আর বি সি বা ইরাইথ্রোসাইট বা লোহিত রক্ত কণিকা
আরবিসি (RBC) বা রেড ব্লাড করপাসল বা ইরাইথ্রোসাইন বা লোহিত রক্ত কণিকা হলো রক্তে বিদ্যমান দ্বিঅবতল, নিউক্লিয়াস বিহিন চাকতি আকৃতির কোষ ।
স্বাভাবিক সংখ্যা :
পুর্ণাঙ্গ পুরুষ- ৪.৫-৫.৫ মিলিয়ন / ঘন মি.মি.
পুর্ণবয়স্ক মহিলা – ৪.০-৪.৫ মিলিয়ন | ঘন মি.মি. নবজাতক – ৬-৭ মিলিয়ন / ঘন মি.মি.
কাজ
১. লোহিত কনিকা হিমোগ্লোবিন বহন করে যা শ্বসনে মুখ্য ভুমিকা পালন করে।
২. ইহা রক্তের গ্রুপ নির্ণায়ক এন্টিজেন বহন করে।
৩. বাফার হিসেবে কাজ করে এবং অক্ষার সমতা রক্ষা করে।
ইরাইথ্রোজেনেসিস বা ইরাইথ্রোপয়সিস
যে প্রক্রিয়ায় স্বাভাবিক অবস্থায় লোহিত রক্ত কণিকা তৈরি হয়। এর প্রভাবক সমূহ
ক) সাধারন প্রভাবক
১. খাদ্যউপাদান- প্রথম শ্রেণীর আমিষ বা প্রোপ্রোটিন।
২. হাইপোক্সিয়া – রক্ত কোষ তৈরির জন্য অস্থিমজ্জা উত্তেজক । এই উত্তেজনা কিডনী কর্তৃর্ক তৈরি হয়।
৩. ইরাইথ্রোপয়টিন – একধরনের হরমোন যা হাইপোক্সিয়ায় আক্রান্ত কিডনী – নিঃসরন করে।
৪. অন্যান্য হরমোন –
পিটুইটারী হরমোন
থাইরয়েড হরমোন
খ) হিমোগ্লোবিন প্রভাবক এরা হিমোগ্লোবিন সংশ্লেষনের জন্য অত্যাবশ্যকীয় যেমন- লৌহ, কপার ও ম্যাগনেশিয়াম, কোবাল্ট, ক্যালসিয়াম, বাইল সল্ট ইত্যাদি ।
গ) পুর্ণতা প্রভাবক
এর অন্তর্ভূক্ত রয়েছে-ভিটামিন – বি ১২, ফলিক এসিড, ইন্ট্রিন্সিক ফ্যাক্টর অব ক্যাসূল।
হেমোলাইসিস (Haemolysis)
যে প্রক্রিয়ায় রক্ত কণিকা ভেঙ্গে যায়। নির্দিষ্ট জীবন কাল শেষ হলে কিংবা অস্বাভাবিক গঠনের কারনে কিংবা বাহ্যিক প্রভাবে আর বি সি ভেঙ্গে যেতে পারে। বিভিন্ন কারনে যেমন।
রাসায়নিক পদার্থ (ক্লোরোফরম , ইথার, এলকোহল ইত্যাদি) ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস , সাপের বিষ অস্বাভাবিক আরবিসি ইত্যাদি কারনে জীবনকাল শেষ হওয়ার পূর্বেই আরবিসি ভেঙ্গে যেতে পারে।
লোহিত কণিকার পরিনতি
১২০ দিন জীবনকাল সম্পন্ন হবার পর বা কিছু পারিপার্শিকতার সাপেক্ষে লোহিত কণিকা ভঙ্গুর হয়ে যায় এবং রেটিকুলো-এন্ডোথেলিয়াল সিস্টেম এর মাধ্যমে ইহা ভেঙ্গে যায়। এটি ভেঙে অবশেষে প্রোপ্রোটিন এবং বিলিরুবিন নামক পদার্থে রূপান্তরিত হয়। বিলিরুবিন — হেপাটোসাইটে প্রবেশ করে — পিত্ত তৈরি করে এবং অন্ত্রে প্রবেশ করে — ইউরোবিলিনোজেন -এ রূপান্তরিত হয় — রক্তদ্বারা শোষিত হয় — প্রস্রাব এর মাধ্যমে ইউরোবিলিন হিসেবে বাহির হয়। ইউরোবিলিনোজেন স্টারকোবিলিন হিসেবে মলের সাথে বাহির হয়।
ই এস আর (ESR) বা ইরাইথ্রোসাইট সেডিমেট্টেশন রেট
রক্তকে একটি উপযোগী এন্টিকোয়াগুলেন্টের সাথে মিশিয়ে খাড়া ভাবে রাখলে, লোহিত কণিকাগুলো তলানী পড়তে থাকে। প্রথম ঘন্টায় এই তলানী পড়ার হার কে ইরাইথ্রোসাইট সেডিমেন্টেশন রেট বা ই এস আর বলে।
ই এস আর এর গুরুত্ব
রোগের ভাবিফল দেখার জন্য
কিছু ক্রনিক ইনফ্লামেটরি রোগের অবস্থা দেখার জন্য, যেমন
১. পালমোনারী টিউবারকুলোসিস
২. পালমোনারী এমবোলিজম
৩, মায়োকার্ডিয়াল ইনফারকশন
৪. করোনারী থ্রম্বোসিস।
৫. রিউমেটিক আথ্রাইটিস।
৬. কার্সিনোমা।
৭. ইনফ্লামেশন
৮. ইনফেকশন ইত্যাদি।
হিমোগ্লোবিন (haemoglobin)
জটিল গঠন বিশিষ্ট লৌহ ও প্রোপ্রোটিন সমন্বয়ে গঠিত যৌগ যা অক্সিজেন ও কার্বনডাই অক্সাইড বহন করে। প্রতিটি লোহিত রক্ত কণিকা ২০০ থেকে ৩০০ অনু হিমোগ্লোবিন ধারন করে।
স্বাভাবিক মাত্রা
পূর্ণ বয়স্ক পুরুষ – ১৪-১৮ গ্রাম/ ১০০ মিলি রক্ত
পূর্ণ বয়স্ক মহিলা – ১২-১৬ গ্রাম/১০০ মিলি রক্ত
নবজাতক – ২৩ গ্রাম / ১০০ মিলি রক্ত
কাজ
১. ইহা অক্সিজেন ও কার্বনডাইঅক্সাইড পরিবহনে অত্যাবশ্যকীয়
২. ইহা একটি গুরুত্বপূর্ণ বাফার
৩. বিভিন্ন ধরনের পিত্ত রঞ্জক ইহা থেকে উৎপন্ন হয়
৪. ইহা লৌহ সঞ্চয় করে।
এনিমিয়া (Anaemia)
রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কমে যাওয়াকে এনিমিয়া বলে।
কারণ ও শ্রেণীবিভাগ
অস্বাভাবিক রক্ত কোষ উৎপাদন
০ অস্থিমজ্জায় ব্যঘাত – এপ্লাটি এনিমিয়া
০ ইরাইথ্রোপয়টিন এর অভাব – আয়রন ডেফেসিয়েন্সি এনিমিয়া মেগালোব্লাস্টিক এনিমিয়া
রক্তক্ষরন জনিত কারন।
রক্ত কোষ অধিক পরিমানে ধ্বংশ হওয়ার কারনে
থ্যালাসেমিয়া (Thalassemia)
ত্রুটিপূর্ণ হিমোগ্লোবিনের কারনে সৃষ্ট এক ধরনের হিমোলাইটিক এনিমিয়া যা বংশগত ভাবে প্রাপ্ত ।
জন্ডিস (Jaundice)
একটি অবস্থা যেখানে রক্তে অতিরিক্ত বিলিরুবিন সঞ্চিত হয় ফলে ত্বক ও মিউকাস। মেমব্রেন হলুদাভ বর্ণ ধারন করে।