গাছপালা

বৈঁচি গাছ (পানিয়াল, পানিয়ামালা)

প্রচলিত নাম : পানিয়াল, পানিয়ামালা

ইংরেজী নাম : Many spiked

বৈজ্ঞানিক নাম : Flacourtiajangomas Lour

পরিবার : Flacourtiaceae

পরিচিতি : ছোট আকারের চিরসবুজ বৃক্ষ। উচ্চতায় ৫-১০ মিটার হয়ে থাকে। বৈঁচি’র সাথে বাঙ্গালীর একটা আবেগময় প্রীতির সম্পর্ক আছে। শরৎ সাহিত্যে বহু জায়গায় বৈচির উল্লেখ পাওয়া যায়। খুব গুরুত্বপূর্ণ ফল না হলেও এটি বাঙ্গালীদের মনে নিজেই ঠাই করে নিয়েছে। ফলগুরি বেশী বড় হয় না। গাঢ় লাল থেকে ফিকে সবুজ নানান রঙের ফল দেখা যায় ।

বিস্তৃতি : গ্রীষ্মমণ্ডলীয় জলহাওয়াযুক্ত সমস্ত দেশেই এগুলির চাষ করা হয়। এশিয়া মহাদেশের উত্তর, পশ্চিম ও পূর্বাংশ বাদ দিয়ে সব দেশেই অর্থাৎ চীন, লাওস, বার্মা, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, ভারত, শ্রীলংকা, বাংলাদেশ, পূর্ব ভারতীয় দ্বীপপুঞ্জ ও অন্যান্য দেশে; আফ্রিকা মাহাদেশের প্রায় সর্বত্রই, দক্ষিণ আমেরিকার উত্তরাঞ্চলে নানা জাতের বৈঁচি হতে দেখা যায়। বাংলাদেশের সর্বত্রই নানা জাতের পানিয়ালা বা বৈঁচি জন্মাতে দেখা যায়। তবে গুরুত্বপূর্ণ ফল না হওয়ায় বাগিচা তেমন দেখা যায় না।

আবহাওয়া ও মাটি : বৈঁচি’র সব গোত্র-ভায়েরাই গ্রীষ্মমণ্ডলীয় গাছ। কাজেই প্রায় সবগুলিই উষ্ণ, আর্দ্র ও প্রচুর বৃষ্টিপাতযুক্ত স্থানে ভাল হয়। পানিয়ালার বর্ষাকালে ফুল আসে ও অক্টোবর থেকে জানুয়ারী মাসে ফল পেকে যায়। কিন্তু বৈঁচি’র ডিসেম্বর-মার্চ মাসে ফুল আসে ও মার্চ থেকে জুলাই মাসে ফল পাকে। যে কোন মাটিতেই এ গাছ হতে পারে তবে ফেলা জমিতেই বেশী দেখা যায় । জল নিকাশীযুক্ত বেলে দোআঁশ মাটিতে গাছ লাগালে ফলন বেশী হয়।

চারা তৈরী রোপণ : বীজ ও অঙ্গজ বিভাজন দু’ভাবেই চারা তৈরী করা যায়। বীজের অঙ্কুরোদগম হতে বেশী সময় লাগে। তাছাড়া বীজের চারার বংশগতি ঠিক থাকে না এবং ফুল ও ফল আসতে বেশী সময় নেয়। বৈঁচি বা পানিয়ালা মূলাধারের উপর চোখ বা জোড় কলম করে তাড়াতাড়ি ফলন পাওয়া যায়। গুটি কলমে এবং দাবা কলমও ভাল হয়। বৈঁচি বা পানিয়ালা গাছ ৪-৫ মি. দূরত্বে বর্ষার সময় তৈরী জমিতে লাগান হয়।

সার সেচ প্রয়োগ : বৈঁচি বা পানিয়ালা গাছে সার ও সেচ প্রয়োগ করার বীতি নেই ও সে সম্বন্ধে কিছু জানা যায় না। চারা বসাবার পর, বৃষ্টি না হলে, কিছুদিন নিয়মিত সেচ দিতে হবে ।

ফল সংগ্রহ ও ফলন : বীজের গাছ ৪-৫ বছরে ফলন দিতে আরম্ভ করে, তবে ঠিকমত ফলন পেতে ৬-৭ বছর লেগে যায়। কলমের গাছ লাগানোর পরের বছরই ফলন দিতে পারে। প্রতিটি গাছ থেকে বছরে ২০-৩০ কেজি ফল পাওয়া যায়। ফল পাকা অবস্থায় গাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়। তবে বেশীরভাগই বেশ মিষ্টি,রসাল, সুগন্ধযুক্ত, সুস্বাদু ও পুষ্টিকর। ফলে যথেষ্ট কষ থাকায় ধারক শক্তিযুক্ত। তবে অনেকের মতে, পাকা ফল হাত দিয়ে ঘষে দিলে কষাভাব কেটে যায়। ফলে অনেকগুলি বীজ থাকে।

সাধারণ ব্যবহার : বীজের মধ্যে নির্দিষ্ট তেল থাকে। ফলগুলিতে পেকিটিন থাকায়, এর থেকে ভাল জ্যাম, জেলী, সিরাপ, মোরব্বা ইত্যাদি করা যায়। কচিপাতা শাক হিসাবে খাওয়া হয়। এগুলি ধারকশক্তিসম্পন্ন ও পাকস্থলীর মহৌষধ। পাতা ও ছাল দাঁতের রক্ত বন্ধ করার জন্য ওষুধ হিসাবে ব্যবহৃত হয়। ফলে পিত্ত শুদ্ধ হয়।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *