গাছপালা

নিশিন্দা গাছ

নিশিন্দা

প্রচলিত নাম : নিসিন্দা

ইংরেজী নাম : Chaste Tree

বৈজ্ঞানিক নাম : htex negundo Linn.

পরিবার : Verbenaceae

পরিচিতি : বড় আকারের পত্র হরিৎ গুল্ম বা ছোট বৃক্ষ ৩-৫ মি. পর্যন্ত উঁচু হয়। উপশাখাসমূহ (Branchlet) গাঢ় সাদা ও চতুস্কোণী । পাতা ৩-৫টি খণ্ডে খণ্ডিত, পত্রবৃন্ত ২-৫ সে. মি. লম্বা, পত্রক ৩-৫টি, ৪-১২ x ১.৫-৪.০ সে. মি., বল্লমাকৃতির হয়। পত্রফলক সমান ও বর্শাকৃতি। ফুল নীলাভ-বেগুনি, পেনিকল ৩০ সে. মি. লম্বা হয়। ফল ছোট ডিম্বাকৃতির ও ড্রোপ।

বিস্তৃতি : বাংলাদেশের সর্বত্র।

ব্যবহার্য অংশ : পাতা, মূল ও ফল।

চাষাবাদ পদ্ধতি : পরিপক্ক ফল থেকে বীজ সংগ্রহের পর তা বীজতলায় রোপণ করতে হয়। কাটিং-এর মাধ্যমেও এর বংশ বিস্তার হয়ে থাকে। ২-৩ সপ্তাহের মধ্যে বীজের অঙ্কুরোদগম হয়। অঙ্কুরিত চারার বয়স ৪-৫ মাস হলে এটিকে রোপণ করতে হয়। এটি হেজ (Hedge) উদ্ভিদ হিসাবেও বহুল ব্যবহৃত হয়।

সাধারণ ব্যবহার : কাঠ ধূসর ও সাদা, শক্ত, নির্মাণকাজ ও জ্বালানী হিসেবে ব্যবহৃত হয়। ছাই থেকে রং তৈরী হয়। পাতা পোকা নিরোধক বিধায় শষ্যভাণ্ডারে ব্যবহৃত হয়। নিসিন্দা একটি ঔষধীয় গাছ।

ঔষধি ব্যবহার :

১) বাতের ব্যথায় এবং শরীরের যে কোন স্থান ফুলে গেলে এর পাতা গরম করে উক্ত স্থানে বেঁধে দিলে দ্রুত ফল পাওয়া যায়।

২) এই পাতার রস ক্ষতস্থানে লাগালে ঐ স্থানের জীবাণু মরে পুঁজ আকারে বের হয়ে ক্ষতস্থান দ্রুত সেরে উঠে। পাতার ক্বাথ কৃমিনাশক, কুণ্ঠ, ঋতু শুদ্ধিকারক, সর্দি জ্বর এবং মাথাব্যথায়ও কার্যকর ভূমিকা পালন করে।

৩) এর পাতা দুর্গন্ধযুক্ত হওয়ায় দীর্ঘদিন শস্য সংরক্ষণের ক্ষেত্রে পোকা-মাকড়ের আক্রমণ থেকে রক্ষার জন্য এটি ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়।

৪) নিশিন্দার পাতা পরজীবীনাশক এবং এর যক্ষ্মা ও ক্যান্সার বিরোধী গুণ রয়েছে।

৫) পাতার রস বা পাত বেটে সরিষার তেলে পাক করে সে তেল ২/১ ফোটা কানে দিলে কানের রোগ আরোগ্য হয়। কানের সব ধরনের ব্যথার ক্ষতেও এটি ব্যবহার করা যায়।

৬) পাতা চূর্ণ সিকি গ্রাম পরিমাণ খেলে (পূর্ণবয়স্কদের জন্য) গুড়া কৃমির উপদ্রব কমে যায় ।

৭) গেটে বাত রোগে নিশিন্দার পাচন নোক্ষম ঔষধ। সংগে যদি জ্বর থাকে, তবুও এতে সুফল পাওয়া যায়। ৫ গ্রাম পরিমাণ পাতা সেদ্ধ করে হেঁকে সে-পানি খেতে হয়। তবে উচ্চ রক্তচাপ থাকলে খাওয়া ঠিক নয়।

৮) মুখে বা জিহ্বায় ঘা কিছুতেই কমছে না, এক্ষেত্রে নিশিন্দা পাতার রস দিয়ে জ্বাল দেওয়া ঘি দিনে ও রাতে দুইবার লাগালে সুফল পাওয়া যায়।

৯) নিশিন্দা পাতার রস জ্বাল দেওয়া তেল ব্যবহারে টাক পড়া বন্ধ হয় এবং খুসকিও দূর হয়।

১০) বৃদ্ধ বয়সে রাতে প্রস্রাবের পরিমাণ বেশী হয়। অনেকের ২/৩ বার প্রস্রাব করতে হয় তখন ২/৩ রতি পরিমাণ নিশিন্দা পাতা চূর্ণ পানিসহ বিকালের দিকে একবার খেলে কয়েকদিনেই উপকার পাবেন। প্রয়োজনবোধে ২ বারও খাওয়া যায়।

১১) হঠাৎ কোন কারণে মস্তিকের স্মৃতিকেন্দ্রটির কাজ বন্ধ হয়ে গেলে বা স্মৃতিভ্রম হলে রোজ ২টি নিশিন্দা পাতা ঘিয়ে ভেজে খেলে স্মৃতিশক্তি ফিরে আসবে।

১২) পাতার জলীয় নির্যাস জ্বর নিবারক হিসাবে কাজ করে। বমি ও অতিরিক্ত তৃষ্ণা সমন্বিত জ্বরের চিকিৎসায় এর ফুল ব্যবহৃত হয়, মূলও জ্বর নিবারক হিসাবে কাজ করে।

১৩) অনিয়মিত ও স্বল্প ঋতুস্রাবে ফলের নির্যাস ব্যবহার করা হয়।

১৪) জামা-কাপড় ও বই পোকার উপদ্রব থেকে রক্ষার জন্য নিশিন্দার শুকনো পাতা ব্যবহার করা যায়। ধূপের সাথে এর শুকনো পাতা ব্যবহার করলে মশা দূর হয়।

১৫) যে কোন গলা ব্যথায় নিশিন্দার পাতা সেদ্ধ পানিতে গরম অবস্থায় ২/৪ গ্রেন ফিটকিরি মিশিয়ে ৫/৭ মিনিট মুখে রেখে কুলি করলে গলাব্যথা কমে যায়।

১৬) তিল তেলের সাথে দ্বিগুণ পরিমাণ নিশিন্দা পাতার রস জ্বাল দিয়ে লাগালে চুলকানি কমে যায়।

রাসায়নিক উপাদান : a) Alkaliods viz. nishindine etc, b) Essential oil, c) Sterols d) Terpenoid constituents.

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *