গোলপাতা গাছ
প্রচলিত নাম : গুলপাতা
ইংরেজী নাম : Golpata
বৈজ্ঞানিক নাম: Nypa fruticans Wurmb.
পরিবার : Palmae
পরিচিতি : গোলপাতা পাম জাতীয় গাছ। গাছের কাণ্ড নাই বললেই চলে। পাতা নারিকেল পাতার মতো খুবই পুরু। কাণ্ড মাটির নীচে থেকে শাখা বিস্তার ঘটায় বিধায় দেখা যায় না। গাছ সাধারণত ৫-৬ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়। একটি ফলে ১টি বীজ হয়। ফল পাকলে বাদামী বর্ণের হয় এবং ১২-১৪ সে. মি. পর্যন্ত লম্বা হয়। বীজ কাদিতে সাজানো থাকে এবং গড়ে ৫০-১২০টি বীজ হয়। নিয়মিত জোয়ারে প্লাবিত হয় এমন নদী বা খালের তীরবর্তী জায়গায় জন্মে। সুন্দরবনের কম লবনাক্ত বা মধ্যম লবনাক্ত অঞ্চলে সবচেয়ে ভাল জন্মে। পাতার কক্ষ থেকে পুস্পমঞ্জুরী বের হয়, গোল পাতার ফুল সারাবছর ব্যাপীফোটে তবে আগস্ট-সেপ্টেম্বরে বেশী হয়। বাদামী বর্ণের ঘন। সন্নিবিষ্ট ফল গুচ্ছাকারে থাকে, যার ব্যাস ৩০ সেন্টিমিটার। ফল পাকতে ৫-৬ মাস সময় লাগে। গোলপাতা গরীব লোকের ঘরে ছাউনীতে ব্যাপক ব্যবহৃত হয়। বর্তমানে উহার মূল্য যথেষ্ট বৃদ্ধি পেয়েছে। সুন্দরবন, সুন্দরবনের পার্শ্ববর্তী ও উপকুলীয় এলাকায় মোটামুটি লবণাক্ত অঞ্চল যেখানে জোয়ার-ভাটার পানি দ্বারা প্লাবিত হয় সেখানেই গোলপাতা ভাল জন্মে। বর্তমানে স্থানীয় জনসাধারণ গোলপাতা চাষে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। তাই উহাকে সামাজিক বনায়নে একটি উৎপাদন কৌশল হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। নদী বা খালের পাড়ে গোলপাতা ভাল জন্মে। গোলপাতা ৫-৬ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে। সুন্দরবনে প্রাকৃতিকভাবে গোলপাতার বংশ বিস্তার হয়ে থাকে। কিন্তু সাম্প্রতিককালে ভিতর নদী ও খালের পাড়ে খালি জায়গায় ও নতুন চরে গোলপাতার বাগান সৃজন করা আশু প্রয়োজন। উপকূলীয় বনায়ন এলাকায় ইতিমধ্যে গোলপাতার চাষ শুরু হয়েছে এবং উহা খুবই আশাব্যঞ্জক।
বিস্তৃতি : প্রাকৃতিকভাবে সুন্দরবনে পাওয়া যায়। এছাড়া উপকূলীয় বনবাগানেও গোলপাতা লাগানো হচ্ছে।
বীজ সংগ্রহ : ফেব্রুয়ারী-এপ্রিল।
বীজের ওজন : কেজিতে ১০-১২টি। বীজ সংগ্রহ : গোলপাতা গাছে কম-বেশী সারাবছর ফুল ফুটে। কিন্তু ফেব্রুয়ারী-এপ্রিল মাসে অধিকাংশ গোলপাতা ফল পরিপক্ক হয় । একটি ফলে একটি বীজ থাকে। বীজসমূহ কাদিতে সাজানো থাকে। একটি কাদিতে প্রায় ৫০-১২০টি বীজফল থাকে। বীজফলের আকৃতি অনেকটা গোখরা সাপের ফনার মতো এবং ১২-১৪ সে. মি. পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে। বীজের রং যখন হালকা বাদামী হতে গাঢ় বাদামী বর্ণের হয় তখন পরিপক্ক হয়েছে বুঝায়। বীজসহ কাদি গাছ থেকে ছুরি বা কাচি দ্বারা কেটে সংগ্রহ করা হয় । জোয়ার-ভাটার পানি চলাচল করে এমন জায়গায় ঘেরা দিয়ে পরিপক্ক ফল কাঁদি হতে ছাড়ায়ে ৮-১০ দিন রাখার পর অংকুরোদগম হয় এবং তখনই বপন করতে হবে। বীজ বেশীদিন সংরক্ষণ করা যায় না। প্রতি কেজিতে ১০-১২টি বীজ হয়।
চারা উত্তোলন : গোলপাতার চারা ২ পদ্ধতিতে উত্তোলন করা যায়। যথা :
(ক) বেড পদ্ধতিতে
(খ) ডুবা পদ্ধতি
(ক) বেড পদ্ধতি : গোলপাতা নার্সারী বেডে উত্তোলন করাই উত্তম পদ্ধতি। এর কোন পলিব্যাগ নার্সারী হয় না। নার্সারী বেড কেওড়া বেডের মতো তৈরী করা হয়। বীজ ৫ সে. মি. x ৫ সে. মি. দূরত্বে ডিবলিং পদ্ধতিতে সমতলভাবে বা বোঁটা উপরের দিকে রেখে সোজাভাবে ২/৩ ভাগ মাটিতে পুঁতে বপন করা হয়। একটি ১২ x ১.২ মি. বেডে ২৮০০-৩০০০টি বীজ বপন করা যায় এবং ২-৩ মাসের মধ্যে বীজ অঙ্কুরিত হবে। গোলপাতার অঙ্কুরোদগম হার ৯০% পর্যন্ত হয়ে থাকে। একটি বেড হতে রোপণযোগ্য প্রায় ১৫০০-২০০০ চারা পাওয়া যায়।
(খ) ডুবা পদ্ধতিতে: কোন কোন ক্ষেত্রে বেডে বীজ বপন না করে বীজসমূহ নীচু জায়গায় বা ডুবায় রাখা হয়। তবে জোয়ারের পানিতে যাতে প্রতিদিন বীজসমূহ ভিজে এ ধরনের নালার ব্যবস্থা থাকতে হবে এবং লক্ষ্য রাখতে হবে বীজ যাতে পানিতে ভেসে না যায় এবং এজন্য নালার মুখে জাল বা বেড়া দিতে হবে। বীজ থেকে ভ্রণ অঙ্কুরিত হওয়ার ২ মাসের মধ্যে চারা সরাসরি রোপণ করা হয় ।
বাগান উত্তোলন : গোলপাতা সুন্দরবনে প্রাকৃতিকভাবে জন্মে । কিন্তু উপকুলীয় বনায়নে খালের পাড়ে, গভীর পলিযুক্ত নতুন চরের পার্শ্বে রোপণ করা হয়। পুরাতন বাগানে Under planting হিসেবে গোলপাতার বাগান সৃজন করা যায়। নার্সারী বেড়ে যখন চারা ১০-১২ মাস বয়সের হয় তখন মার্চ-এপ্রিল মাসে গোলপাতার চারা বেডে খুন্তি দ্বারা মাটির বলসহ উঠিয়ে লাগানো হয়। নতুন বাগানে চারা ১০ X ১৪ দূরত্বে প্রতি একরে ৪৩৫টি চারা লাগানো হয়। তবে এলাকাবিশেষে তারতম্য হয়। এক্ষেত্রে জীবিত হার ৯০% পর্যন্ত হয়। তবে এক্ষেত্রে অনেক সময় পলি পড়ে বীজ মাটির গভীরে তলিয়ে যেতে পারে বিধায় জীবিত হার ১০-২০% হয়।। সুন্দরবন এলাকায় এপ্রিল-মে মাসে প্রচুর ভাসমান অঙ্কুরিত বীজ পাওয়া যায়। উক্ত বীজ সংগ্রহ করে বাগানে সরাসরি রোপণ করেও বাগান সৃষ্টি করা যায়।
পাতা সংগ্রহ : ৪-৫ বছর বয়সের গাছ থেকে পাতা সংগ্রহ করা যায়। পাতা বছরে একবার নভেম্বর-ফেব্রুয়ারী মাসে সংগ্রহ করা হয়। পাতা সংগ্রহের নিয়ম হল অপ্রস্ফুটিত শীর্ষপাতা (Unopened frond) ও একটি ঠেস পাতা রেখে অন্যান্য পাতা কাটা যাবে। মৃত ও শুকনো পাতা যদি থাকে তাও কেটে পরিস্কার করে দিতে হবে। ছোট গাছের কোন পাতা কাটা উচিত নয়।
সাধারণ ব্যবহার : পাতা ঘরের ছাউনীতে ও বেড়াতে ব্যপকভাবে ব্যবহৃত হয়। গাছ থেকে গোলের রস আহরিত হয় যাহা উপাদেয়, গুড় ও এলকোহল তৈরীতে ব্যবহৃত হয়।