নিরাপদ চিকিৎসা, মানসিক রোগ

মানসিক রোগের লক্ষণ ও সকল পদ্ধতির ডাক্তারদের বক্তব্য।

মানসিক রোগের লক্ষণ

মানসিক রোগের লক্ষণগুলোকে দুই শ্রেণীতে বিভক্ত করা যেতে পারে। যথা

মৃদু ধরনের মানসিক রোগের লক্ষণ: এ ক্ষেত্রে জীবনের স্বাভাবিক অনুভূতিগুলো (দুঃখবোধ, দুশ্চিন্তা ইত্যাদি) প্রকট আকার ধারণ করে। এ ক্ষেত্রে যে সকল লক্ষণগুলো দেখা যায় তা হলো: অহেতুক মানসিক অস্থিরতা, দুশ্চিন্তা, ভয়-ভীতি, মাথাব্যথা, মাথাঘোরা, খিচুনি, শ্বাসকষ্ট, বুক ধরফর করা, একই চিন্তা বা কাজ বারবার করা (শুচিবাই), মানসিক অবসাদ, বিষণা, অশান্তি, বিরক্তি, অসহায় বোধ, কাজে মন না বসা, স্মরণশক্তি  কমে যাওয়া, অদ্রিা, ক্ষুধামন্দা, ইত্যাদি৷

 

তীব্র ধরনের মানসিক রোগের লক্ষণ: এ ক্ষেত্রে আচার আচরণ কথাবার্তা স্পষ্টভাবে অস্বাভাবিক হয় ফলে আশেপাশের মানুষরা এটা বুঝতে পারে। এ ক্ষেত্রে যে সকল লক্ষণগুলো দেখা যায় তা হলো: দীর্ঘদিন যাবৎ ঠিকমত খাওয়া দাওয়া না করা, অহেতুক মারামারি, ভাঙচুর করা, যখন তখন বাড়ির বাইরে চলে যাওয়া, আবোল-তাবোল বলা, সন্দেহ প্রবণতা, একা একা হাসা ও কথা বলা, বেশি বেশি খরচ করা, অত্যধিক কৃপণতা, স্বাভাবিক বিচারবুদ্ধি লোপ পাওয়া, দীর্ঘদিন যাবৎ অন্দ্রিা, আত্মহত্যার করার ইচ্ছা ইত্যাদি।

 

কিছু গুরুত্বপূর্ণ লক্ষনের বিশ্লেষণ

কথাবার্তা বা চিন্তায় অস্বাভাবিকতা: মানসিক রোগীদের মধ্যে একটি কথাকে বার বার বলা বা ঘুরিয়ে ফিরিয়ে একই কথা বলার প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। কখনো কখনো কথার মধ্যে সামঞ্জস্য খুঁজে পাওয়া যায় না। অনেক সময় তারা দুর্বোধ্য কথা বলে। একা একা কথা বলে। মাঝে মাঝে এমন সব কথা বলে যা তার শিক্ষা, ব্যক্তিত্ব কিংবা পরিবেশের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। সে কিছু ভ্রান্ত বিশ্বাসের কথা বলে যা অবাস্তব ও অলীক। অলীক বিশ্বাস হলো এমন একটি বস্তুতে বিশ্বাস করা বাস্তবে যার কোন অস্তিত্বই নেই। মানসিকভাবে অসুস্থ ব্যক্তি তার নিজস্ব আবেগ ও অনুভূতি দ্বারা পরিচালিত হয় এবং কারো যুক্তি তারা গ্রহণ করে না। অলীক বিশ্বাসের ফলে সে আত্মহত্যা, খুন বা অন্যান্য অপরাধ সংঘটিত করতে পারে। অনেক মানসিক রোগী অলীকে বিশ্বাস করে কিন্তু অন্যকে তা বুঝতে দেয় না। রোগী নিজেকে বিপুল সম্পদের বা অর্থের মালিক ভাবতে পারে। তার উপর কোন বিশেষ দায়িত্ব অর্পিত হয়েছে বলেও কোন কোন রোগী বিশ্বাস করে।

 

প্রত্যক্ষকরণ বা উপলদ্ধি: ইন্দ্রিয়ের সাহায্যে আমরা সব কিছু প্রত্যক্ষ করে থাকি। এই প্রত্যক্ষকরণ বা উপলদ্ধিতে অস্বাভাবিকতা প্রকাশ পেলে সেটাকে মানসিক রোগ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। পলদ্ধিগত অস্বাভাবিকতা দুধরনের হতে পারে – ইলুশন ও হ্যালুসিনেশন। যেমন- রোগী বলে দেখ কে যেন গান গাইতেছে, বাস্তবে কেউ গান গাইছেনা তবে শুধু রোগী নিজে শুনছে। তেমনি রোগী বলছে দেখ দেখ আমার স্ত্রী আমার পাশে বসে আছে, অথচ তার স্ত্রী মৃত, এখানে রোগী অলীক দেখছে।

 

আবেগের অস্বাভাবিকতা: একজন সুস্থ ব্যক্তি এবং একজন অসুস্থ ব্যক্তি একই উপায়ে তাদের আবেগ অনুভব প্রকাশ করতে পারে না। বিভিন্ন কারণে আবেগের পরিবর্তন ঘটে – তবে সেই পরিবর্তনকে স্থায়ী বলা যায় না। যাদের পরিবর্তনটা স্থায়ী হয়ে পড়ে তারা মানসিকভাবে অবশ্যই বিপর্যস্ত। কিছু কিছু বিষয় আবেগের অস্বাভাবিকতার ক্ষেত্র তৈরি করে দেয়। যেমন: বিষন্নতা, দুশ্চিন্তা, বিরক্তি ।

 

বুদ্ধি লোপ: মানসিক রোগীদের বুদ্ধি লোপ পায়। একটি জিনিসকে বিচার-বুদ্ধি দিয়ে বিশ-ষণ করার ক্ষমতা তাদের কমে যায়।

 

স্মৃতিভ্রষ্ট: একটি লোক কোথা থেকে আসছে জিজ্ঞেস করলে ভিন্ন উত্তর পাওয়া যায়। সে ইচ্ছে করে মিথ্যে বলে না। আসলে সে নিজেই সব ভুলে যায়।

 

মুদ্রাদোষ: একই কথা বার বার বলা, একই অঙ্গ বার বার সঞ্চালন করাকে মুদ্রাদোষ বলে। মানসিক রোগীদের মধ্যে এই উপসর্গগুলো পরিলক্ষিত হয়।

 

মানসিক জটিলতা: এটা এমন এক অবচেতন ধারনা যা আবদমিত ইচ্ছা বা  আবেগজনিত অভিজ্ঞতার সাথে সম্পৃক্ত এবং আচরণে যার বহিঃপ্রকাশ ঘটে। যেমন: নিজেকে বড় মনে করা, নিজেকে ক্ষুদ্র মনে করা ইত্যাদি ।

 

সন্দেহপ্রবণতা: মানসিক রোগীদের মধ্যে মারাত্মক সন্দেহপ্রবণতা দেখা যায়। বন্ধুদের বা আশেপাশের মানুষদের সে শত্রু বলে মনে করে। তার বিরুদ্ধে সবাই চক্রান্তে লিপ্ত এমনটি সে মনে করে।

 

অহেতুক ভয়: মানসিক রোগীরা অহেতুক ভয়ের শিকার হতে পারে। অনেকে ছোট ও নিরীহ প্রাণী দেখে ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে। অন্ধকার বা নির্জনতায় আতংকগ্রস্ত হয়ে পড়ে। অনেকে অন্যের সামনে কথা বলতে পারে না।

 

অহেতুক রোগভীতি: রোগী মনে করে সে কোন দুরারোগ্য ব্যাধিতে ভুগছে। শুচিবাই: মানসিক রোগীদের মধ্যে শুচিবায়ুগ্রস্ততা পরিলক্ষিত হয়। যেমন কেউ বার বার হাত-মুখ ধুচ্ছে তো ধুচ্ছেই – মনে হয় তারপরও ঠিকমতো পরিষ্কার হচ্ছে না।’

 

  • মানসিক রোগের উদাহরন।
  • বিষন্নতা
  • সিজোফ্রেনিয়া
  • মগী রোগ
  • হিসটেরিয়া।
  • মাদকাসক্তি
  • বাইপোলার ডিসঅর্ডার
  • প্যানিক ডিসঅর্ডার
  • সামাজিক উদ্বেগ
  • অবসেসিভ কম্পালসিভ ডিসঅর্ডার
  • আত্মঘাতী মনোভাব

 

মানসিক রোগ বলতেই পাগল বোঝায় না। প্রকৃত পক্ষ্যে পাগল বলতে আমরা যাদের বুঝি তারা সাধারনত সিজোফ্রেনিয়ায় আক্রান্ত মানসিক রোগী। সিজোফ্রেনিয়া ছাড়াও অনেক মানসিক সমস্যা রয়েছে এমনকি বিবাহিত পুরুষদের প্রিমেচিউর ইজাকুলেশন ও একটি মানসিক সমস্যা হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। তাই কোন মানসিক সমস্যাকে ছোট করে দেখা যাবে না। কারন ছোট মানসিক সমস্যা বড় মানসিক রোগের সৃষ্টি করতে পারে। মানসিক সমস্যা দেহের অন্যান্য অংশের রোগের মতই।

 

এতে লজ্জাবোধ করার কিছুই নেই। তাই কোন প্রকার মানসিক অস্বাভাবিকতা দেখা দিলে একজন মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে।

 

যারা আত্নহত্যা করার প্রচেষ্টা করে তারা মানসিক রোগী। এ ধরনের রোগীদের কখনো ধিক্কার দেয়া যাবে না। এটি আবেগ নয় মানসিক রোগ। মানুষের জীবন সবচেয়ে দামী বিশেষ করে নিচের জীবন। কতটুকু মানসিক ভারসাম্য হারালে দামী। বস্তু মূল্যহীন হয়ে পড়ে তা উপলব্ধি করতে পারলেই এ ধরনের রোগীর সমস্যা অনুধাবন করা যাবে। এ ধরনের রোগীকে দ্রুত একজন মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞের নিকট প্রেরণ করতে হবে।

 

[ বিঃ দ্রঃ প্রায়মারী হেলথ কেয়ার পর্যায়ের চিকিৎসকদের পক্ষে মানসিক রোগ নির্ণয় করা খুবই দূরূহ বিধায় এ অধ্যায়ে কোন রোগের চিকিৎসা আলোচনা না করে রোগ পরিচিতি আলোচনা করা হলো।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *