাস নিয়ন্ত্রন 

ব্রেইনের রেসপিরেটরি সেন্টার দ্বারা শ্বাস প্রশ্বাস নিয়ন্ত্রিত হয়। হাঁচি, কাশি ঘুমের সময় রেসপিরেটরি সেন্টার সয়ংক্রিয়ভাবে ক্রিয়া করে। এছাড়াও রক্তে কার্বনডাই অক্সাইড বেশি হলে দেহে একটি বিশেষ রাসায়নিক পদার্থ তৈরি হয় যা ব্রেইন এর রেসপিরেটরি সেন্টারকে উত্তেজিত করে এবং শ্বাসক্রিয়া দ্রুত করে। গর্ভকালীন সময়ে হরমোনের প্রভাবে সময়ে শ্বাস প্রশ্বাস হার বেড়ে যায়।

ফুসফুসের আয়তন ধারনক্ষমতা 

পালমোনারি ভলিউম বা ফুসফুসের আয়তন সমুহ

  • প্রতিটি স্বাভাবিক শ্বাস-প্রশ্বাসের সাথে প্রায় ৫০০ মিলি বাতাস ফুসফুসে প্রবেশ করে ও বের হয়ে যায়। একে টাইডাল ভলিউম বলা হয়
  • একটি স্বাভাবিক শ্বাস গ্রহনের পরেও প্রায় ৩০০০ মিলি বাতাস ফুসফুসে গ্রহণ করা সম্ভব। একে ইন্সপিরেটরি রিজার্ভ ভলিউম বলা হয়।
  • একটি স্বাভাবিক শ্বাস ত্যাগের পরেও প্রায় ১১০০ মিলি বাতাস ফুসফুস থেকে বের করে (জোর পুর্বক) দেয়া সম্ভব। তাকে এক্সপিরেটরি রিসার্ভ ভলিউম বলে।
  • জোরালো শ্বাস ত্যাগের পরেও ফুসফুসে প্রায় ১২০০ মিলি বাতাস অবশিষ্ট থাকে। এর পরিমান । রেসিডুয়াল রিসার্ভ ভলিউম বলা হয়।
  • একজন ব্যক্তি বল পুর্বক প্রায় ৩৫০০ মিলি বাতাস গ্রহন করতে পারে । একে ইন্সপিরেটরি ক্যাপাসিটি বলা হয়।
  • স্বাভাবিক শ্বাসত্যাগের পর প্রায় ২৩০০ মিলি বাতাস ফুসফুসে থেকে যায় । একে ফাংকশনাল রেসিডুয়াল ক্যাপাসিটি বলে।
  • একজন ব্যক্তি ফুসফুস থেকে সর্বোচ্চ প্রায় ৪৬০০ মিলি বা ৪,৬ লিটার বের করে দিতে পারেন। একে ভাইটাল ক্যাপাসিটি বলা হয়। ভাইটাল ক্যাপাসিটি শ্বাস ক্রিয়ার দক্ষতাকে নির্দেশ করে। ভাইটাল ক্যাপাসিটি পরিমাপের মাধ্যমে ফুসফুসের অবস্থা সম্পর্কে ধারনা পাওয়া যায়। লাঙ এর বিভিন্ন রোগে এটি হ্রাস পায়।
  • লাঙ বা ফুসফুসে প্রায় ৫৮০০ মিলি বাতাস ধারন করা সম্ভব। একে টোটাল লাঙ ক্যাপাসিটি বলা হয়।
  • এক্সপিরেটরি ক্যাপাসিটি- সর্বোচ্চ যে পরিমান বাতাস একজন ব্যক্তি ফুসফুস থেকে বের করে দিতে পারে তাকে এক্সপিরেটরি ক্যাপাসিটি বলে।

সকল পালমোনারী ভলিউম ও ক্যাপাসিটি নারীদের ক্ষেত্রে ২০-২৫% কম।

লাঙ টিস্যুর মাঝে গ্যাসের বিনিময়

লাঙ ও টিস্যুর মাঝে গ্যাসের বিনিময় বলতে অক্সিজেন ও কার্বনডাইঅক্সাইডের বিনিময় বোঝায়। এই প্রক্রিয়াটি মূলত রেসপিরেটরি মেমব্রেন দ্বারা ঘটে থাকে।

রেসপিরেটরি মেমব্রেন বা শ্বসন পর্দা 

ফুসফুসে একটি মধ্যে দিয়ে ফুসফুসীয় রক্ত ও এলভিওলারের বাতাসের মধ্যে গ্যাসের আদান প্রদান ঘটে। একে রেসপিরেটরি মেমব্রেন বলে। সাধারন ভাষায় এটি একটি ছাকনির মত ক্রিয়া করে। এই মেমব্রেন এর একপাশে লাঙ টিস্যু ও অন্য পাশে রক্ত থাকে। লাঙ টিস্যুর অভ্যন্তরস্থ অক্সিজেন মেমব্রেন ভেদ করে রক্তে প্রবেশ করে এবং হিমোগ্লোবিন কর্তৃক গৃহিত হয় ( এবং হিমোগ্লোবিন কার্বনডাইঅক্সাইড মুক্ত করে) এবং সারা দেহে ছড়িয়ে যায়। রক্ত থেকে কার্বনডাইঅক্সাইড় মেমব্রেন ভেদ করে লাঙ টিস্যুতে প্রবেশ করে এবং শ্বাস ত্যাগের মাধ্যমে লাঙ থেকে বের হয়ে যায়।

সম্পর্কিত শব্দ পরিচিতি 

  • রেসপিরেটরি ইনসাফিসিয়েন্সি: শ্বাসতন্ত্রের অস্বাভাবিক কাজ করাকে বোঝায়।
  • ইপনিয়া – স্বাভাবিক শ্বাস প্রশ্বাস।
  • ট্রাকিপিয়া- স্বাভাবিকের চেয়ে দ্রুত শ্বাসক্রিয়া।
  • ব্রাডিপ্লিয়া- স্বাভাবিকের চেয়ে ধীর শ্বাসক্রিয়া।
  • এনোক্সিয়া- অক্সিজেনের অনুপস্থিতি।
  • হাইপারক্যাপনিয়া- রক্তে অতিরিক্ত কার্বনডাইঅক্সাইডের উপস্থিতি।
  • ডিসপেনিয়া (dyspnea)- কষ্টকর শ্বাসক্রিয়া এ
  • এপনিয়া- অস্থায়ী ভাবে শ্বাসক্রিয়া বন্ধ থাকা।
  • এসফিক্সিয়া (asphyxia)- শ্বাস পথের প্রতিবন্ধকতা ফলে যেখানে হাইপারক্যাপনিয়া ও হাইপোক্সিয়া একসাথে ঘটে।
  • হাইপোক্সিয়া (hypoxia); দেহের টিস্যুতে অক্সিজেনের স্বল্পতা সৃষ্টি হলে সে অবস্থাকে হাইপোক্সিয়া বলে। কারণ সায়ানোসিস (Cyanosis): দেহকলায় প্রচুর পরিমানে অক্সিজেনবিহীন হিমোগ্লেবিন জমে যাওয়ার ফলে কলার ধুসর নীল বর্ণ ধারন করাকে সায়ানোসিস বলে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *